Saraswati Puja 2024: বাগদেবীর আরাধনা করবেন? জানেন বসন্তের দেবীর পুজোর ইতিহাস

শুক্লপক্ষের চতুর্থ তিথিতে বাংলায় শীত শেষ হয়ে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে শুরু হচ্ছে বসন্ত। তার মানে বাংলায় বসন্ত শুরু হচ্ছে মাঘ মাসেই, ফাল্গুনে নয়। এই শ্রীপঞ্চমী তিথিতেই বাংলায় অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতী পুজো। এই সরস্বতী পুজোর দিন থেকেই বসন্ত ঋতুর শুরু বলে একসময় এদিন বাসন্তী রঙের কাপড় পরতো মেয়েরা। এই ঐতিহ্য প্রমাণ করছে, সরস্বতী পুজোর দিন থেকেই বসন্ত শুরু।

প্রত্যেকটি ছোট ছেলেমেয়েদের থেকে শুরু করে বড়দের কাছে এই সরস্বতী পুজো এক অন্যতম একটি উৎসব। সারা বছর এই পুজোর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই। সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিটি মানুষ এই সরস্বতী পুজোয় শামিল হয়ে থাকেন। সরস্বতী পুজো নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে বাচ্চাদের মধ্যে। 

স্কুল থেকে শুরু করে বাড়িতে এই পুজোর মধ্যে তারাই বেশি আনন্দ উপভোগ করে থাকে। সরস্বতী পুজো হয়ে থাকে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে। আর এই মাঘ মাসের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফল হল কুল। তবুও মনের দৃঢ় বিশ্বাস থেকে ছোটরা কখনোই সরস্বতী পুজোর আগে সেই কুল দাঁতে ও কাটে না।কেন না সবাই চায় যে, পড়াশোনায় ভালো ফল করতে। যেহেতু সরস্বতী বিদ্যার দেবী, সেই কারণে দেবীকে প্রসাদ হিসেবে এই ফল অর্পণ করার আগে খাওয়া কোনোভাবেই যাবে না। এই বিশ্বাস প্রাচীনকাল থেকে আজও বিরাজমান।

বসন্ত পঞ্চমী কী?

  • মাঘ মাসের শুল্কা পক্ষের পঞ্চমী তিথি বা দিনটি বসন্ত পঞ্চমী তিথি। অবশ্য শীত যাই যাই করে এদিনই বসন্তের আগমণ ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে। এই বসন্ত তিথিতেই বাগদেবী সরস্বতী পুজো হয়।‌ বলাই বাহুল্য রীতি অনুসারে মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথি আর বসন্তের আগমণ।এই দুই মিলে এর অন্য আরেক নাম বসন্ত পঞ্চমী।

সরস্বতীর আবির্ভাব ও পুজোর প্রাচীন ইতিহাস:

  • পুরান মতে, শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর দিনে ব্রহ্মার মুখ থেকে সরস্বতী দেবীর আবির্ভাব ঘটে । ঋকবেদে সরস্বতী একজন দেবীরূপে বর্ণিত আছে । সেই প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে সরস্বতী হিন্দুর অন্যতম দেবী হিসেবে মর্যাদা পান ও পূজিত হন। সরস্বতীর রূপকল্প বর্ণনায় পুরাণে উল্লেখ আছে কোথাও দ্বিভুজা কোথাও চতুর্ভূজা এই দুই হাতেই পূজিত হন ।দুই হাতে বীণা, পুস্তক থাকে চতুর্ভুজের চার হাতে কলম বীণা পুস্তক ও অক্ষরমালা থাকে। শাস্ত্রীয় প্রথা আচার বিধি মেনে এই পুজো হিন্দুরা জাঁকজমকে করে। হিন্দুর বারো মাসে তেরো পার্বণের এটি বিশেষ আরেক পার্বণ বলে প্রচলিত।

দেবী সরস্বতীর উত্থান:

  • কাহিনী ও পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করেন। দেবী সরস্বতীর সমস্ত রকম সৌন্দর্য ও দীপ্তির উৎস হল ব্রহ্মা। পুজোর দিন পুজোর জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেতবস্ত্র অর্থাৎ সাদা রঙের কাপড় পরিধান করে থাকে, যা পবিত্রতার নিদর্শন বলে আমরা সকলেই জানি।

গুণের দেবী সরস্বতী:

  • অনেকের মুখেই শুনতে পাওয়া যায় যে, ‘রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী’, এমন কথা শুনতে পাওয়া যায়, তবে এক্ষেত্রে কিন্তু দেবী সরস্বতী নিজেই রূপে-গুণে সবদিক থেকে অদ্বিতীয়া। বিদ্যা, বুদ্ধি ও জ্ঞান সবকিছুতে তিনি সত্ত্বগুণময়ী। তাছাড়া বাক শক্তির প্রতীক হিসেবে বাগদেবী নামে তিনি পরিচিত। ঋকবেদে দেবী সরস্বতীকে নদীর রূপে কল্পনা করা হয়েছে যিনি প্রবাহমান কর্মের দ্বারা বিশালতার অনন্ত সমুদ্রে মিলিত হয়েছেন। সংগীত শিল্প এবং বিদ্যার দেবী হিসেবে তাঁর এক হাতে পুস্তক অথবা বই আর এক হাতে বীণা। তাছাড়া পুরাণে কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক অসুর দেরকে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তি কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল এই মহা সরস্বতী দেবীর মূর্তি।

দেবীর বাহন হাঁস:

  • আমাদের বাংলায় সরস্বতী পুজোয় আমরা দেবীর দুটো হাত ও রাজহাঁসের পিঠে বসে আছে এমন মূর্তি দেখতে পাই। রাজহংস হল জলে এবং স্থলে এবং অন্তরীক্ষে অর্থাৎ সব জায়গাতেই হাঁসের গতি সমান। তেমনি জ্ঞান ও দক্ষতার গতি সব জায়গাতেই সমান ভাবে প্রকাশ পায়। তাছাড়া জানা যায় যে একমাত্র রাজহাঁস জল ও দুধের পার্থক্য করতে পারে অর্থাৎ দুধে জল মিশিয়ে দিলে তার মধ্যে দুধ ও জল কে আলাদা করে দিতে পারে। আর সেই কারণেই জ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রেও কিন্তু হাঁসের এই স্বভাব অনেকটাই তাৎপর্য বহন করে থাকে। সেক্ষেত্রে ভালো জ্ঞান গ্রহণ করা হোক, আর খারাপ কিছু বর্জন করা হোক।

সরস্বতীর অর্থ: 

  • সরস্বতী অর্থাৎ সরস্ – বতী = সরস্বতী এর অর্থ হল জ্যোতির্ময়ী। আবার সর শব্দের অর্থ হলো জল, সে ক্ষেত্রে যেখানে জল আছে সেটাই সরস্বতী। বৈদিক দেবী হলেও প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী দেবী বাগেশ্বরী আরাধনাও করতেন।

বলাবাহুল্য, সরস্বতী পুজো প্রাচীনকালের বর্তমান সরস্বতী পুজোর মত ছিলনা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকি কাঠের উপর তালপাতা, দোয়াত-কলম রেখে পুজো করার প্রথা ছিল। কেন না বিদ্যার সমস্ত সরঞ্জাম যেমন বই-খাতা, কালির দোয়াত, খাগের কলম, তালপাতা যার উপরে প্রাচীনকালে লেখা হতো, সবকছুকে দেবী সরস্বতী হিসেবে মানা হতো। সেই কারণে প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এমনভাবে সরস্বতী পুজোর প্রচলন ছিল। তার সঙ্গে ইংরেজি ভাষা সরস্বতী পুজোর দিন কোনভাবেই পুজোর ক্ষেত্রে রাখা হতো না অর্থাৎ ইংরেজি বইয়ের পুজো নিষিদ্ধ ছিল। আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজোর প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে।