৫ বছরে ঢাবি এলাকায় ১৬ নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার, নিরাপত্তায় জোর

২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৬টি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করেছে শাহবাগ থানা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সংখ্যা পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীর না থাকা, বহিরাগতদের ব্যাপক যানবাহনের চলাফেরার কারণে এই সব অপরাধ দমন করা কঠিন হয়ে উঠেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি করপোরেশন, সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করতে কাজ করছে প্রশাসন বলেও জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ বিষয়গুলো শুনতে এবং দেখতে খুবই দৃষ্টিকটূ। নবজাতকের মরদেহের বিষয়গুলো ঘটে মূলত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। পরে অসহায় মা-বাবা বা কোনও একটা চক্র এসব ফেলে যায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিষয়টি দমনের চেষ্টা করবে প্রকাশন।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের অনলাইন সংস্করণের তথ্যের আলোকে, ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর কার্জন হলের বাস স্টপেজ থেকে একটি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০১৯ সালের ২৭ জুন শহীদুল্লাহ হল এলাকা থেকে একটি। পরের বছর ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর সেন্টার লাইব্রেরির পিছন থেকে একটি, একই বছর ৯ ডিসেম্বর শহীদুল্লাহ হলের পেছনে পানি পাম্প সংলগ্ন কেচি গেইটের পাশ থেকে একটি এবং ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর জগন্নাথ হলের পাশ থেকে একটি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর গণিত ভবনের পাশ থেকে একটি, ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি রাসেল টাওয়ারে ফুটপাত থেকে একটি, একই বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির গেট এলাকা থেকে দুটি, ওই বছর ১৭ মার্চ অমর একুশে হলের পাশের ফুটপাত থেকে একটি এবং একই বছর ২০ সেপ্টেম্বর শহীদ মিনার এলাকা থেকে একটি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

২০২৩ সালের ১২ আগস্ট অমর একুশে হলের ফুটপাত থেকে দুটি এবং সর্বশেষ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য বাংলো এলাকা ও টিএসসির ফুটপাত থেকে একটি করে মোট দুটি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সবশেষ ভিসি বাংলো এলাকা থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাংলো সীমানা দেয়ালের বাইরে থেকে ভেতরের অংশে ব্যাগে মোড়ানো এক নবজাতকের মরদেহ ছুড়ে ফেলেন এক ব্যক্তি। পরে শুক্রবার (১ মার্চ) সুলতান মিয়া (৩৫) নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  

গ্রেফতারকৃত সুলতান দায় স্বীকার জানায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মোসাম্মৎ খাদিজা নামের এক নারী একটি মৃত কন্যাশিশুর জন্ম দেন। খাদিজার স্বামী মো. সুলতান মিয়া শিশুর মরদেহ হাসপাতাল থেকে বুঝে নিয়ে গোপনে একটি বাজারের ব্যাগে ভরে উপাচার্যের বাসভবনের সীমানা দেয়ালের পাশে বাগানের উত্তর-পূর্ব কোণে ফেলে যান। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এবং সুলতানের শ্যালক মুত্তাকীর স্বীকারোক্তির মাধ্যমে পুলিশ অভিযুক্ত সুলতান মিয়াকে শনাক্ত করে। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড.  মাকসুদুর রহমান বলেন, রোকেয়া হলের স্টাফ কোয়ার্টারের দিক থেকে কেউ একজন মৃতদেহটি দেয়ালের উপর দিয়ে উপাচার্যের বাংলোর মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় চলে গেছে। তদন্তে ঘটনার বিস্তারিত বের হয়ে আসবে, কেন এ ঘটনা ঘটানো হলো।

ক্যাম্পাসের এই পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে কোনও সীমানা প্রাচীর না থাকায় ক্যাম্পাস অনেকটা উন্মুক্ত। এখানে বহিরাগত প্রচুর মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি করপোরেশন, সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছি, কীভাবে ক্যাম্পাসের পরিবেশ আরও নিরাপদ করা যায়।’

নবজাতক উদ্ধারের এই পরিসংখ্যান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অবস্থান জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘আমি এই পরিসংখ্যান থেকে জানতে পারলাম এতোগুলা মরদেহ পাওয়া গেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বসবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বলতে, আসলে ঢাকার সব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা। এর পাশে বুয়েট-মেডিক্যাল আছে।’

তিনি বলেন, ‘এই কাজগুলো (নবজাতকের মরদেহ) হয় মূলত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে (ঢামেক) হাসপাতালে। পরে অসহায় মা-বাবা বা কোনও একটা চক্র এই মরদেহগুলো ক্যাম্পাসের ভেতরে ফেলে যায়। আমরা প্রসাশন সহযোগিতা নিয়ে বিষয়টি কমিয়ে আনবো। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সবার আরও বেশি সহযোগিতা ফেলে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।’