জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধ্বংস হতে পারে হিন্দুকুশ পাহাড়ের জীবজগৎ

চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন প্রকৃতি বিজ্ঞানী ও জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা একত্রে জানিয়েছেন যে হিন্দুকুশ হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যে জীববৈচিত্র্য এযাবৎ বিরাজমান ছিলো তা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এই সম্পর্কিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিশেষজ্ঞরা পৃথিবীর সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম হিন্দুকুশ হিমালয়ের জীবমণ্ডলকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং জরুরি অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন৷

৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার, বিশ্বের প্রায় ১৩০ জনের অধিক বিশেষজ্ঞরা নেপালের কাঠমান্ডুতে সম্মিলিত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের (ICIMOD) আহ্বানে। এই আহ্বানে আয়োজিত ইন্টারগভার্নমেন্টাল সায়েন্স পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (IPBES)-এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা জড়ো হয়েছিলেন খাদ্য ও পানীয় জলের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসম্পর্ক সন্ধানে ও আলোচনা করার জন্য।

নীতিনির্ধারকরা আগামী ১০-১১ ফেব্রুয়ারী তাদের আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সম্পর্কে সংক্ষেপে জানাবেন। দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথম আইপিবিইএসের (IPBES) এরূপ মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি ২০১২ সালে ১৪৫ টি দেশের সদস্যপদসহ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই IPBES জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেলের অনুরূপ ভাবেই কাজ করে। এর লক্ষ্য হল, জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য সঠিক ও শক্তিশালী বিজ্ঞান নীতি প্রণয়ন।

এই বৈঠকের আয়োজক ICIMOD-এর গবেষকরা হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের প্রকৃতি এবং বাসস্থানের ক্ষতির একটি অনুমান জানিয়েছেন, যা ৩৫০০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চিন, ভারত, মায়ানমার, নেপাল এবং পাকিস্তান আটটি দেশে বিস্তৃত এই পার্বত্য অঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, বিশ্বের ৩৬টি বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের মধ্যে ৪টি এই অঞ্চলে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ২০০টি ইকো রিজিয়নের মধ্যে ১২টি হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলেই অবস্থিত। এছাড়াও ৫৭৫টি সুরক্ষিত অঞ্চল, ৩৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ পাখিরালয় এই অঞ্চলের অন্তর্গত, যা আজ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এই অঞ্চল জুড়ে প্রাকৃতিক অবস্থা এতটাই দ্রুত খারাপের দিকে এগোচ্ছে যে বিশেষজ্ঞদের মতে শুধুমাত্র প্রাণী ও উদ্ভিদ নয়, অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চল মানুষের বসবাসের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।