CAG Report on WB Utilization Certificate: ১.৯৪ লক্ষ কোটির ‘হিসেব’ নেই, CAG রিপোর্টে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি

কেন্দ্রীয় সরকার থেকে অনুদান বাবদ আসা টাকার মধ্যে থেকে ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা খরচের কোনও শংসাপত্র (উটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) দিতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ। সিএজি রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হল। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই পরিমাণ কেন্দ্রীয় অনুদান খরচের ‘প্রমাণ’ নেই সরকারের কাছে। এই আবহে বিরোধী বিজেপি অভিযোগ করছে, এই টাকা নয়ছয় করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলা মোট ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা খরচের শংসাপত্র জমা দেয়নি। এর মধ্যে বাম জমানার হিসেব মেলেনি ৩৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার। বাকি যে ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শংসাপত্র মেলেনি, তা তৃণমূল সরকারের সময়কার। এদিকে রিপোর্টে এও দাবি করা হয়েছে, এই ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটির মধ্যে থেকে ৪৯.৫ শতাংশ অর্থের শংসাপত্র বকেয়া ২০১৮-২১, এই তিন বছরের। (আরও পড়ুন: ‘শ্রী’-‘সাথীদের’ চক্করে হতশ্রী দশা রাজকোষের, বাজেটের বাইরে গিয়ে ঋণ বাংলার: CAG)

এদিকে সিএজি রিপোর্টের এই সব ‘গরমিলের’ জেরে বাংলার বকেয়া টাকা আটকে আছে। আর এই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ধরনায় বসেছেন। ১০০ দিনের কাজের টাকা আদায় করতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গতবছর ময়দানে নেমেছিলেন। তবে রাস্তায় নেমে রাজনীতি করলেও খাতায় অঙ্ক মেলাতে পারছে না এই তৃণমূল সরকার। তবে তা সত্ত্বেও তৃণমূল অভিযোগ করল, কেন্দ্রের মোদী সরকার পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এই আবহে দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বা তার পরে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটের কথা ওঠেনি। উলটে বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া বাকি রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ডেরেক বলেন, ‘এর আগে কোনও দিন ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট চাওয়া হয়নি। মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, উত্তরাখণ্ডের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যের হাজার হাজার কোটি টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে কথা হয়েছিল, কেন্দ্র ও রাজ্যের আধিকারিকদের বৈঠক হবে। সেই মতো বৈঠকটা হয়েছে। সেখানেও ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট নিয়ে কোনও কথা হয়নি। এখন যেটা হচ্ছে, তা বিজেপির যুক্তরাষ্ট্রীয় আর্থিক সন্ত্রাস। কারণ তারা বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারছে না। কেন্দ্রীয় সরকারি ব্যাঙ্কগুলো ১২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করেছে। তাহলে তারা কেন পশ্চিমবঙ্গের ৬,৯০০ কোটি টাকা মকুব করতে পারছে না।’

উল্লেখ্য, ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া অর্থ রাজ্যের পকেটে ঢুকছে না। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই এই অভিযোগে সরব রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই আবহে দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয় মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি। রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লিতে রাজ্যের একাধিক দফতরের সচিবকে তলব করা হয়েছিল বৈঠকের জন্য। এই আবহে সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গিয়ে পৌঁছন দিল্লিতে। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব শৈলেশ কুমার সিং। সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সচিব। জানা গিয়েছে, দুর্নীতি এবং অনিয়মের যে সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১০০ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে, সেই নিয়ে রাজ্যের পদক্ষেপের বিস্তারিত রিপোর্ট তুলে ধরা হয় সেই বৈঠকে।

এর আগে গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে গিয়ে বকেয়া প্রসঙ্গে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করে এসেছিলেন মমতা। এই আবহে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফ থেকে বকেয়া ইস্যুতে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই মতোই গত জানুয়ারিতে দিল্লিতে হয় এই সচিব স্তরের বৈঠক। বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বাবদ সবচেয়ে বেশি টাকা আটকে আছে রাজ্যের। এই প্রকল্পের প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বাংলার পাওনা বলে জানা গিয়েছে। এদিকে একশো দিনের কাজে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনাতে প্রকল্পেরও বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রয়েছে।