অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা, বেড়েছে বিজিপির সংখ্যাও

রাখাইন রাজ্যে চলমান ত্রিমুখী সংঘর্ষের মধ্যে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও আটজন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এনিয়ে গত দুইদিনে ১০৩ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিল।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়া সীমান্ত সংলগ্ন নয়াপাড়ার শূন্যরেখা পেরিয়ে আট বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে তাঁদের নিরস্ত্র করে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)।

৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি বলেন, সোমবার সন্ধ্যার দিকেও কয়েকজন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৯৫ জন বিজিপি সদস্য আশ্রয় নেন।

অন্যদিকে সংঘর্ষের পর থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন দেশটির চাকমা সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০০ জন। একই সঙ্গে হাজারও রোহিঙ্গা পরিবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে আছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরে অনেক রোহিঙ্গা ও চাকমা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা করছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। তবে আমরা এমনিতেই পুরাতন রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকটে রয়েছি। তাই নতুন করে অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার ভোর থেকে তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজারে ও বান্দরবান অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে এখনো পর্যন্ত কেউ অনুপ্রবেশ করতে পারেনি।

স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ত্রিমুখী সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা। এদের স‍াথে এবার যোগ হয়েছে মিয়ানমারের চাকমা সম্প্রাদায়ের লোকজন। তারা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘বিভিন্ন মারফতে জানতে পেরেছি বেতবুনিয়ার সীমান্তের কাছে প্রায় ৪০০ জন চাকমা সীমান্ত অতিক্রম করে ঘুমধুম প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সেখানে বিজিবি টহল জোরদার করেছে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্ত ঘেঁষে গেল কয়েক দিন ধরে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা পরিবার। তবে বিজিবির শক্ত অবস্থানের কারণে তারা বারবার অনুপ্রবেশে বাধাগ্রস্ত হয়ে পিছু হটছে।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ঢেকুবুনিয়া সীমান্তসহ বিভিন্ন সীমান্তে মাঝে মধ্যে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ওইসব এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করেছে।

এদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিন সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের এক রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলে তাদের আটক করে বিজিবি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সীমান্তের সার্বিক বিষয়ে বিজিবির কর্তাব্যক্তিরা কেউ মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি যারা সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থান নিয়েছেন সেখানেই তাদের খাদ্য, বাসস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।’

এর আগে আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ।



সালাউদ্দিন/সাএ