Memory Booster: স্মৃতিশক্তি দুর্বল, ভুলে যান সব কিছুই? মেনে চলুন এই ৭ ঘরোয়া নিয়ম, সমস্যা কমবে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্মৃতিশক্তিও ক্রমশ কমে আসছে আজকাল। কোনো ছোট খাটো বস্তু মনে রাখাও বিশেষ চাপের হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেমন, কারও সঙ্গে কথোপকথনের সময় কোনো পরিচিত নাম মনে করতে পারেন না। ওই পেটে আসে কিন্তু মুখে আসে না। এই ঘন ঘন ভুলে যাওয়ার সমস্যা পরবর্তীতে ক্ষতিকর ডিমেনশিয়া হয়ে দাঁড়ায়। যে রোগের বুদ্ধিও হ্রাস পায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেও এই স্মৃতিশক্তি হ্রাস কিন্তু বার্ধক্যের একটি স্বাভাবিক অংশ নয়। এটি মূলত মস্তিষ্কে কোনো আঘাত, বা স্নায়বিক অসুস্থতার কারণে হয়, এমনকি আল্জ্হেইমারের মতো ভয়াবহ রোগও হতে পারে।

তাই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই ভয়াবহ সমস্যা এড়াতে আমাদের বিশেষ সাহায্য করবে বিজ্ঞানীদের কয়েক দশকের গবেষণা। যার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানও রয়েছে হাতের মুঠোয়। রয়েছে নিম্নলিখিত ৭ উপায়। যার মাধ্যমে আপনি যেকোনো বয়সেই নিজের স্মৃতিশক্তিকে তীক্ষ্ণ রাখতে পারবেন।

  • শিখতে থাকুন

শেখার কোনো বয়স হয় না। তাই বয়স যতই বাড়ুক, প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখতে থাকুন। কারণ গবেষণা বলে, যে উন্নত মানসিক কার্যকারিতা একজন ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সক্রিয় রাখে। তাঁর স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে। শিক্ষা অনেকটা মানসিক ব্যায়ামের মতো কাজ কাজ করে। চাকরিজীবী ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে অনেকটাই ভাগ্যবান। কারণ তাঁরা নিয়মিত নতুন কিছুর সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা বরং কোনো বই পড়ুন। দাবা খেলুন। নিজের জীবনের গল্প লিখুন। গান শিখুন। কোনো শিল্প অনুসরণ করুন। নতুন বাগান লেআউট ডিজাইন করুন। দেখবেন, মস্তিস্ক সচল থাকবে। ভুলে যাওয়ার সমস্যা কিছুটা হলেও সামলে উঠবেন। এই কারণে, আজকাল কর্মক্ষেত্রেও মস্তিস্কের রিফ্রেশমেন্টের জন্য এমন কিছু এক্টিভিটি করা হয়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ৭ নিয়ম

  • আপনার ইন্দ্রিয়গুলি ব্যবহার করুন

আপনি কিছু শেখার জন্য বা জানার জন্য যত বেশি ইন্দ্রিয় ব্যবহার করবেন, আপনার মস্তিষ্ক তত বেশি স্মৃতি ধরে রাখতে পারবে। গবেষণা বলছে, প্রাপ্তবয়স্করা কোনো বিশেষ বস্তুকে মনে রাখার জন্য তার ঘ্রাণ নিতে পারেন (Memory Booster)। এক্ষেত্রে আপনার মস্তিষ্কের গন্ধ-প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবং ঘ্রাণ বা গন্ধ শুঁকে বিষয়গুলি মনে রাখতে পারেন।

  • নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন

আত্মবিশ্বাস বড় বিশ্বাস। মধ্যবয়সী কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত ভুলে যাওয়ার সমস্যা বেশি পরিমাণে দেখা যায়। যে সময় তাঁরা এক নেতিবাচক স্টেরিওটাইপের সংস্পর্শে আসেন। অনেকেই ভেবে নেন যে তিনি আর কিছু মনে রাখতে পারছেন না। তাই হাল ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু তা একেবারেই নয়। বিশ্বাস রাখুন নিজের উপর। মস্তিস্ককে সঠিক উপায়ে সঞ্চালনা করুন। অনুশীলন করুন। দেখবেন, বয়স যতই হোক আপনার মন, মস্তিস্ক দুই-ই তীক্ষ্ণ থাকবেই।

  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে নিত্য বস্তু ব্যবহার

বৃদ্ধ বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে এই ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ছে। তাই এক্ষেত্রে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে মনে রাখতে একটি রুটিন বানান। তারিখ মনে রাখতে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করুন। কোনো কিছু কেনার থাকলে একটি খাতায় শপিং তালিকা লিখে রাখুন। ফাইল ফোল্ডারে কিছু থাকলে উপরে নাম লিখে রাখুন (Memory Booster)। আপনার চশমা, পার্স, চাবি এবং অন্যান্য আইটেম যা আপনি প্রায়শই ব্যবহার করেন তার জন্য বাড়িতে একটি জায়গা নির্ধারণ করুন। বিশেষত উল্লেখ্য, বিভ্রান্তি কমাতে মন শান্ত রাখুন।

  • সংক্ষেপে মনে রাখুন

স্মৃতির যন্ত্রগুলি সংক্ষিপ্ত শব্দের আকার মনে রাখতে পারে। যেমন ক্লাসিক্যাল গান শেখার ক্ষেত্রে বাদ্যযন্ত্রের নোটগুলি মনে রাখার জন্য ট্রেবল ক্লিফের লাইনে E, G, B, D, এবং F ব্যবহার করা হয়।

  • আপনি যা জানতে চান তা পুনরাবৃত্তি করুন

আপনি হয়ত এমন কিছু মনে করতে চান যা আপনি এইমাত্র শুনেছেন, পড়েছেন বা চিন্তা করেছেন, তখন এটি জোরে জোরে বলুন বা লিখে রাখুন। যেমন, যদি আপনাকে এইমাত্র কারো নাম বলা হয়, আপনি তার সঙ্গে কথা বলার সময় নামটি ব্যবহার করুন। তবে মনে রাখবেন, অল্প সময়ের মধ্যে কোনো কিছুর পুনরাবৃত্তি না করাই ভালো। দীর্ঘ সময়ের জন্য এটি করুন। যেমন, এক ঘন্টায় একবার, তারপরে প্রতি কয়েক ঘন্টা, তারপরে প্রতিদিন। কারণ গবেষণা দেখিয়েছে যে ব্যবধানে রিহার্সাল শুধুমাত্র সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যেই নয় বরং যাঁরা ঘন ঘন সবকিছু ভুলে যান। তাঁদের জন্যও উপকারী।

  • পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন

আপনার স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ভালো ঘুমাতে হবে। এটি মস্তিষ্ককে শিথিল করে এবং কোষগুলিকে বিশ্রাম দেয়। যার দরুণ আপনি সকালে অনেকটা সতেজ বোধ করবেন। এবং পরবর্তীতে আপনার স্মৃতিশক্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।