Women’s Day 2024: আজও কেন প্রাসঙ্গিক নারী দিবস? প্রশ্নের উত্তর দিতে কলকাতার রাস্তায় সমাজের নানা ক্ষেত্রের নারীদের মিছিল

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসের দুপুরে কলকাতার রাস্তায় মিছিলে সামিল হলেন দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শ্রমজীবী মহিলারা। ১৯০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন দেশের নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন ১৫ হাজার নারী। শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ নির্বিশেষে সে দিন মার্কিন বস্ত্র উৎপাদন কারখানা শ্রমিকরা শোষণের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন। প্রসঙ্গত এই বস্ত্র কারখানার অধিকাংশই নারী শ্রমিক কারণ, শ্রম বাজারে পুরুষের থেকে নারী শ্রমিককে কম বেতন দিলেই চলে। ১৯০৯ সালে আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতৃত্বে প্রথম নারী দিবস পালিত হয়। তবে, আন্তর্জাতিক ভাবে নারী দিবসের সূচনা আরও এক বছর পর। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের শ্রমিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন ‘আন্তর্জাতিক নারী কর্মীদের সম্মেলনে’ প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাবনা করেন। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে সেই সময় থেকেই শুরু আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস।

১১৪ বছর পেরিয়েও আজও কেন প্রাসঙ্গিক নারী দিবস? এই প্রশ্নের উত্তরে নারী আন্দোলনের কর্মী ঝিলম জানিয়েছেন, ‘এই বছর নারী দিবসে আমাদের দাবি, নারীদের সুস্থ কাজের পরিবেশ এবং লিঙ্গবৈষম্যমুক্ত মজুরি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা দাবি করছি, সরকারের ইচ্ছেমতো আধার কার্ড বাতিল করা চলবে না, এনআরসি লাগু করার বিরুদ্ধেও আমরা লাগাতার বলে এসেছি শ্রমজীবী নারীদের পক্ষ থেকে।’ লক্ষীর ভাণ্ডার প্রসঙ্গে ঝিলম জানাচ্ছেন, ‘কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারই নয় কেন্দ্র-রাজ্য, সমস্ত সরকার মিলিয়ে নারীদের অনুদান মুখাপেক্ষী করে দিচ্ছে। অন্যদিকে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। নারী শ্রমিকদের শ্রমঘণ্টা বৃদ্ধি করে আরও বেশি শোষণ করা হচ্ছে। এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধেই আজকে আমাদের এই মিছিল কর্মসূচি। মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের অধিকারের দাবি নিয়েও আমরা আজকের এই মিছিলে হাঁটছি।’

‘দেখো প্রিয়তমা আকাশে উড়ছে প্রীতিলতার নিশান/ স্বামী বা কর্তা শব্দ গুলোকে করে ফেলে খান খান;/ চারকোল রাঙা কপালের ভাঁজে আটকে যাচ্ছে রোজ,/ একুশে মৃত্যু তবুও মেয়েটা আজও করে প্রতিরোধ।’

মিছিলের শুরু আর শেষের ম্যাটাডোর থেকে কখনও স্লোগানিং হচ্ছে, কখনও গান গাইছেন মেয়েরা। হাতের রং-বেরঙের পোস্টারে নারীশ্রমিকদের মজুর বৃদ্ধি থেকে ধর্ষণের প্রতিবাদ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্যালেস্তাইনের নারীদের সমর্থনেও স্লোগান ওঠে এইদিন। এবছর ইউএনও নারী দিবসের মূল থিম করেছে ‘ইনভেস্ট অন ওমেন’ এই বিষয়ে নারী আন্দোলনের কর্মী সুপর্ণা জানাচ্ছেন, ‘ইনভেস্ট অন ওমেন কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নারীকে বাজারের হাতে তুলে দেওয়া। নারী শরীরকে পণ্যায়িত করার বিরোধিতা করছি আমরা, অন্যদিকে নারী শ্রমিকদের সমকাজে সম মজুরির দাবি জানাচ্ছি।’ সুপর্ণা আরও বলেন, ‘বর্তমান ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির পশ্চাৎপদ চিন্তা-ভাবনা এবং শোষণের ফলে আক্রান্ত নারীরা। হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের ক্ষেত্রেই বিগত কয়েক বছরে নারীদের ধর্মীয় শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলার চেষ্টা বেড়েছে।’

ঝাড়গ্রাম থেকে কল্যাণী, হাওড়া-হুগলি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমজীবী নারীরা আজকের দিন এই মিছিলে এসেছিলেন। এই মিছিলে ফেমিনিস্টস ইন রেজিস্টেন্স, শ্রমজীবী নারী মঞ্চ এবং নারী চেতনা এই তিনটি নারী সংগঠনের কর্মীরা এবং ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিয়েছিলেন। মৌলালি যুব কেন্দ্র থেকে মিছিল শুরু হয়ে বউবাজার মোড়ে সভা’র মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এই দিনের কর্মসূচি। সভার বক্তব্যে উঠে আসে দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির উন্মাদনা এবং তার ফলে নারীদের শোষণের কথা। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেশখালিতে জমি লুট এবং নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন নারী শ্রমিকরা। হাউজ কিপিং পেশার সঙ্গে যুক্ত পুষ্প দাস সন্দেশখালির মেয়েদের লড়াইকে কুর্নিশ জানান৷ তিনি বলেন, ‘আরও আগে প্রতিরোধ গড়বার প্রয়োজন ছিল। যে কোনও অন্যায় অত্যাচারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেয়েরা, তাই আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। যে কোনও শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে।’ দেশ-দুনিয়া জুড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে যে মেয়েদের পায়ের তলায় রাখা হয় ঘরে-বাইরে, তারা সমানাধিকারের বার্তা দিয়ে গেলেন এদিনের কর্মসূচি থেকে।