Modi in Krishnanagar: বাংলায় আজ মোদীর দ্বিতীয় দিন। আজ কৃষ্ণনগরে সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। এরপর সেখানে একটি দলীয় জনসভায় ভাষণ রাখার কথা মোদীর। এই কৃষ্ণনগর থেকেই গতবার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। আবার এই লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া ভোটের প্রভাব রয়েছে বেশ ভালো। এই আবহে আজ কৃষ্ণনগর থেকে সিএএ নিয়ে কোনও বার্তা প্রধানমন্ত্রী দেন কি না, সেদিকে নজর থাকবে সবার।
আজকে মোদীর কর্মসূচি
আজ সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে রাজভবন থেকে সড়ক পথে আরসিটিসি হেলিপ্যাডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে মোদীর কনভয়। এরপর ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ আরসিটিসি হেলিপ্যাড থেকে উড়ে যাবে মোদীর হেলিকপ্টার। সকাল সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছনোর কথা মোদীর। এরপর সাড়ে দশটা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত সরকারি অনুষ্ঠানে থাকার কথা মোদীর। এরপর সকাল ১১টা ৫ মিনিটে অনুষ্ঠান স্থল থেকে সড়ক পথে বেরিয়ে ৫ মিনিটেই জনসভার স্থলে এসে পৌঁছনোর কথা মোদীর। সূচি অনুযায়ী ১১ টা ৫ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত কৃষ্ণনগরে দলীয় সভায় ভাষণ দেওয়ার কথা মোদী। এরপর ১২টা ১০ মিনিটে কৃষ্ণনগর থেকে পানাগড়ের উদ্দেশে উড়বে মোদীর হেলিকপ্টার। ১২টা ৫৫ মিনিটে পানাগড় থেকে মোদীর বিমান উড়ে যাবে বিহারে।
কৃষ্ণনগর নিয়ে জনমত সমীক্ষা…
২০০৯ থেকে এই আসনে একচেটিয়া ভাবে জিতে এসেছে তৃণমূল। ২০০৯ থেকে ২০১৯ এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন তাপস পাল। আর ২০১৯ সালে এখান থেকে জিতেছিলেন মহুয়া। এর আগে ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত একচেটিয়া ভাবে এখানে জয়ী হয়ে এসেছে সিপিএম। তবে ১৯৯৯ সালে বিজেপির সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে। পরে অবশ্য ২০০৪ সালে ফের বামেরা এই আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল। তবে এবারে কী হবে? ইন্ডিয়া টুডে সিএনএক্স-এর জনমত সমীক্ষার ফল জানতে এখানে ক্লিক করুন
কৃষ্ণনগরে মতুয়া প্রভাব
কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনটিতে মতুয়া ভোটের একটা বড় প্রভাব রয়েছে। গতবার অবশ্য মহুয়া মৈত্র এই আসনে প্রায় ৬০-৭০ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। তবে এহেন মহুয়াকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে হয়ত তৃণমূল আবার তাঁকেই প্রার্থী করবে। এই সবের মাঝেই আবার আধার বিতর্ক, সিএএ-র মতো ইস্যু এই কেন্দ্রে কাজ করতে পারে।
কেন সিএএ নিয়ে এত টালবাহানা?
বাংলায় ভোট বৈতরণী পার করতে সিএএ বড় হাতিয়ার হতে পারে বিজেপির জন্য। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের হিন্দু সহ ৬টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতেই আনা হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। ২০১৯ সালে এই আইনটি সংসদের অনুমোদন পেয়ে তৈরি হয়েছিল। তবে এই আইনের নিয়ম তৈরি হয়নি এতদিনে। তবে সম্প্রতি এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, সিএএ সংক্রান্ত নিয়ম তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই আবহে লোকসভা ভোটের আগেই তা কার্যকর করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। এর জন্য অনলাইন পোর্টালও তৈরি হয়েছে। এর আগে বিগত ৪ বছর ধরে সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার টালবাহানা করেছে। কোভিডের আগে দেশ জুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এই আবহে আইনটি কার্যকর হলেও তা প্রয়োগ করা হয়নি। তবে লোকসভা ভোটের আগে সিএএ বড় হাতিয়ার হতে পারে বিজেপির জন্য।
সিএএ নিয়ে কে কি বলেছেন?
এর আগে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দাবি করেছিলেন, ‘ ৭ দিনের মধ্যে’ সিএএ কার্যকর হবে বাংলা তথা গোটা দেশে। তবে সেই ‘ ৭ দিন’ পার হয়ে গিয়েছে। অবশ্য এর মাঝে শান্তনু দাবি করেছিলেন ‘ভুল করে ৭ দিনের সময়সীমা’ দিয়েছিলেন তিনি। তবে দাবি করেছিলেন, শীঘ্রই সিএএ কার্যকর হবে। পরে এক সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠিত কনক্লেভ তেকে কেন্দ্রীয় স্বরষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের গলাতেও শোনা গিয়েছিল এই একই সুর।
সিএএ নিয়ে তোড়জোড়
এদিকে সম্প্রতি সংবাদসংস্থা এএনআই-এর বরাত দিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সিএএ নিয়ে। তাতে বলা হয়েছে, মার্চের শুরুতেই নাগরিত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হবে দেশে। উল্লেখ্য, সিএএ কার্যকর হলে, তার সবথেকে বেশি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাতেই। এবং বাংলাদেশ লাগোয়া নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় এর প্রভাব আরও বেশি করে পড়তে পারে। বিগত ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব ইস্যুতেই মতুয়া ভোটের সিংহভাগ বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল। আবার সিএএ-র সঙ্গে আধার আতঙ্ক নয়া সংযোজন।
‘সিএএ কার্যকর হবেই’
এদিকে মোদীর জনসভার প্রাক্কালে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বক্তব্য, ‘এনআরসি আমরা করবই। রাম মন্দির নিয়েও অনেক কটাক্ষ হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। আর এবার সিএএ কার্যকর হবে।’
তৃণমূলের হাতিয়ার ভোঁতা করতে বিজেপির পালটা সিএএ
বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলায় আধার নিষ্ক্রিয় হওয়া নিয়ে একটা বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। অনেকেই আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি পেয়েছিলেন ইউআইডিএআই থেকে। সেই থেকেই সিএএ রব উঠতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে মতুয়াদের অনেকের আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ায় ময়দানে নেমেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর নিজে। শুভেন্দু অধিকারীও এই নিয়ে অমিত শাহ এবং অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে কথা বলে দাবি করেছিলেন, রাঁচির অফিসের ভুলের কারণেই এই অবস্থা। তবে তৃণমূল এই ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে। আর তাই তৃণমূলের হাতিয়ার ভোঁতা করতে বিজেপির পালটা হাতিয়ার সিএএ।
কৃষ্ণনগর থেকে কোন বার্তা দেবেন মোদী?
গতকাল হুগলির আরামবাগের জনসভা থেকে তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সন্দেশখালি থেকে দুর্নীতি ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন তিনি। আর আজ মোদীর বাংলা সফরের দ্বিতীয় দিনে বিজেপির জনসভা আছে কৃষ্ণনগরে। সেখান থেকে মোদী কী বার্তা দেন, সেদিকে নজর থাকবে সবার।