Dermatomyositis Killed 19 years old Dangal Actress Suhani Bhatnagar, what is the disease Dermatomyositis ABP Live Exclusive

নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা : মাত্র ১৯ বছর বয়সে চলে গেল সুহানি (Suhani Bhatnagar) ।  সেই সুহানি, যাঁকে মানুষ চেনে আমিরের  ‘দঙ্গল’ দিয়ে। সে-ছবিতে  আমির খানের সঙ্গে সুহানি অভিনয় করেছিলেন ববিতা ফোগতের শৈশবের চরিত্রে। তাঁর অকালে চলে যাওয়ার কারণ এক কম প্রচলিত রোগ ডার্মাটোমায়োসাইটিস (Dermatomyositis) 

ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে এই রোগের উপসর্গ নিয়ে তাঁকে ভর্তি করা হয় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ (All India Institute of Medical Sciences)। তারপর বাড়তে থাকে জটিলতা। আর এক সপ্তাহের মাথায় গত ১৬ তারিখে প্রয়াত হন অভিনেত্রী সুহানি। সুহানির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তিনি এই রোগের উপসর্গে ভুগছিলেন মাস দুয়েক হল। তবে রোগ ধরা পড়ে দিন দশেক আগে। 

কী এই রোগ (What Is Dermatomyositis) 

Dermatomyositis হল পেশীর বিরল রোগ। হলেই মৃত্যু, এমনটা নয়। তবে এই অসুখের পরিণতি ভয়াবহ। অবহেলায় হতে পারে ভয়ঙ্কর। আলোচনায় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অভিষেক দে (dermatologist, dermatosurgeon, Laser Surgeon, Trichologist, and Aesthetic Consultant)।  

ডার্মাটোমাইসাইটিস এমন একটা অসুখ যাকে মূলত একটি সংযোগকারী তন্তুর রোগ (connective tissue disease) বলা হয় । এই রোগ যে কোনও বয়সে আসতে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে কেউ কেউ শিশু, আবার কেউ কেউ  প্রাপ্তবয়স্ক। খুব বেশি বয়সেও এই অসুখ হতে পারে। বেশি বয়স্কদের মধ্যে এই অসুখ হলে তার থেকে  ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে। এই রোগটি ত্বক,পেশী, জয়েন্ট, কিডনি এবং বিভিন্ন অঙ্গকেও  প্রভাবিত করে। উপসর্গ শুরু হয় ত্বকে। দেখা যায় লাল বা বেগুনি ছোপ, যা আলো লাগলে বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে পিগমেন্টেশন, হাত ফুলে যাওয়া, রক্তনালীর সমস্যা দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশী দুর্বল হতে থাকে। ধীরে ধীরে রোগীর নিয়মিত কাজ করতে সমস্যা হয়। যেমন চুল একত্রিত করা বা ঘুম থেকে উঠে বসা, সবকিছুতে সমস্যা শুরু হয়। এছাড়াও ফুসফুসের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে, ধীরে ধীরে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এছাড়াও রোগীর অন্যান্য গুরুতর সমস্যা হতে পারে যা ক্যান্সার, কিডনি ব্যর্থতার মতো অকালে  মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই রোগীরা একাধিক কারণে তাড়াতাড়ি মারা যেতে পারে। 

সুহানির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তিনি এই রোগের উপসর্গে ভুগছিলেন মাত্র মাস দুয়েক। এত তাড়াতাড়িও অবস্থার অবনতি হতে পারে। অনেক সময় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণে এই সংকটগুলো ঘটে। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা  যথেষ্ট কম।  আক্রান্ত বা তার পরিবার ত্বকের উপসর্গগুলিকে সাধারণ পিগমেন্টেশন হিসাবে ধরে নেয় । কিছু ওষুধ দেয়  না এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেয় না অনেকে।  দুর্বলতাকেও অনেকে ভিটামিনের ঘাটতি হিসেবে ধরে নেয় রোগীরা।  

এই রোগ সেরে যায়, এমনটাও বলা যায় না। তবে আধুনিক ওষুধ প্রয়োগে অবস্থার উন্নতি হতে পারে। তাই প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ই মুখ্য কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে সচেতনতা খুবই কম। তাই গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়ে যায় বিনা চিকিৎসায়।

Johns Hopkins Medicine এর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এটি একটি বিরল ও জটিল রোগ। যার মূল উপসর্গই হল প্রদাহ ও ত্বকের ব়্যাশ (inflammation and skin rash)। এই রোগে আক্রান্ত হলে কিছু মাসলে তীব্র প্রদাহ হয়। সেই সঙ্গে তা ফুলে যায়। এটি একটি বিরল রোগ। এটি অন্যান্য মাসলের অসুখের থেকে একেবারেই আলাদা। dermatomyositis এর মূল লক্ষণগুলি দেখা যায় ত্বকেই। যদিও এই অসুখ যে কোনও বয়সেই হানা দিতে পারে, তবে ৫০ থেকে ৭০ এর মধ্যে উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে। আর এই অসুখে বেশি আক্রান্ত হন মেয়েরাই। এই অসুখের প্রাথমিক লক্ষণ হল পেশী দুর্বলতা। তবে পালমোনারি, কার্ডিওভাসকুলার এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমকেও  প্রভাবিত করতে পারে। তবে এ কথা মনে রাখতে হবে এই অসুখ হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। তবে ঠিক সময়ে রোগ ধরা না পড়লে মুশকিল হতে পারে। 

এই ডার্মাটোমায়োসাইটিস খুবই বিরল অসুখ । সুহানি ভাটনগরের বাবা সুমিত ভাটনগর দাবি করেছেন, সারা বিশ্বে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জন মানুষ এটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। মেয়ের উপসর্গ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মা পূজা ভাটনাগর জানান, ‘ প্রায় দুই মাস আগে ওর হাতে লাল দাগ দেখা দেয়। আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি কিন্তু রোগ নির্ণয় করা যায়নি।’ 

সুমিত ভাটনগর বলেন, নানারকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও  তার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয়নি এবং অবশেষে তার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ফুসফুসে ফ্লুইড জমতে থাকে। এর ফলে ফুসফুস  ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ পর্যন্ত সুহানিকে 
ভেন্টিলেটরেও রাখা হয়েছিল কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি।

জনস হপকিন্স মেডিসিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ডার্মাটোমায়োসাইটিসের লক্ষণগুলি দেখা যায়, রক্তনালীতে ফোলাভাব এবং প্রদাহের কারণেই। এই রোগ সংক্রামকও নয়, ছোঁয়াচেও নয়।

এর উপসর্গগুলি কী কী 

mayoclinic – এর ওয়েবসাইট বলছে, এর ফলে

  • ত্বকে নানারকম পরিবর্তন দেখা যায়।
  • বেগুনি রঙের বা ধূসর লাল ফুসকুড়ি হয়।
  • মুখ এবং চোখের পাতায় ,হাঁটু, কনুই, হাঁটু, বুক এবং পিঠে ফুসকুড়ি হতে পারে।
  • এগুলি চুলকানি এবং বেদনাদায়ক । এগুলোই  ডার্মাটোমায়োসাইটিসের প্রথম লক্ষণ।
  • এছাড়া পেশীর দূর্বলতা হয়। তারপর তা বাড়তে থাকে।
  •  যদি পেশীর দুর্বলতা বাড়তে থাকে, আর এরকম হঠাৎ করেই এমন  ফুসকুড়ি হয়, তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। 

কেন হয় এই অসুখ
ডার্মাটোমায়োসাইটিসের কারণ অজানা। তবে বিশষজ্ঞরা মনে করেন, এটি একটি  অটোইমিউন ডিসঅর্ডার। অর্থাৎ যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলভাবে  শরীরের টিস্যুগুলিকেই আক্রমণ করে। এর পিছনে জিগনত এবং পরিবেশগত কারণও থাকতে পারে। ডার্মাটোমায়োসাইটিসে জটিল পর্যায়ে চলে গেলে গিলতে অসুবিধা হতে পারে। এর ফলে যদি  খাদ্যনালীর পেশীগুলি প্রভাবিত হয় তাহলে গিলতে সমস্যা হতে পারে, যা ওজন হ্রাস এবং অপুষ্টির কারণ হতে পারে। এই অসুখ বুকের পেশীগুলিকে প্রভাবিত করলে  শ্বাসকষ্ট হতে পারে।  

আরও পড়ুন : 

বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ, পুরোপুরি সারেও না, জেনে নিন COPD নিয়েই দীর্ঘায়ু হওয়ার উপায়  

 

 

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator

আরও দেখুন