‌সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে মাধ্যমিক দিল দুই নাবালিকা পরীক্ষার্থী, কোথায় ঘটল?

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হলেও সে নাবালিকা মা। সদ্যোজাত সন্তান তাই তার সঙ্গেই আছে। একদিকে সেই সদ্যোজাতের উপর নজর রাখছে অপরদিকে পরীক্ষার উত্তরপত্রে লিখে ফেলছে প্রশ্নের উত্তর। কিশোরী হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল। এমন পরিস্থিতির খবর ইতিমধ্যেই চাউর হয়ে গিয়েছে। অনেকেই তাই উঁকিঝুকি মারতে শুরু করেন। নাবালিকা মায়ের পরীক্ষা বলে কথা। কৌতূহল তো হবেই। আর সেই কৌতূহল মেটাতে এমন অনেককে হাসপাতালের চারপাশে দেখা গিয়েছে।

এদিকে ওই সদ্যোজাত সন্তানের মায়ের গ্রামের বাড়ি কোচবিহারে। অভাব–অনটনের সংসারে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তবে তার সঙ্গেই চলেছে পড়াশোনা। শ্রমিক স্বামী। কখনও বাড়িতে ফেরেন, আবার কখনও ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন কাজের জন্য। আর সংসার সামলে পড়াশোনা করে চলে ওই কিশোরী। তার মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই পরীক্ষাকেন্দ্রে ওঠে প্রসব যন্ত্রণা। তখন কোচবিহারের হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই সন্তানের জন্ম দেয় সে। তার পর আবার খাতা–কলম নিয়ে চলে পরীক্ষা। রবিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় মা ও সন্তানকে। বাকি পরীক্ষা স্কুলে বসেই দিতে চায় মেয়েটি। নাবালিকা মায়ের মন্তব্য, ‘সন্তানের মতোই পড়াশোনার উপরেও ভালবাসা আছে। সন্তানকে পাশে নিয়েই দু’টি পরীক্ষা দিয়েছি। বাকিগুলিও দেব।’‌

অন্যদিকে আরও একটি এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। মুর্শিদাবাদের গ্রামেও রাতে সন্তানের জন্ম দিয়ে সকালে হাসপাতালে বসে ইংরেজি পরীক্ষা দিয়েছে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। নাবালিকার বিয়ে হয় দু’‌বছর আগে। শুক্রবার বাংলা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। তখন রাতে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্তানের জন্ম দেয় নাবালিকা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু পরীক্ষা তো দিতেই হবে। তাই দৃঢ় মনোভাব নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে কোচবিহার আর মুর্শিদাবাদের দুই নাবালিকা মা। রাজ্য সরকার যখন নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে তখন এমন ঘটনা ঘটছে কী করে ঘটছে? উঠছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন:‌ মলদ্বারে লুকিয়ে আসামী জেলে এনেছিল মোবাইল, অস্ত্রোপচার করে বের করল এসএসকেএম

এই ঘটনা চাউর হতেই নানা মানুষজন খোঁজ নিতে শুরু করেন। কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে পুলিশ–প্রশাসন।’ কোচবিহার চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার স্নেহাশিস চৌধুরীর কথায়, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রচার চলছে। দ্রুত ছবি পাল্টাবে।’ আর মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক দাবি করেন, ‘মুর্শিদাবাদে বাল্যবিবাহের ঘটনা আছে। তা আটকাতে কাজ করছে প্রশাসন।’