ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেলের আলাদা লেন

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান দুই রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে এই দুই রুটে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে কাজ করছে পুলিশ। ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন তারা। এরমধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক বা ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, এক্সপ্রেসওয়েতে এবার ঈদের আগে আলাদা লেনে মোটরসাইকেল চলাচল করবে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে মাঠে থাকবে পুলিশ।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১৩ কিলোমিটার মুন্সীগঞ্জ জেলার আওতাধীন। এই অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত দুই শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। মহাসড়কে তিন চাকার যান নিয়ন্ত্রণে তদারকি করবে পুলিশ। সেই সঙ্গে সড়কের কোথাও যেন পণ্যবাহী ট্রাক কিংবা যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে না রাখা হয় সেটিও পুলিশ সদস্যরা তদারকি করবেন।

সেই সঙ্গে এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচলে আলাদা লেন ঠিক করে দিচ্ছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই এই এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচল বহু গুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার তথ্যও পাওয়া যায়। এবার ঈদের আগে দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে দুটি মহাসড়ক ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অংশ রয়েছে। এবার ঈদে আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভালো। দুই মহাসড়কে দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। তারা এখানে সার্বক্ষণিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সবকিছু তদারকি করবেন এবং জনগণকে সহযোগিতা করবেন। তবে ঢাকা মাওয়া মহাসড়কে মোটরসাইকেলের জন্য স্পেশাল লাইন থাকবে। মোটরসাইকেলগুলো যেন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করতে না পারে সে ব্যবস্থা থাকবে। জনগণের যাত্রা যেন নির্বিঘ্ন হয় সেজন্য যেকোনও দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে আমরা সহযোগিতা করব এবং দুই মহাসড়কে দুটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে জনসাধারণ ফোন করে যে কোন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেলের আলাদা লেন মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগে ও পরে মোট ছয় দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে এবার ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা যেন সুখ শুভ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হতে পারে সে বিষয়ে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়ায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যেখানে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে সড়কের পাশে দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমরা মহাসড়কের পাশে বেশ কিছু দোকানপাট অপসারণ করেছি।

তিনি আরও জানান ঈদের আগে ও পরে মোট ছয় দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। সড়কের দুইপাশে যেন গাড়ী পার্কিং না করতে পারে তার জন্য সকলকে অবহিত করা হচ্ছে এবং আমরা এই বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবো। তারপরও যদি কেউ মহাসড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নেই ফেরি পারাপারের ভোগান্তি

একসময় শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এখন আর সেই চিত্র দেখা যায় না শিমুলিয়া ঘাটে। ভোগান্তি ছাড়াই মুহূর্তেই সেতু দিয়ে প্রমত্ত পদ্মা পাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে সন্তুষ্ট দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। এই রুটে দীর্ঘদিন চলাচল করেন শরিয়তপুরের বাসিন্দা মো. আকাশ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আর ফেরিতে ওঠেননি তিনি। তার কথায়, ‘ফেরি পারাপারের ব্যাপার আর নেই। এখন নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারি। আগে যে ভোগান্তি ছিল, সেই তুলনায় এখন কিছুই না। বিশেষ করে ঘাটে আগে যে চাঁদাবাজির বিষয়গুলো ছিল, সেইগুলো থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে সাধারণ মানুষ।’

ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার যাত্রী সুরুজ মিয়া বলেন, ‘আসলে বিগত দিনগুলোতে মানুষ শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে যেভাবে পারাপার হতো— আমরা দেখেছি তখন যেই ভোগান্তিটা ছিল, এখন আর সেটা নেই। শিমুলিয়া ঘাটে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতো, সহজে পাড় হতে পারতো না। এমনও দিন গিয়েছে শিমুলিয়া ঘাটেই ঈদ করতে হয়েছে। তবে এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মাওয়া থেকে সেতু পার হতে ছয় থেকে সাত মিনিট সময় লাগে। আর বাড়িতে পৌঁছাতেও তেমন সময় লাগে না। এই বছর ঈদে মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি যেতে পারবে।

সড়কে বর্তমান চিত্র নিয়ে সন্তুষ্ট যাত্রী কোনও যানজট নেই আর কোনও গেদারিংও নেই। যে বাসে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছি বাসটি কোথাও ব্রেক করতে হয়নি ঢাকা থেকে মাওয়া আসতে সময় লেগেছে মাত্র ২০ মিনিট। সড়কের যে অবস্থা মাওয়া থেকে বরিশাল যেতে হয়তো আর ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগবে।

সড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগ

ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ পারাপারের ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহিত করছেন তারা যেন ট্রাফিক রুলস মেনে রাস্তা পারাপার হয়।

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আসলেই গত বছর বা এই বছর আমরা এই সড়কে চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ পাইনি। আমরা চেষ্টা করছি এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার। রাস্তা পারাপারে মানুষকে সচেতন করছি ট্রাফিক মেনে চলতে। যেহেতু ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে সেজন্য সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা চাই সবাই যেন ট্রাফিক নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপার হয়। আর ট্রাফিক নিয়ম মেনে চললে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবেন। সকলেই সুশৃঙ্খলভাবে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারবে। আমাদের প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

তবে মুন্সীগঞ্জে নিমতলীসহ অন্তত তিনটি পয়েন্টে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে যানবাহনের চালকদের।

শরিয়তপুর এক্সপ্রেস এর চালক জাকির মুন্সী বলেন, ‘এখন যাত্রী সংকট আছে। সেই তুলনায় গাড়ি অনেক বেশি। যাত্রীরা এখন নিরিবিলি যেতে পারছে। সড়কে যানজট না থাকলেও চাঁদা দিতে হয় কয়েকটি স্থানে। প্রতি টিপে ১০০ টাকা দিতে হয় ঢাকার পোস্তগোলা ও সিরাজদিখানের নিমতলী এলাকায়। তবে ঈদের তিন-চার দিন আগে যাত্রীর চাপ বাড়বে। তবে যাত্রীর চাপ বাড়লেও গাড়ি বেশি থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ বাড়ি ফিরতে পারবে বলে মনে করছেন এই চালক।

খুলনাগামী দোলন পরিবহনের চালক ইউসুফ বেপারী জানান, গাড়ি নিয়ে বের হলেই চাঁদা দিতে হয় প্রথম রোজা থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার টাকাও ঘরে নিতে পারিনি। এই চাঁদাবাজি হয় ঢাকার বাবুবাজার ও সিরাজদিখানের নিমতলা এক্সপ্রেসওয়েতে। আর চাঁদা না দিলে বাসের গ্লাস ভাংচুর করে পরিবহন শ্রমিকরা।

মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, ‘সিরাজদিখানের নিমতলী সুপার হাইওয়ে, এখানে গাড়ি থামে না। সিরাজদিখানের নিমতলী এলাকায় চাঁদাবাজির বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এইরকম কোনও বিষয় জানা নেই। তবে যদি হাইওয়েতে কোন চাঁদাবাজি হয় তাহলে আমরা বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখবো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। কারা এই বিষয়টির সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই পুলিশের কর্মকর্তা।