শুল্ক কমান, নাহলে চলে যাবে মোবাইল প্রস্তুতকারকরা, নির্মলাকে চিঠি আইটি মন্ত্রীর

অ্যাপল, ফক্সকন এবং স্যামসাং-এর মতো কোম্পানিগুলিকে ভারতে নিয়ে এসে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম বলভরসা স্মার্টফোন উৎপাদন। আর এই স্মার্টফোন উৎপাদনই এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আশঙ্কা করছে যে, বিশ্বের মোবাইল বাজারে নিজস্ব পরিচয় বানাতে চাওয়া ভারত স্মার্টফোন রপ্তানির প্রতিযোগিতায় চিন, ভিয়েতনামের কাছে হেরে না যায়। এর পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও। সবটাই জানিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে একটি জরুরি চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারি নথির উদ্ধৃতি দিয়ে, আইটি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে একটি গোপন চিঠি পাঠিয়েছেন যেখানে তিনি বাড়তে থাকা করের কারণে স্মার্টফোন উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, ভারতের স্মার্টফোন বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুল্কের পরিমাণ কমিয়ে বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলিকে প্রলুব্ধ করে নিজেদের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারতের করের পরিমাণ

চন্দ্রশেখর চিঠিতে লিখেছেন, ‘প্রধান উৎপাদন দেশগুলির মধ্যে ভারতের শুল্কের পরিমাণ সর্বোচ্চ। ফলে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। যার দরুণ চিন সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের এখনই এই সমস্যার মীমাংসার জন্য কাজ শুরু করতে হবে, নাহলে তারা ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং থাইল্যান্ডে চলে যাবে।’ এমনিতেও ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলি উপাদানগুলিতে কম শুল্কের প্রস্তাব দিয়ে ফোন রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেছেন যে, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া ফোনগুলি স্থানীয়ভাবে তৈরি অনেক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলি চিন এবং অন্য কোথাও থেকে অনেক উচ্চ মানের ও দামি যন্ত্রাংশ আমদানি করে। এই যন্ত্রাংশগুলি তখন দেশে এসে উচ্চ শুল্কের কারণে সামগ্রিক খরচ বাড়ায়।’ চন্দ্রশেখর তাঁর চিঠিতে এও বলেছেন যে কীভাবে চিন এবং ভিয়েতনামের কম কর তাদের রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, গত বছর ভারতের স্মার্টফোন উৎপাদনের মাত্র ২৫ শতাংশ রপ্তানি ছিল, যেখানে চিনের ২৭০ বিলিয়ন ডলারের উৎপাদনের ৬৩ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৯৫ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে।

চন্দ্রশেখর আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে ভিয়েতনাম এবং চিন উপাদানগুলির উপর ১০ শতাংশের বেশি কর আরোপ করে না। কিন্তু ভারত তার অনেক উপাদানের উপর অতিরিক্ত পরিমাণে কর চাপাচ্ছে। তাই চন্দ্রশেখরের মতে, ‘আমাদের চিনের সঙ্গে মিল রাখতে হবে এবং করের ক্ষেত্রে ভিয়েতনামকে পরাজিত করতে হবে।’ তবেই গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনকে আকৃষ্ট করা যাবে। ভারতের লক্ষ্য মোবাইল ফোনের উৎপাদন বছরে যাতে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া যায়, যার ৫০ শতাংশ রপ্তানি করা হবে। এর জন্য একটি নতুন কৌশল প্রয়োজন। আর একমাত্র কর ছাড় মিললেই তা সম্ভবপর হবে।