হাসপাতালের মধ্যেই ওঝাগিরি, ভূত ছাড়ানোর নামে বেধড়ক মারধর, মৃত্যু আদিবাসী মহিলার

হাসপাতালের মধ্যেই চলল ওঝাগিরি। হাসপাতালে ভরতি থাকা আদিবাসী মহিলাকে ঝাড়ফুঁকের নামে চলল বেধড়ক মারধর। শেষপর্যন্ত মৃত্যু হল ওই মহিলার। ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া জেলা হাসপাতাল।  অভিযুক্ত ওঝা আবার ওই হাসপাতালেরই একজন স্বাস্থ্যকর্মী। এই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সুকান্ত নন্দী নামে ওই অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এমন ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে এলাকায়। তাছাড়া হাসপাতালের মধ্যে ওঝার এমন কাণ্ডে প্রশ্ন উঠেছে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে।

আরও পড়ুনঃ সাপে কাটা রোগীকে ঝাড়ফুঁক না করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন ওঝা

জানা গিয়েছে, মৃত মহিলার নাম সবিতা সিং সর্দার (৩৬) । তিনি পুরুলিয়ার মানবাজার থানার কদমা গ্রামের বাসিন্দা। বিয়ের পর সবিতা স্বামী ও দুই সন্তানের সঙ্গে বাপের বাড়িতে থাকতেন। পুলিশ এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন সবিতা। রোগ না সারায় তাঁকে গত রবিবার পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। কিন্তু, তারপরেও তিনি কিছুতেই সুস্থ হচ্ছিলেন না।

পরিবারের অভিযোগ, ওই হাসপাতালেরই অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী হলে সুকান্ত নন্দী। দোলের দিন বিকেলে ওই স্বাস্থ্যকর্মী সুকান্ত নন্দী ডিউটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে যান। সেখানে গিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা ওই আদিবাসী মহিলাকে সারিয়ে দেবেন বলে দাবি করে। তার কথায় রাজি হয়ে যান পরিবারের সদস্যরা এরপরেই ঘটে অঘটন । 

অভিযোগ, সুকান্ত নন্দী ঝাড়ফুঁক করার নামে সবিতাকে বেধড়ক মারধর করে। তা দেখে পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন ওঝা দাবি করে সবিতাকে ভূতে ধরেছে। তাই ভূতকে তাড়ানোর জন্য সবিতাকে মারধর করার প্রয়োজন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন সবিতা। তারওপর ওঝার মারধরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি  এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই মৃত্যু হয় ওই আদিবাসী মহিলার।

এই ঘটনার পরেই স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃত মহিলার পরিবারের সদস্যরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই স্বাস্থ্যকর্মী সুকান্ত নন্দীকে গ্রেফতার করে। আজ মঙ্গলবার অভিযুক্তকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তার ২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃত মহিলার পরিবারের সদস্যরা ।মারধরের কথা স্বীকার করে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে।