ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার মামলায় সিবিআই-এর এফআইআর-এ তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে নাম রয়েছে ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানিরও। উল্লেখ্য, সংসদে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার বিনিময়ে নাকি মহুয়া হিরানন্দানির থেকে ঘুষ নিয়েছিলেন। এই অভিযোগে আগেই সংসদ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন মহুয়া। এরপর লোকপাল এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে বহিষ্কৃত মহুয়াকে ফের কৃষ্ণনগর থেকে লোকসভা ভোটের টিকিট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এরই মাঝে গত সপ্তাহে মহুয়ার বাড়ি, অফিসে সিবিআই হানা দিয়েছিল। এবার জানা গেল, এই মামলায় সিবিআই যে এফআইআর করেছে, তাতে মহুয়ার পাশাপাশি নাম রয়েছে হিরানন্দানিরও। গত ২১ মার্চ এই এফআইআর করা হয়েছিল। (আরও পড়ুন: ১ দশক পর PSC-র মাধ্যমে সরকারি শিক্ষক নিয়োগ বাংলায়, জানুন বেতন কাঠামো, ডিএ-র বিশদ)
আরও পড়ুন: JNU ছাত্র সংসদ ভোটে লালঝড়, সহসভাপতি হলেন রামকৃষ্ণ মিশনে পড়া শিলিগুড়ির তরুণ
উল্লেখ্য, গতবছর বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ধনকুবের আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার জন্য হিরানন্দানির থেকে টাকা নিয়েছিলেন মহুয়া। এদিকে তৃণমূল নেত্রী ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে সাংসদ পোর্টালের লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড তিনি হিরানন্দানিকে দিয়েছিলেন। পরে গত ডিসেম্বরে সংসদের এথিক্স কমিটি মহুয়াকে বহিষ্কার করার প্রস্তাব দেয়। সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে তাঁকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন মহুয়া। এই সবের মাঝেই তাঁকে আবারও লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। (আরও পড়ুন: ভারত গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার, বললেন পাক বিদেশমন্ত্রী, বড় পদক্ষেপের পথে ইসলামাবাদ?)
আরও পড়ুন: ‘মেদিনীপুরেই দাঁড়াতে চেয়েছিলাম, তবে…’, ‘অভিমান ভুলে’ ছক্কা হাঁকালেন দিলীপ
এদিকে গতবছর যখন এই গোটা বিতর্ক প্রকাশ্যে আসে, তখন এক হলফনামায় হিরানন্দানি দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বদনাম করতে আদানি গ্রুপকে নিশানা করেছিলেন মহুয়া। আদানি গোষ্ঠীকে চাপে ফেলার মতো প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়ার জন্য নাকি হিরানন্দানিকে সংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন মহুয়া। এই হলফনামায় আরও চাপে পড়েন মহুয়া। হলফনামা অনুযায়ী, দর্শন হিরানন্দানির দাবি, আদানি গোষ্ঠীকে চাপে ফেলার মতো প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাঁকে সংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। পরিবর্তে তাঁর থেকে মহুয়া বিলাসবহুল জিনিসপত্র নিতেন। হিরানন্দানি দাবি করেছেন, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করার পথ বেছে নেন মহুয়া। কিন্তু স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে নীতি সংক্রান্ত বিষয়, প্রশাসনিক বিষয়ে মোদীকে আক্রমণের সুযোগ পাননি মহুয়া। সেজন্য আদানি গোষ্ঠীর মাধ্যমে মহুয়া প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণের পন্থা বেছে নেন।
হিরানন্দানি দাবি করেছেন, ২০১৭ সালে বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মহুয়ার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল তাঁর। সেইসময় বিধায়ক ছিলেন মহুয়া। ২০১৯ সালে সাংসদ হন মহুয়া। সেই সময় ব্যবসায়িক ‘দ্বন্দ্ব’ চলছিল আদানি এবং হিরানন্দনিদের মধ্যে। দর্শনের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি না করে আদানি গোষ্ঠীর ধর্মা এলএনজির সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইন্ডিয়ান অয়েল। এই আবহে আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্নমালা তৈরি কে দেওয়ার জন্য দর্শনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মহুয়া। এর জন্য তাঁকে সংসদের লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন মহুয়া। হলফনামায় দাবি কর হয়েছিল, ক্রমেই মহুয়ার সঙ্গে হিরানন্দনির সম্পর্ক ভালো হতে থাকে। পরে তাঁর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করতে থাকেন মহুয়া। তাঁর ওপর নাকি মহুয়া চাপও সৃষ্টি করেছিলেন। এই আবহে মহুয়ার কথা মতো চলতে বাধ্য হয়েছিলেন।