Thakurnagar BJP Leader on CAA: ‘মানুষ একটু ভয় পাচ্ছে, কিন্তু…’, সিএএ নিয়ে অকপট স্বীকারোক্তি মতুয়া গড়ের BJP নেতা

সিএএ নিয়ে শঙ্কিত বহু পশ্চিমবঙ্গবাসী। সিএএ বিধি কার্যকর হওয়ার আগে বহু মানুষের আধার কার্ড ‘সাসপেন্ড’ হয়েছিল। এরপর সিএএ বিধি প্রকাশের পর সেই শঙ্কা আরও বেড়েছে। মনে জন্মেছে নতুন সংশয়। যে মতুয়া গড় ঠাকুরনগরে সিএএ নিয়ে উল্লাস দেখা গিয়েছিল, এখন সেখানকার বিজেপি নেতাই অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছেন, মানুষের মনে ভয় আছে সিএএ নিয়ে। এই আবহে তাঁর দাবি, বিজেপি নেতৃত্ব ভবিষ্যতে এই বিধি আরও সরল করবে। সিএএ নিয়ে মানুষের মনে যে সংশয় তৈরি হয়েছে তা নিয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার এসসি মোর্চার সহসভাপতি নন্দদুলাল বালা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, ‘সিএএ নিয়ে যেটা সত্যি কথা, সেটা হচ্ছে, যে মানুষরা ৩০-৪০ বছর আগে এসেছে, তাদের অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশের একটা-দুটো নথি চাওয়া হচ্ছে, সেটা মানুষ জোগাড় করতে পারছে না।’ (আরও পড়ুন: ‘মুসলিমরাও মতুয়া কার্ড করাচ্ছে’, ‘নতুন ভক্ত’ নিয়ে বিস্ফোরক ঠাকুরবাড়ির অনুগামীরা)

আরও পড়ুন: আশঙ্কায় পরিণত উল্লাস, ‘বাংলাদেশের নথি দিতে পারব না’, CAA নিয়ে কী বলছে ঠাকুরনগর?

এরপর অবশ্য তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের নেতৃত্ব আশ্বস্ত করেছে এই সমস্যা মিটবে। বিজেপি ছাড়া উদ্বাস্তু বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা কোনও দল বলেনি। না সিপিএম, কংগ্রেস বা তৃণমূল ভাবেনি। একমাত্র বিজেপি সরকার এটা নিয়ে বদধপরিকর ছিল। সামান্য যে সমস্যা রয়েছে, সেটা মিটিয়ে ফেলা হবে। এখানে যেটা হয়েছে, আপনি যখনই ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছেন, তার মানে আপনি এখানকার নাগরিক নন। আপনি বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে এসেছেন। এখন সরকার চাইছে যে আপনি যে অমুক দেশের লোক ছিলেন, সেটার নথি জমা করা হোক। সরকার যেটা চাইছে সেটা ন্যায্য। তবে যেহেতু অনেক উদ্বাস্তু হিন্দু রাতের অন্ধকারে কাঁটাতারের নীচ দিয়ে এখানে পালিয়ে এসেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সব নথি জোগাড় করা অসম্ভব। আমরা আশা করি, এই সামান্য সংশোধন বিজেপি সরকার করবে। অমিত শাহজি, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আমাদের এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। এই সিএএ-র আরও সরলীকরণ হবে। সব উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙালিকে নাগরিকত্ব আমরা দেব।’

আরও পড়ুন: দুই ফুলের মাঝে ‘ফেঁসে’ বনগাঁ, CAA সংশয়ের মাঝে লোকসভা ভোটে পাল্লা ভারী কার?

বিজেপির এসসি মোর্চার নেতা আরও বলেন, ‘এটা বিশ্বাস রাখতে হবে, যে দলটা এত লড়াই করেছে, তাদের জন্যে বিজেপি কাজ করবে। ওই তিন দেশ থেকে সেখানকার যে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারি হয়ে চলে এসেছে, এই আইনের মাধ্যমে তাদের মাথায় ছাতা হয়ে দাঁড়াবে। এই আইনে যদি এখানকার সংখ্যালঘুদের কথা উল্লেখ থাকত তাহলে কোনও দল এর বিরোধিতা করত না। কিন্তু বিজেপি কাউকে এখান থেকে তাড়াবে না। সব বাঙালি হিন্দুকে বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব দেবে।

এরপর সেই বিজেপি নেতা অকপটে স্বীকার করেন, ‘সিএএ নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে, মানুষ একটু ভয় পাচ্ছে। এখন সরকার তো একটা পদ্ধতি মেনে চলবে।’ এরপর তিনি বলেন, ‘সরকারকে তো দেখতে হবে যে কাকে নাগরিকত্ব দিচ্ছি। তবে আমাদের দাবি, ২০১৪ সালের আগে ভারেতের কোনও নথি যদি কারও কাছে থাকে, আর সে যদি হিন্দু হয়, তাহলেই তাকে নাগরিকত্ব দিতে হবে। নয়ত পশ্চিমবঙ্গের ডেমোগ্রাফি বদলে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করে যা বুঝেছি, আমাদের দেশের পশ্চিমের রাজ্যগুলির যে নেতারা আছেন, তাদের পাকিস্তানি নিয়ে দুর্বলতা আছে, তবে বাঙালিদের ওপর কোনও দুর্বলতা ছিল না। এখন বঙ্গ বিজেপি শক্তিশালী হওয়াতে সেটা এখন নেতাদের কানে যাচ্ছে।’ এরপর তিনি দাবি করেন, ‘শুধু যদি সিএএ-র সরলীকরণ করা হত, তাহলে শান্তুনু ঠাকুর এখানে দ্বিগুণ ভোটে জিততেন। এখন তো যে মানুষ আবেদন করতে যাবেন, সে নিজেই দ্বিধায় পড়বে। আর সরলীকরণ করলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে সিএএ-তে আবেদন করতে।’

এদিকে সিএএ ইস্যুতে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বেশ আক্রমণাত্মক। এই ইস্যুতে বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক সুরজিৎ কুমার বিশ্বাস হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন সিএএ আসে, তখন মানুষ ভেবেছিল, এটা বুঝি নিঃশর্ত। যখন বিধি কার্যকর করা হল, তখন দেখা যাচ্ছে, এতে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি কেউই দিতে পারবে না। এই এলাকার যত সাইবার ক্যাফে আছে, সেখানে খোঁজ নিয়ে আমরা জেনেছি, একজন মানুষও সিএএ-তে আবেদন করতে যাননি সেখানে। এখনকার মানুষ ভীত। বাঙালিদের তাড়ানোর যে নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের আছে, অসমে তা দেখা গিয়েছে। এখানেও যে সেটা হতে পারে, সেই শঙ্কায় ভুগছে সবাই। আপনার ১এ ফর্মে বাংলাদেশের নথি দিতে হবে। পরে ১বি ফর্মে ভারতে পাওয়া নথি জমা দিতে হবে। যদি শুনানিতে ১এ ফর্মের শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে ১বি-তে জমা দেওয়া যাবতীয় নথি অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। তার মানেই বেনাগরিক হয়ে যাবেন। বিজেপি, মতুয়ারা এখানে আশাবাদী ছিল। তবে এই বিধি অবাস্তব। আবার অমিত শাহ দাবি করেছেন, এই বিধি বদল হতে পারে। তাহলে নির্বাচনের পরে আবার পরিবর্তন করা হতে পারে। এই বিধিতে ১৯৮৭ সালের পরে এদেশে আসা সবারই বেনাগরিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে এই সিএএ-তে। আর ২০০৪ সালের পর যাঁরা ওপার থেকে এখানে এসেছেন, তাঁদের জন্য আরও কঠিন সব নিয়ম আছে। এগুলো সব জনস্বার্থ বিরোধী। মতুয়া বিরোধী। তবে আমরা কাউকে বেনাগরিক হতে দেব না। ২০১৯ সালে ভাওঁতা দিয়ে বিজেপি ভোট পেয়েছিল। এখন শান্তুনু ঠাকুরের গলায় ঠেকে গিয়েছে। ও এখন বিজেপি প্রার্থী। তাই তিনি না ফেলতে পারছেন গিলতে, না পারছে উগরে দিতে।’

এদিকে সিএএ ইস্যুতে স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী শুক্লা বিশ্বাস দাবি করেন, সিটিজেনশিপ কার্ড যদি দিতে হয়, তাহলে তা সবাইকে নিঃশর্ত ভাবে দিতে হবে। তাঁর নিজের বাবা ওপার থেকে এপারে এসেছেন বলে জানান শুক্লাদেবী। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, মানুষ সিএএ নিয়ে একদমই দ্বিধাগ্রস্ত নয়। মানুষকে দ্বিধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি নিজে প্রথমে ভেবেছিলাম, তাহলে কি সত্যি আমাকেও নাগরিকত্বের জন্যে আবেদন করতে হবে? কিন্তু তারপর মনে হয়, আমি কেন আবেদন করব? আমি ভোট দিচ্ছি। আমার আধার কার্ড আছে, প্যান কার্ড আছে। আমার বাড়ির দলিল রয়েছে। আমি এখানে পড়াশোনা করেছি। আমি দেশের সর্বোচ্চ অধিকার, ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি। তারপরে আবার কেন আমি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাব। আমার ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন এখানকার সব জনপ্রতিনিধি। আমাদের ভোটেই একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাহলে আমি যদি আজ অবৈধ হয়ে থাকি বা শরণার্থী হই, তাহলে তো এখানকার সাংসদ বা দেশের প্রধানমন্ত্রীও অবৈধ। আমি একজন নমশূদ্র বাড়ির মেয়ে। আমি তো ভট্টাচার্য হয়ে নমশূদ্র সার্টিফিকেটের জন্যে আবেদন করতে পারি না। আমি যদি সিএএ-তে আবেদন করি, তাহলে তো আমি নিজেই বলে দিচ্ছি যে আমি এই দেশের নাগরিক নই। এটা তো তাহলে দ্বৈতসত্ত্বা হয়ে গেল। আমি এতদিন ধরে ভারতবর্ষে আছি। আমার বাবা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। বা তখন যেটা পূর্ব পাকিস্তান ছিল। কিন্তু আমি তো জন্মসূত্রে রয়েছি। তাহলে আমি কেন আবার আবেদন করব?’

তাঁর কথায়, ‘আগে বিজেপিকে এটা স্পষ্ট করতে হবে যে কারা নাগরিক, আর কারা শরণার্থী। যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, তারা নাকি নাগরিক নয়। এটা তো চরম হাস্যকর কথা। আমার ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশের নিয়মকানুন, আইন বদলে দিচ্ছেন। এখন বলছেন, আমি নাগরিক নই! ভোটের মুখে বিজেপি ভেবেছিল, এটা তাদের জন্য দারুণ একটা হাতিয়ার হবে। কিন্তু এটা যে বুমেরাং হয়ে যাবে, এটা ওরা নিজেরাও বুঝতে পারেনি। আজকে মানুষ সচেতন হয়েছেন। এবারের ভোট নিজেদের সত্ত্ব রক্ষার জন্যে দিতে হবে। আমরাও চাই, আমাদের সিটিজেনশিপ কার্ড থাকুক। আমার বাবা, শ্বশুরমশাইয়ের আছে। আমরা চাই, আমাদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে।’