মেয়র প্রার্থী দুই ভাইয়ের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে পদ্মা ব্যাংকের চিঠি 

আগামী ৯ মার্চ পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদের পরিবারের তিন সদস্য সহ মোট ছয় প্রার্থী। এদের মধ্যে যাচাই বাছাইয়ে ঋণ খেলাপির অভিযোগে পটুয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দি-পটুয়াখালী চেম্বার অফ কমার্সের পরিচালক মোঃ এনায়েত হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়।

এছাড়াও মেয়রের স্ত্রী মার্জিয়া আক্তারের ভোটার তালিকায় অসঙ্গতির কারণে তাদের মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসার খান আবি শাহানুর খান। যাচাই বাছাইয়ে নির্বাচনের বৈধতা পায় বর্তমান পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ, তার আপন বড় ভাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শফিকুল ইসলাম ও চেম্বার অফ কমার্সের পরিচালক নাসির উদ্দিন খান।

এদিকে বিশিষ্ট ঠিকাদার ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পদ্মা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঋণ সময় মতো পরিশোধ না করায় ও তার ভাই পৌর মেয়র মহিউদ্দিন সেই ঋণের জামিনদার থাকার জন্য তাদের ঋণ খেলাপি আখ্যা দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের নির্বাচনী মনোনয়ন বাতিল চেয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর আবেদন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা ব্যাংক পিএলসি পটুয়াখালী শাখার সিনিয়র অফিসার ও শাখা অপারেশন ম্যানেজার শাহিনুর আক্তার এবং উক্ত ব্যাংকের অফিসার মেহেদি হোসাইন স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগামী ৯ মার্চ, ২০২৪ অনুষ্ঠিত মেয়র পদে নির্বাচনে পটুয়াখালী জেলায় যে সকল প্রার্থীগণ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহম্মেদ, (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-৬৮৬২২৭৮৯০৭ পিন-১৯৭৬৭৮২৯৫০৫১১৯৬৭৩), পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন, মাতা-সাফিয়া বেগম, বর্তমান ঠিকানা মুসলিম পাড়া, পটুয়াখালী সদর, পটুয়াখালী, একজন সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী।

আবুল কালাম আজাদ, প্রোপ্রাইটর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ, আমাদের পদ্মা ব্যাংক পিএলসি (তৎকালীন দি ফার্মার্স ব্যাংক লিমিটেড), পটুয়াখালী শাখার একজন খেলাপি গ্রাহক। যিনি ২৮.১০.২০১৮ ইং তারিখ হতে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, পটুয়াখালী শাখা হতে সর্বমোট ২৪কোটি ৫০লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন যা ১৬.১০.২০২২ইং তারিখ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। ঋণ হিসাবটি নিয়মিত না করায় বিগত ০১.০২.২০২৪ ইং হতে মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত হয়ে যায় এবং উক্ত ঋণ হিসাবে মহিউদ্দিন আহম্মেদ একজন জামিনদার, তিনি ঋণ গ্রহণ এর সময় ব্যাংক বরাবর এই মর্মে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, “আবুল কালাম আজাদ, প্রোপ্রাইটর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ উক্ত ঋণ প্রদান এ ব্যর্থ হলে আমি জামিনদার হিসাবে ঋণের সমুদয় টাকা প্রদান করব।

খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে প্রধান কার্যালয় ও শাখা থেকে গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে শাখা হতে তাগাদা পত্র প্রদান করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায়, উপর্যুক্ত বিষয় বিবেচনাপূর্বক আসন্ন মেয়র নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, পটুয়াখালী শাখার খেলাপি গ্রাহক আবুল কালাম আজাদ, প্রোপ্রাইটর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ হিসাবে জামিনদার মহিউদ্দিন আহম্মেদ, প্রার্থী হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এর জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

পদ্মা/পটুয়াখালী/ক্রেডিট/২০২৪/৯৩ স্মারকের উক্ত চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পদ্মা ব্যাংক পিএলসি ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ক্রেডিট), বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঢাকা আগারগাঁওয়ের জেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবর।

ঋণ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছি সেটা ঠিক তবে বিভিন্ন কিস্তিতে সেই লোন পরিশোধ করতেছি’। লোনের মেয়াদ শেষ হলেও কেন ঋণ খেলাপি নয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘ওটা সিসি লোন এবং এখনো কিছু টাকা তারা (পদ্মা ব্যাংক) পাবে।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। অদৃশ্য কারণে খেলাপি ঋণের দুই গ্রহীতাকে প্রদান করা হয় বৈধতা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার খান আবি শাহানুর খান জানান, যাচাই বাছাইয়ের দিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। ঋণখেলাপির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুধু মাত্র ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নিজামুল হককে ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া যাচাই-বাছাই’র পরে কারো কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।

তার কাছে পদ্মা ব্যাংক থেকে তাহলে কি কোন অভিযোগ করা হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পদ্মা ব্যাংকের যে বাপ বাংলাদেশ ব্যাংক তারাই বলছে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি নয়। পদ্মা ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি, আগে তারা করছে কি? পদ্মা ব্যাংকের গ্রাহক(মেয়র প্রার্থী) আবুল কালাম আজাদ ঋণক্ষেলাপী কি না এবং ওই গ্রাহকের জামিনদার (মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র) মহিউদ্দিন আহমেদ ঋণখেলাপি কি না তা আমার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, আগামী ৯ মার্চ পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচনে খেলাপি ঋণের দায়ে অভিযুক্ত দুই প্রার্থী সহ মেয়র পদের জন্য বর্তমানে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন মোট ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৫ জন প্রার্থী। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।



সালাউদ্দিন/সাএ