বসন্ত পঞ্চমীতে আরও একবার সরস্বতী পুজোয় ব্রতী হতে তৈরি হিন্দু বাঙালিরা। বাড়ি থেকে নানা প্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পেতে উন্মুখ পড়ুয়ারা। তবে জানেন কি বিদ্যার দেবী বলে পরিচিত হলেও বৈদিক সাহিত্যে তাঁর পরিচয় অন্য? সেখানে জলাশয় ও নদীর দেবী হিসাবে তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। মনে করা হয় দেবগুরু বৃহস্পতির স্ত্রী হওয়ার পর বিদ্যা ও সৃজনশীলতার দেবী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান সরস্বতী।
মানব সভ্যতার প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদে প্রথম দেবী সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সংস্কৃত ব্যকরণের অনুসারে সরস্বতী শব্দটি সরস্ ও বতী শব্দের সন্ধি। সংস্কৃতয় সরস্ শব্দটি হ্রদ বা জলাশয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সেই অনুসারে সরস্বতী শব্দের অর্থ হ্রদ বা জলাশয়ের অধিষ্ঠাত্রী। ঋগ্বেদের দ্বিতীয় মণ্ডলের ৪১তম সুক্তের ১৬তম স্লোকে বলা হয়েছে, ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতি’। যার অর্থ সরস্বতী মাতাদের মধ্যে নদীদের মধ্যে ও দেবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এছাড়াও ঋগ্বেদে একাধিক জায়গায় সরস্বতীকে নদীর দেবতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পণ্ডিতরা মনে করেন, দেবগুরু বৃহস্পতির সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়ার পর সরস্বতী জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী হিসাবে পূজিত হতে শুরু করেন। দেবগুরু বৃহস্পতিই হলেন আসলে জ্ঞান ও পণ্ডিতদের একাংশের মতে সংস্কৃতের ‘সরস্’ শব্দটিকে আক্ষরিক অর্থে ধরলে ভুল হবে। এখানে সরস্ অর্থে জ্ঞানকেই বোঝানো হয়েছে। আর সরস্বতীকে জ্ঞানের আধার হিসাবে। তবে ঋগ্বেদেও তাঁর জ্ঞানের বিচ্চুরণের কথা জানা যায়। এছাড়াও অথর্ব ও যজুরবেদে সরস্বতীকে নানা ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে বাংলায় সরস্বতীর বীণাপানি রূপটি পূজিত হয়ে থাকে। যার ২টি হাত। একটি হাতে থাকে পুস্তক, অন্য হাতে থাকে বীণা। শ্বেতশুভ্র রাজহংসে অধিষ্ঠিত হয়ে কমলে পা রেখে মর্তে আসেন দেবী।