ইউক্রেনীয় শহর আভদিভকা দখলের দ্বারপ্রান্তে রাশিয়া

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর আভদিভকার দিকে এগোচ্ছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। যা কিয়েভের সেনাদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলছে। রাশিয়া যদি আভদিভকা দখলে সক্ষম হয়, তাহলে এটি হবে গত আট মাসের মধ্যে তাদের দখলকৃত প্রথম শহর। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এ খবর জানিয়েছে।

গত বছর অক্টোবরে আভদিভকা দখলের জন্য আক্রমণ শুরু করে রুশ সেনারা। এই শহরকে রুশ দখলকৃত ডনেস্ক শহরের প্রবেশপথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া পুরো ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে মস্কোর জন্য শহরটি গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলছে, শহরটি দখলে রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম হারিয়েছে রুশ সেনারা। এত দিন ইউক্রেনীয় টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছিল যে, কিয়েভের সেনারা হয়ত শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এখন সেই আশা ম্লান হয়ে গেছে।

সম্প্রতি ইউক্রেন ফাইটস নামের টেলিগ্রাম চ্যানেল বলেছে, শহরটির পরিস্থিতি ভয়াবহ। রুশ যুদ্ধবিমান শহরে প্রবেশ করেছে উত্তরপূর্ব দিক থেকে এবং রুশ সেনারা ইউক্রেনীয় সেনাদের পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন ভবনে অবস্থান নিয়েছে।  এর অর্থ হলো ইউক্রেনীয় সেনাদের মূল কামান ইউনিট থেকে মাত্র কয়েক শ’ মিটার দূরে অবস্থান করছে তারা। আভদিভকার পরিণতি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

বুটুসভ প্লাস নামের আরেকটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে উল্লেখ করা হয়েছে, আভদিভকা উত্তরের উপকণ্ঠে রাস্তায় লড়াই চলছে। শহরের প্রবেশের এক মাইলের কম দূরত্বে অবস্থান নিয়েছে রুশ সেনারা। আভদিভকায় নতুন সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের। পরিস্থিতি গুরুতর।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ইয়ারোস্লাভ ট্রফিমভ টুইটারে লিখেছেন, গত বছর মে মাসে বাখমুতের পর প্রথম ইউক্রেনীয় শহর হিসেবে পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে আভদিভকা। মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের সহযোগিতা আটকে যাওয়ার কারণে গোলাবারুদের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। 

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক-এর এলএসই আইডিয়াস থিংক ট্যাংক-এর সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট লিওন হার্টওয়েল বলেছেন, রাশিয়া যদি আভদিভকা দখল করে ফেলে তাহলে ইউক্রেনে আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতা কমানোর পক্ষে ওকালিত করা পশ্চিমাদের সন্দেহ দৃঢ় হবে। এর ফলে বাখমুত ঘিরে রাশিয়ার অবস্থান শক্তিশালী হবে। ডনেস্ক-ক্রামাটোর্স্ক মহাসড়ক তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে ডনেস্কে মস্কোর সরঞ্জামগত সুবিধা বাড়বে।

তিনি আরও বলেছেন, আভদিভকা হারালে ডনবাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরুর জন্য ইউক্রেনের সক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। শহরটির দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষার কারণে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে।  শহরটি দখলে মরিয়া চেষ্টা করছে রাশিয়া। হাজার হাজার সেনা ও সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে তারা। সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থাকায় শহরটি দখল করে জয়ের বার্তা ছড়াতে চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রকল্পের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কফম্যান বলেছিলেন, রাশিয়া খুব ধীর গতিতে অগ্রগতি অর্জন করছে। শেষ পর্যন্ত হয়ত তারা শহরটি দখল করে নেবে।