পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন, কীভাবে নির্বাচিত হবেন স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রী

পাকিস্তানের নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। প্রথম অধিবেশনেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। নির্বাচন করা হবে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা। কীভাবে তাদের নির্বাচন করা হবে সেই প্রক্রিয়াটি তুলে ধরেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন।

বুধবার রাজা পারভেজ আশরাফ জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এ অধিবেশন বসবে।

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে নতুন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকতে হবে। সেই অনুযায়ী, ২৯ ফেব্রুয়ারি অধিবেশন ডাকা হয়েছে।

প্রথম অধিবেশনেই নির্বাচন করা হবে পাকিস্তানের নতুন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা। এই অধিবেশনের শুরুতে সভাপতিত্ব করবেন বর্তমান স্পিকার আশরাফ। কারণ পরবর্তী স্পিকার নির্বাচিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে শপথ গ্রহণ করবেন নবনির্বাচিত সদস্যরা। ৩৩৬ সদস্যের সাধারণ পরিষদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৬০টি। এছাড়া ১০টি আসন সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ৪০টি সংরক্ষিত নারী আসন বরাদ্দ করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। এর মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবের ৩২ টি আসনের মধ্যে ২০টি, খাইবার পাখতুনখোয়ার ১০টি আসনের মধ্যে দুটি, সিন্ধুর ১৪টি আসন এবং বেলুচিস্তানের চারটি।

সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি আসনের মধ্যে সাতটি বরাদ্দ করা হয়েছে। এখনও সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) সংরক্ষিত সংখ্যালঘু ও নারী আসন বরাদ্দ করেনি ইসিপি। কারাবন্দি ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল সমর্থিত স্বতন্ত্র জয়ীরা এসআইসিতে যোগ দিয়েছেন।

জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন কেমন হতে পারে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে ডনের প্রতিবেদনে।

স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন

প্রথম অধিবেশনের সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার আশরাফ। তার নেতৃত্বেই নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। 

অধিবেশনের শুরুতেই নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ গ্রহণ করবেন। এরপর প্রত্যেক সদস্যকে রেজিস্টারে স্বাক্ষর করার জন্য ডাকা হবে। তারপর জাতীয় পরিষদ সচিবের নিকট স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হবে। মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৩ ধারা (১) অনুযায়ী, গোপন ভোটে স্পিকার নির্বাচন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন

নবনির্বাচিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে। মূলত স্পিকার নির্বাচনের পরের দিন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়ে থাকে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯১ (৩)-এ বলা আছে, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর কোনও বিতর্ক ছাড়াই একজন মুসলিম সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া স্পিকার নির্বাচনের মতোই। সচিবের নিকট প্রথমে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে হবে। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হলে সংসদের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যাতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যাওয়া-আসা করতে না পারে। তারপর স্পিকারের তত্ত্বাবধানে উন্মুক্ত ভোট গ্রহণ শুরু হবে।

বিরোধী দলের নেতা নির্বাচন

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর স্পিকার বিরোধী দলের সদস্যদের স্বাক্ষরসহ প্রার্থীদের নাম জমা দিতে বলবেন স্পিকার। তারা যাকে নেতা করতে চান তার নাম জমা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পরে বিরোধীদলীয় নেতার নাম জমা দেওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান সম্পর্কে জানাবেন স্পিকার।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পরপরই এই ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে এই তালিকা জমা দিতে সময়ও লাগতে পারে।