‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি’ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর দাবি

বিরল রোগ দিবসে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে এসএমএ আক্রান্ত রোগীদের কল্যাণে কাজ করা রোগী ও অভিভাবকদের সংগঠন ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। বিরল রোগ দিবস উপলক্ষে সচেতনতামূলক র‌্যালির আয়োজন করে সংগঠনটি। র‌্যলিটি শুরু হয় দোয়েল চত্বর থেকে। পরে আবদুল গণি রোড হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। বিরল রোগের জন্য সচেতনতা বাড়াতে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটিতে এ দিবস পালন করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এসএমএ একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরোন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী, টাইপ ওয়ান থেকে টাইপ ফোর পর্যন্ত হয় এসএমএ। এর ওষুধ বাজারে এলেও তা সাধারণের কেনা সাধ্যাতীত। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তবে সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ পরীক্ষা এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। চিকিৎসার অভাবে দেশে অসংখ্য শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।

বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যার কারণে এসএমএ রোগ হয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, লক্ষণগুলো বিকাশের আগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে পরে চিকিৎসায় ভালো ফলাফল পেতে তা সহায়ক হয়। একটি নবজাতকের স্ক্রিনিংয়ের সাহায্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। ওষুধেরে পাশাপাশি থেরাপিসহ আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে একজন আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় এমনিওটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করে অনাগত শিশুটি আক্রান্ত কিনা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সচেতনতাই পারে এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।

তারা বলেন, উন্নত বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনে একজন এসএমএ আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে ধরা নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বেশি হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় এটি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এসএমএ রোগের চিকিৎসাকে ব্যয়বহুল উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এসএমএ রোগের থেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবার জন্য ডেডিকেটেড কোনও হাসপাতাল নেই। এমনকি কোনও এসএমএ ক্লিনিকও এখনও গড়ে উঠেনি। এই রোগের ইনজেকশনের দাম প্রায় ২২ কোটি টাকা। এছাড়া দেশে একমাত্র অনুমোদিত ওষুধ রোশ ফার্মার রিজডিপ্লাম। এর প্রতিটি ফাইলের দাম প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অনেক বাবা-মায়ের পক্ষে এসব ওষুধ কেনা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।

কিউর এসএমএ বাংলাদেশের সাত দফা দাবি হলো– দেশে এসএমএ রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা; দেশের সব সরকারি হাসপাতালে এসএমএ ডেডিকেটেড কর্নার বা এসএমএ কর্নার স্থাপন করা; দেশে এসএমএ রোগের প্রকৃত চিত্র জানার জন্য জাতীয়ভাবে জরিপের ব্যবস্থা করা; বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকারিভাবে এসএমএ রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা; এসএমএ রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ; এসএমএ রোগের জন্য অনুমোদিত ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত করা এবং আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজন সাইকোলজিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা করা।

সমাবেশে ছিলেন– কিউর এসএমএ বাংলাদেশের সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক তানজিনা আফরিন, অর্থ সম্পাদক ওমর ফারুক প্রমুখ।