বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মুসলিমদের উপর শর্ত চাপালেন হিমন্ত, স্বদেশি তকমা পেতে কী করতে হবে?‌

একদিকে দেশজুড়ে সিএএ কার্যকর করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্ক তুঙ্গে তুলেছে। এই সিএএ বেশি প্রভাব ফেলবে বাংলায় বলে মনে করা হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এই আবহে বাংলাভাষী মুসলিমদের বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ প্রথা বন্ধ করতে হবে বলে শর্ত চাপিয়ে দিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর এমন হুঙ্কারে এখন তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে উত্তর–পূর্ব রাজ্যে। এটা না মানলে বাংলাভাষী মুসলিমদের অসমের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। বাংলাভাষী মুসলিমরা অসমে ‘‌মিঞা’‌ হিসাবেই পরিচিত। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের অসমের মূল ভূখণ্ডে থাকার জন্য বিশেষ শর্ত দিয়ে বলেন, ‘‌নিজেদের অসমের অধিবাসী হিসেবে দেখতে হলে অসমীয়া সমাজের কিছু সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং ঐতিহ্য পালন করতে হবে।’‌

এমন হুঙ্কারে এখন তটস্থ হয়ে রয়েছেন একদা বাংলাদেশ থেকে আসা বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। কারণ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একাধিক শর্ত চাপিয়ে দিয়েছেন তাঁদের উপর। যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিবারে দুটির বেশি সন্তান থাকলে অসমের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন বাংলাভাষী মুসলিমরা। বহুবিবাহ প্রথা, নাবালিকার কন্যাদান এসব করা যাবে না বলা হয়েছে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা এই বিষয়ে বলেন, ‘‌অসমের বাসিন্দা হতে গেলে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে না। সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়ানো যাবে না। তাদের শিক্ষিত করে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করুন। মেয়েদের স্কুলে পাঠান। পৈতৃক সম্পত্তির উপর অধিকার আছে মেয়েদেরও। যদি অসমীয়া সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য গ্রহণ করেন তবেই মূলনিবাসী হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হবে।’‌

আরও পড়ুন:‌ এপ্রিল মাসের প্রথমেই তারাপীঠে আসছেন অভিষেক, তৈরি হবে নির্বাচনী স্ট্র‌্যাটেজি

এদিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণা, শর্ত এবং হুঙ্কার সিএএ, এনআরসি’‌র নতুন কদর্য রূপ হিসাবে দেখছেন বাংলাভাষী মুসলিমরা। তবে বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহকে কেউ সমর্থন করছেন না। দুটির বেশি সন্তান হলে মূলনিবাসীর তকমা হারানো নিয়ে অনেকে শঙ্কিত। অসমীয়া সংস্কৃতিকে সম্মান দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মাদ্রাসার পরিবর্তে শিশুদের স্কুলে পাঠানো উচিত বলে তাঁর মত। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‌মুসলিম সম্প্রদায়কে মাদ্রাসার পরিবর্তে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কন্যাদের শিক্ষিত করা এবং পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার দেওয়া উচিত।’‌

অন্যদিকে জম্মু এবং কাশ্মীরের পর অসম মুসলিমদের জনসংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, অসমের মোট জনসংখ্যার নিরিখে ৩৪ শতাংশ মুসলিম। তবে এখানে দুটি ভাগ আছে। এক, বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম ও বাংলাভাষী। দুই, অসমীয়া ভাষায় কথা বলা অসমের মুসলিম। এই দ্বিতীয়টি আসলে অসমের মুসলিম বলে মনে করা হয়। ২০২২ সালে অসম মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে ৪০ লাখ অসমীয়া ভাষী মুসলিমকে স্বদেশি অসমীয়া মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অসমীয়া ভাষী আদিবাসী মুসলিমরা মোট মুসলিম জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ। বাকি ৬৩ শতাংশ বাংলাভাষী মুসলিম। মন্ত্রিসভা পাঁচটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তালিকায় রয়েছে— গোরিয়া, মোরিয়া, জোলাহ, দেশি এবং সৈয়দ অসমীয়া ভাষাভাষীর মানুষ।