বন দফতরের বিট অফিসারকে আটকে রাখল গ্রামবাসীরা, গজরাজের হানায় মৃত্যুর জের

গজরাজের হানায় গ্রামবাসীদের প্রাণহানি থেকে জমির ফসলের ক্ষতির অভিযোগ সামনে এসেছিল। আর তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল গ্রামবাসীদের মধ্যে। কারণ গরিব গ্রামবাসীদের চাষবাসই তাঁদের জীবিকা। সেখানে হাতিদের হানা এবং ফসলের ক্ষতি রোজগারের উপর প্রভাব ফেলেছিল। তার মধ্যে স্বজন হারানোর বেদনা বাড়তি ক্ষোভ তৈরি করেছিল গ্রামবাসীদের মধ্যে। এভাবে বারবার ক্ষতি ও প্রাণহানিতে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছিল ঝাড়গ্রামের ছাপোষা মানুষজনের। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বিট অফিসারকে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা। যা নিয়ে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, গত রবিবার রাতে কাজ শেষ করে সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি গুরুচরণ মাহাতো। কিন্তু রাস্তায় হাতির হানার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। আর তার জেরে মৃত্যু হয় গুরুচরণের। সেই ক্ষোভ তো ছিলই গ্রামের মানুষজনের মনে। তার উপর ওই রাতে ঝাড়গ্রাম ব্লকের শিরশি গ্রামের মাঠে করলা, বেগুনের জমিতে দাপিয়ে বেড়ায় হাতির পাল। তাতে ব্যাপকভাবে ফসল নষ্ট হয় বলে অভিযোগ। এতকিছুর পরেও হুলা পার্টি আসেনি বলে অভিযোগ। এই ক্ষোভে গ্রামের মানুষজন ঘিরে ধরেন ঝাড়গ্রাম রেঞ্জে বাঁদরভুলার বিট অফিসার চিত্তরঞ্জন মাইতিকে। যা নিয়ে চাপ বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন:‌ প্রায় একবছর সময়ে ১৬ জনকে গ্রেফতার করল এনআইএ, রামনবমীতে হিংসার জের

অন্যদিকে সোমবার শিরশি গ্রামে ঝাড়গ্রাম রেঞ্জে বাঁদরভুলার বিট অফিসার চিত্তরঞ্জন মাইতি এলে তাঁকে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বিট অফিসার বলেন, ‘জমির ফসলের খুব ক্ষতি হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। করলা, আলু, বেগুন, ধান নষ্ট হয়েছে। প্রায় ২২টি হাতি দাপিয়ে বেড়ায় জমিতে। ভেষজ উদ্যানের পিছনে জোয়ালভাঙায় হাতির দলটি এসেছিল। এখন হাতির দলটি ওই জঙ্গলেই আছে।’ হাতি দেখে সাইকেল ফেলে রেখে প্রাণে বাঁচতে পালানোর চেষ্টা করলেও রক্ষা পায়নি গুরুচরণ মাহাতো। হাতি তাঁর পিছু নিয়ে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। তাতেই তেতে ওঠে গ্রামবাসীরা।

এছাড়া বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও বন দফতরের তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এই বিষয়ে গ্রামবাসীরা অভিযোগ তুলে বলেন, ‘হাতির দল জমিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আমরা দূর থেকে দেখেছি। কিছুই করার ছিল না। কারণ কোনও হুলাপার্টিকে ডেকেও মেলেনি। গ্রামের মধ্যে যাতে হাতির দল ঢুকতে না পারে তার জন্য সারারাত পাহারা দিয়েছি।’ হুলা পার্টি হাতি তাড়াতে না আসা নিয়ে বিট অফিসার অবশ্য বলেন, ‘শিরশি গ্রামে কোনও হুলাপার্টি নেই। লোধাশুলি থেকে হুলাপার্টির সদস্যরা এসেছিলেন। কিন্তু ঢুকতে পারেননি।’ তবে মৃতের ভাই হলধর মাহাতোর কথায়, ‘দাদা রাজমিস্ত্রির কাজ শেষ করে সাইকেলে ফিরছিল। তখন হাতির মুখোমুখি পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। বন দফতরের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি। যাতে দাদার পরিবারের একটা সুরাহা হয়।’