উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালকে দায়ী করল রাজ্য, শুনলেন অ্যাটর্নি জেনারেল

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ প্রয়োজন। এই ইস্যু নিয়ে দু’‌দিন ধরে রাজভবনে বৈঠক হয়েছে ৷ সেই বৈঠকে রাজ্যপাল তথা আচার্য, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিক্ষা সচিব মনীশ জৈন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমণি উপস্থিত ছিলেন। দফায় দফায় বৈঠক হলেও রফাসূত্র এখনও অধরাই রয়েছে বলে সূত্রের খবর। আর এই বিষয়ে কোনও পক্ষই কিছু জানায়নি। উপাচার্য জট কাটাতে এসেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আবার রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যপাল নিযুক্ত অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের কথাও শুনেছেন তিনি। রাজ্য–রাজ্যপাল বিবাদ এখানে বহুদিন ধরেই লেগে আছে। সেটা মেটাতেই আসেন অ্যাটর্নি জেনারেল। কিন্তু রাজ্যপালের একতরফা মনোভাবই সমস্যার মূল কারণ বলে রাজ্যের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

এদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি বৈঠক হয়। সেখানে রাজ্যপালের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের সংবর্ধনার আসর বসে। অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের ওই বৈঠক হয়। তারপরই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অ্যাটর্নি জেনারেলকে ‘গভর্নরস অ্যাওয়ার্ড অব এক্সেলেন্স’ দেন। এক লক্ষ টাকার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তবে রাজভবনের বৈঠকে দুটি বিষয় উঠে আসে। এক, সার্চ কমিটি নিয়ে বিলে রাজপালের সম্মতি না দেওয়া। দুই, আইন না মেনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এককভাবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করা। আর তা নিয়েই সংঘাতের সূত্রপাত। এগুলি না করলেই সংঘাত এড়ানো যেত।

আরও পড়ুন:‌ ফেরত দেওয়া জমি চাষযোগ্য করছে রাজ্য সরকার, সন্দেশখালিতে কৃষকদের উন্নয়নে জোর

অন্যদিকে রাজভবন সূত্রে খবর, স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই বৈঠকে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সে কথা জানানো হয়। আর সেই অচলাবস্থা কাটাতে কেমন পদক্ষেপ করা প্রয়োজন সে বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে ওই বৈঠকে। সেই রিপোর্ট আগামী ১৬ এপ্রিল উপাচার্য নিয়োগ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্ট স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তথা রাজ্যপালের অবস্থান দ্রুত জানতে চাওয়ার জেরেই অ্যাটর্নি জেনারেল সর্বোচ্চ আদালতকে তাঁর কলকাতা যাত্রার কথা জানিয়ে দেন। সুতরাং সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এছাড়া এত কিছুর পরও রাজ্যপালের মুখে শোনা যায়, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আচার্যই সব। সুতরাং জটিলতা রয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমণিকে রাজ্যের পক্ষ থেকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘‌আইনি সংশোধনী বিলে সম্মতি দেন না রাজ্যপাল। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করেই এককভাবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করা হচ্ছে। তার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী সমাধান হয় না। উলটে অচলাবস্থা তৈরি হয়। আলোচনা করে কাজ করলে এই অবস্থা এড়ানো যেত।’‌ তবে জিপিও’‌র একটি অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‌যা ঘটে গিয়েছে সে সবই অতীত। সমস্ত মতানৈক্য সরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে একযোগে কাজ করা হবে। বাংলা নতুন ভোর দেখবে।’‌