‘‌এটা শাসকের আইনের বদলে আইনের শাসন’‌, সিএএ নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাজ্যপাল

লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে কার্যকর হয়ে গেল সিএএ। এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও দেশে তা কার্যকর হয়েছে ১১ মার্চ সন্ধ্যায়। এই আইনকেই ভাল পদক্ষেপ বলেছেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সোমবার সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ১১ মার্চ থেকে দেশে সিএএ বা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট কার্যকর হল বলে জানানো হয়েছে। সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। সিএএ নিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ্যপাল। তবে গোটা বিষয়টি না পড়ে পদক্ষেপ করবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিকে সিএএ কার্যকর হওয়ায় বঙ্গ–বিজেপি নেতারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন। কারণ এটা দেখিয়ে মতুয়া ভোট টানা যাবে। আর এই কারণে প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসে একটি শব্দও খরচ করেননি মতুয়া অথবা সিএএ নিয়ে। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এই আইন কার্যক হতেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস প্রশংসা করে বলেন, ‘‌আমার মনে হয়, দেশে গণতান্ত্রিক ব্য়বস্থার পক্ষে ভাল পদক্ষেপ।’‌ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সাংসদে পাশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করতেই বিল এখন আইনে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সালে আইন কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কিন্তু করোনাভাইরাস শুরু হয় দেশে। তারপর সাতবার বিধি তৈরির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাই বাস্তবে এই আইন কার্যকর হয়নি। অবশেষে লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশে সিএএ কার্যকর করা হল।

আরও পড়ুন:‌ বহরমপুরে ইউসুফ পাঠানের জন্য বাড়ি খুঁজছে তৃণমূল কংগ্রেস, চাপে পড়েছেন অধীর

অন্যদিকে এদিন কেরল থেকে কলকাতায় ফেরেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর মতে, ‘‌সংসদে বিল পাশ হয়ে গিয়েছিল। এখন যেটা হচ্ছে সেটা বিধি তৈরির হওয়ার পর কার্যকরের কথা ছিল। এটাকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছি। সরকারের খুব ভাল পদক্ষেপ। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার জন্য খুবই জরুরি।’‌ যা জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতে ভারতের এই আইন। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি, খৃস্টান ধর্মাবলম্বী, যাঁরা ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে ভারতে আশ্রয় নেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে এই সিএএ।

এছাড়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে সোমবার জানান, সিএএ দেখিয়ে বাংলার কোনও মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলে আন্দোলন হবে। তিনি বলেন, ‘‌ক্যা দেখিয়ে এনআরসি নিয়ে এসে এখানকার কারও নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে আমরা চুপ থাকব না। নো এনআরসি। এনআরসি মানতেই পারি না। আর ক্যা–এর নাম করে কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে এই চালাকিও আমরা করতে দেব না।’‌ তবে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, ‘‌সিএএ বিধি এখন তৈরি করা হয়েছে। তাতে প্রমাণ হয়, কেন্দ্রে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার রয়েছে। আইনের বাইরে গিয়ে কোনও কাজ করা উচিত নয়। এটা শাসকের আইনের বদলে আইনের শাসন। আমার মনে হয়, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে ভাল পদক্ষেপ। আইন পাশ হয়েছে, বিধি তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক সরকারের আইন মেনে কাজ করা উচিত। সিএএ কী সেটা না জেনেই মন্তব্য করা হচ্ছে। আমার মনে হয় আগে সিএএ কী তা পড়ুন, ভাল করে বুঝুন তারপর কথা বলুন।’‌