‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলা ভাষার ওপরেও আঘাত হেনেছিল তারা’

যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি। সেখানেই থামেনি, বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান বানানোর আশায় ভাষার ওপরেও আঘাত হেনেছিল তারা। তার প্রমাণ ‘জয় বাংলাকে’ তারা বানিয়েছে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’, ‘বাংলাদেশ বেতারকে’ বানিয়েছে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ ইত্যাদি। এমন পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা বাংলা ভাষার প্রাধান্য কমাতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাষার জন্য রক্ত দেওয়া জাতিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া এত সহজ নয়। এজন্য বারবার পরাজিত তারা।’

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ভাষাশহীদদের স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভা শেষে পুরস্কার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আরও বলেন, ‘বাঙালির স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ভাষা আন্দোলন বাঙালির প্রথম সাংস্কৃতিক বিপ্লব; যা আমাদের জাতীয়তাবোধের পরিচয়ের প্রথম ধারক। যে জাতীয়তাবোধের ধারণা থেকে বাঙালি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা ও মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই মাতৃভাষা দিবস এখন আর আমাদের একার নয়। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের সব ভাষাভাষির দিবস এটি। এই দিবসে আমাদের একটাই প্রত্যয় হোক, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’

১৯৭২ সালে সরকার গঠন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে সোনার বাংলা গড়তে কাজ শুরু করেন জানিয়ে এমপি কাজী নাবিল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে দাঁড় করাচ্ছিলেন, ঠিক সে সময় দেশ-বিদেশে থাকা একাত্তরের পরাজিত শক্তি চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে হত্যা ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছে তারা।’

১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে আবারও সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন বলে জানান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল। এরপর মাঝে ২০২১ থেকে আবারও আমরা পিছিয়ে যাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আবার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরপর দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করেছি, ঘাতকদের শাস্তির আওতায় এনেছি। আমরা প্রমাণ করেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের চেতনা।’

আমাদের স্বাধীনতা ততদিন পরিপূর্ণ হবে না, যতদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে পারি উল্লেখ করে এমপি কাজী নাবিল আরও বলেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়নকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন দেশের জনগণ। কারণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের সবক্ষেত্রে উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছেন তিনি।’

বাঙালি বীরের জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত উল্লেখ করে কাজী নাবিল বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুননির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বনেতারা। বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গেই ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে বলিষ্ঠ কণ্ঠে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।’ 

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপংকর দাস ও প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।