বিয়ের পর টানা ৬ বার ব্রেন অপারেশন স্বামীর, হাত ধরলেন স্ত্রী, তারপর…..

মস্তিষ্কে জমেছিল জল৷ জল বের করতে করা হল অপারেশন। লাভ হল না। কয়েকদিনের মাথায় ব্রেনে ধরা পড়ল সিস্ট। তারও অপারেশন করা হল ১ বছরের মাথায়। পর পর দুই বছর ধরে গুরুতর অসুস্থায় ভুগেছেন ৫৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। নাম শ্যামল কান্তি, বিধান নগর পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী তিনি। বিয়ে করেছিলেন ২০০০ সালে। বিয়ের বছরের মধ্যেই মাথায় শুরু হয়েছিল তীব্র যন্ত্রণা। ডাক্তারের পরামর্শে ২০০১ সালে হয় প্রথম অপারেশন, ২০০২ সালে হয় দ্বিতীয়টা, ব্রেনে সিস্টের অস্ত্রোপচার করিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন শ্যামল। এখানেই স্বস্তি নেই।

পর পর দুই বছরে দুইটি বড় অপারেশন করানোর পরেও একই রকম অসুস্থতায় ভুগছিলেন শ্যামল। হাত ছাড়েননি তাঁর নব বিবাহিতা স্ত্রী। ব্যাপক যন্ত্রণায় রীতিমত ছটকাতেন শ্যামল কান্তি। ২০০৩ সালে তাঁকে আবারও ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসা হয়। এবার ধরা পড়েছিল কানের সমস্যা। যথারীতি কানের উপরের অংশে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল তাঁর৷ এর পর কয়েক বছর উপশম। আবার ২০০৯ সাল নাগাদ শুরু হয়েছিল সমস্যা। আবারও জল জমেছিল শ্যামলবাবুর মস্তিষ্কে। যথারীতি অস্ত্রোপচার করে জল বের করতে হয়েছিল৷ এর পরের ৬ বছর শান্তিতে কাটিয়েছিলেন।

আবার ২০১৬ সালে ফিরে এসেছিল যন্ত্রণা। মস্তিষ্কে ধরা পড়েছিল টিউমার৷ সেই টিউমার অপারেশন করা হয়। ২০২৩ সালে আবারও মস্তিষ্কেই টিউমার ফিরে এসেছিল৷ যথারীতি ফের অস্ত্রোপচার করতে হয়। সবমিলিয়ে ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যেই মোট ৬ বারই মস্তিকের অপারেশন হয়েছে শ্যামল কান্তির। উল্লেখ্য, শুরু থেকেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন শ্যামল বাবু। এর পর অবশ্য ই এম বাইপাসের সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করা হয়েছিল। ই এম বাইপাসের স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জেন এল এন ত্রিপাঠী অপারেশন করেছিলেন।

  • এতবার অপারেশনের পর কী বলছেন ডাক্তার

শ্যামল বাবুর সার্জেন জানিয়েছেন, ‘মনোবল এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ায় শ্যামল কান্তি রায় নতুন জীবন পেয়েছেন। চিকিৎসক জীবনে একই রোগীর এতবার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সাক্ষী হইনি। শ্যামল কান্তি বাবুর গোটা পরিবার যেভাবে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে আমাদের কাছেও এটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই ধরনের রোগীকে সুস্থ করে তোলার মধ্যে এক অন্য আনন্দ কাজ করে।’

উল্লেখ্য, সুস্থ আছেন শ্যামল কান্তি। এ প্রসঙ্গে শ্যামল কান্তির স্ত্রী বলেছেন, ‘বিয়ের পরেই এই ঘটনায় একদম ভেঙে পড়েছিলাম, তারপর এত বছরের লড়াই। দুই মেয়েকে নিয়ে, স্বামীকে নিয়ে সবাই মিলে এই লড়াই করেছি। আগামী দিনেও আমরা সবাই মিলে ভালো থাকব।’ কথায় বলে মনের জোর বড় জোর। মাত্র ২২ বছরের মধ্যে টানা ৬ বার মস্তিকের অপারেশন করিয়ে সুখের সংসারের স্বপ্ন দেখছেন শ্যামল কান্তিও। জানিয়েছেন, ‘একটা সময় জীবনের প্রতি সমস্ত বিশ্বাস চলে গিয়েছিল তবে আমার স্ত্রী যেভাবে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তাতে লড়াইটা অনেক সহজ হয়। আর এই হাসপাতালে চিকিৎসকরা, স্বাস্থ্য কর্মীরা যেভাবে প্রতিমুহূর্তে আমাদের পাশে ছিলেন, তাতে আমি এই লড়াইয়ে জিততে পেরেছি।’