Does Food Habit Cause Most Diseases Of One’s Life Know From Expert In Bengali

কলকাতা: ‘খাই খাই কর কেন, এস বস আহারে- খাওয়াব আজব খাওয়া/ ভোজ কয় যাহারে।/যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে/জড় করে আনি সব, -থাক সেই আশাতে।’ সুকুমার রায়ের এই কবিতার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। ‘খাই খাই’ কবিতার এই পঙক্তিতেই রয়েছে বাঙালির রসনাতৃপ্তির আকাঙ্খা। আর বাঙালির ভাষার সব খাওয়া জড়ো করলে ঠিক কেমন দাঁড়ায় তার পরিস্থিতি ? – প্রথমে লাইনেই লেখা রয়েছে –  আজব খাওয়া! আধুনিক জীবনযাপনের জেরে এখন খাওয়াদাওয়া কি এমনই আজব পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে ? বিশ্ব স্বাস্থ্য় দিবসের প্রাক্কালে এই বিষয়ে কী মত বিভিন্ন হাসপাতালের অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ানদের ? বিশদে শুনল এবিপি লাইভ বাংলা।

কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষেই পালন করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রোগগুলি নিয়ে নিয়মিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ২০২০ সালের একটি পরিসংখ্যান বলছে, এই তালিকায় সর্বোচ্চ দশটি রোগ হল –

  • ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ অর্থাৎ হার্টের একটি বিশেষ সমস্যা
  • স্ট্রোক
  • সিওপিডি
  • শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ
  • শিশুদের নানা রোগ
  • ফুসফুসের বিবিধ ক্যানসার
  • অ্যালঝাইমার্স ও ডিমেনশিয়া
  • ডাইরিয়া
  • ডায়াবেটিস
  • কিডনির সমস্যা। 

এই রোগগুলির মধ্যে অধিকাংশ রোগই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জেরে হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর তাই খাবারের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না কোনও মতেই।

খাবারই কারণ ? (ছবি সৌজন্য – ফ্রিপিক)

ছোট থেকেই আসল শুরু

সল্টলেক মণিপাল হাসপাতালের চিফ ডায়েটিশিয়ান চিকিৎসক ইন্দ্রাণী ঘোষ এবিপি লাইভ বাংলাকে বললেন, ছোট থেকেই একজন শিশুর মধ্যে ভাল খাদ্যাভাস গড়ে তোলা জরুরি। কারণ ছোট থেকে তাকে যা খাওয়ানো হবে, সেদিকেই তার ঝোঁক বাড়বে। আর এখন মুখরোচক ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুডের স্বাদ একবার পেলে অন্য খাবার মুখে রোচে না ছোটদের। ফলে ছোট থেকেই ওবেসিটির সমস্যা দেখা দেয়। তা থেকে আরও নানা রোগের আশঙ্কা বাড়ে। 

খাবার থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

ছোটবেলার খাদ্যাভাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনটাই এবিপি লাইভ বাংলাকে জানালেন আইএলএস হাসপাতালের পুষ্টিবিদ চিকিৎসক সোনম গুপ্ত। তাঁর কথায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলে দেয় ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে। ছোট থেকেই যদি শিশুদের খাবার খাওয়ার অভ্যাস অন্যরকম হয়, তবে স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়বেই। ছোট থেকে প্যাকেজড খাবার, ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে খনিজ পদার্থসহ যে পুষ্টিগুণ বেশি দরকার, সেগুলি ঠিকমতো পায় না শিশুরা। যা বৃদ্ধির পথে বাধার কারণ হয়। বর্তমানে তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সমস্যাও তাই বেশি দেখা যাচ্ছে। যা সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যেত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে ? (ছবি সৌজন্য - ফ্রিপিক)
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে ? (ছবি সৌজন্য – ফ্রিপিক)

বাড়ছে নানা রোগের ঝুঁকি

এখন কমবয়সীদের মধ্যে ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কোল্ড ড্রিঙ্কস, পিৎজা, বার্গারজাতীয় খাবার খাওয়ার জেরে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মাত্র ১৪, ১৫ বছর বয়সিদের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার জেরে জীবনযাপনে ধরনই বদলে যাচ্ছে অনেকটা।

আঙুলের ডগায় পছন্দের খাবার

এখন অনলাইন ফুড ডেলিভারির অ্যাপে অর্ডার দিলেই খাবার চলে আসে। এর ফলে পছন্দমতো খাবার হাতের কাছে পাওয়া আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। যা ওবেসিটিসহ নানা রোগে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে জানালেন চিকিৎসক সোনম গুপ্ত

ব্যালান্সড ডায়েট নয় বলেই…

চিকিৎসক ইন্দ্রাণী ঘোষ জানালেন ব্য়ালান্সড ডায়েটের কথা। অর্থাৎ খাবারের মধ্য়ে সবধরনের পুষ্টি নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকবে। কোনও একধরনের পুষ্টি বেশি থাকবে এমনটা হবে না। শরীরের যতটা প্রয়োজন তার থেকে বেশি থাকবে না। 

এখনকার দিনে বেশিরভাগ মানুষ বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটজাতীয় খাবার খান। তুলনায় সেই পরিমাণে প্রোটিন ও ফাইবার খান না। এছাড়াও, শাকসবজি, ফলমূল কম খান। এর জেরেই শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। জলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ভাল। কিন্তু ঠান্ডা পানীয় যেমন কোল্ডড্রিঙ্কসে অতিরিক্ত চিনি থাকে। পাশাপাশি ওগুলি কার্বনেটেড ওয়াটার। যা শরীরের জন্য একেবারেই ভাল নয়। তাই এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

খাবারের পাশাপাশি জল

খাবারের পাশাপাশি জল খাওয়াকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক ইন্দ্রাণী ঘোষ। তাঁর কথায়, প্রতি কুড়ি কেজি ওজনের জন্য এক লিটার জলের প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে দিনে ৩-৪ লিটার জল প্রয়োজন হয় আমাদের। তবে শুধু যে খাবার দোষী তা নয়, পাশাপাশি জীবনযাপনের বেশ কিছু সমস্যাও এর জন্য দায়ী। নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, শারীরিক সক্রিয়তা একেবারে না থাকার জেরেও ওবেসিটির সমস্যা বাড়ে। আর ওবেসিটি থাকলে তার থেকে সুগার, প্রেশার, লিভারের রোগ, হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল (ছবি সৌজন্য - ফ্রিপিক)
বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল (ছবি সৌজন্য – ফ্রিপিক)

ঘন ঘন খিদে পায়… কী করব ?

এই ক্ষেত্রে ডায়েটে বদল আনা জরুরি। কার্বোহাইড্রেটের বদলে ফাইবারজাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। এছাড়াও, পাতে রাখতে হবে খনিজ পদার্থ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। এই ধরনের খাবার পেট অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখে। ফলে বেশি খিদে পাবে না। আবার খাওয়ার ইচ্ছেও পূর্ণ হবে। 

যেকোনও খাবার কেনার আগে…

সচেতন হতে হবে সবদিক থেকেই। এখন বাজারে প্রচুর খাবার পাওয়া যায়। তার মানেই এটি নয় যা পছন্দ হয়, তাই খাব। বরং খাবার খাওয়ার আগে যদি একটু পিছনের লেবেলটা দেখে নেওয়া যায়, তাহলে অনেক বিপদ এড়ানো যায়। ওই লেবেলে কোন খাবারে কতটা ফ্যাট, ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, তা লেখা থাকে। ফলে খাবার খাওয়ার সময় শরীরের কিছুটা খেয়াল রাখা যায়।

‘মাই হেলথ, মাই রাইটস’

নারায়ণা হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ান পদ্মজা নন্দী এবিপি লাইভ বাংলাকে জানাচ্ছেন, এই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের ভাবনা বা থিম ‘মাই হেলথ, মাই রাইটস।’ ‘মাই হেলথ’-এর মধ্যেই পড়ছে খাবারের পছন্দ-অপছন্দ। জীবনের শুরুতে খাবার হিসেবে থাকে মায়ের দুধ, আবার জীবনের শেষ পর্যায়েও থাকে জল। ফলে এক দিক থেকে জীবন খাবারে শুরু হয়, খাবারে শেষ হয়। কিন্তু এই খাবার থেকেই বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। বর্তমান সময়ে আধুনিক জীবনযাপনের জেরে নানাধরনের খাবার আমাদের খাদ্যতালিকায়। ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড ও প্রসেসড ফুড খাওয়ার জেরে বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বেশ কিছু রোগের। যেমন –

  • ওবেসিটি
  • ডায়াবেটিস
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • হার্টের সমস্যা
  • কিডনির সমস্যা
  • এমনকি শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ছে।

খাবারের মূল তিনটি দিক

  • জীবন যতটা দামি, ঠিক ততটাই খাবারের চয়েস। কোন খাবার খাচ্ছি না খাচ্ছি, তা-ই ঠিক করে দেবে আমাদের জীবনধারণের পদ্ধতি কেমন হবে।
  • একটি খাবার একদিকে যেমন ভাল, তেমনই অন্যদিকে খারাপ হতে পারে। যেমন ওজন কমানোর জন্য এখন অনেকে হাই প্রোটিন ডায়েটে ভরসা রাখেন। এতে সমস্যা হতে পারে শরীরে। বিশেষত কিডনির সমস্যা। যা সঠিক সময়ে বোঝাও যায় না। তাই নিজেকে নীরোগ রাখা জরুরি।
  • সঠিক সময় খাবার খাওয়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে তুলে ধরলেন ডায়েটিশিয়ান পদ্মজা নন্দী। তাঁর কথায়, খাবার খাওয়ার সময় মেনে চলা খুব জরুরি। ভাল খাবার বলেই যখন ইচ্ছে খাওয়া যায় না। এতে লাভের বদলে ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।

  • সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার (ছবি সৌজন্য - ফ্রিপিক)
    সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার (ছবি সৌজন্য – ফ্রিপিক)

শুধু খাওয়াদাওয়া দোষী নয়

অন্যদিকে,  মুকুন্দপুর নারায়না হেলথ আর এন টেগোর হাসপাতালের চিকিৎসক দীপা মিশ্র এবিপি লাইভ বাংলাকে বললেন নিজের সম্পর্কে সচেতনতা নিয়ে। ডিজিটাল যুগে সমস্ত তথ্য হাতের কাছে থাকে। কিন্তু তা থাকলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থেকেই যাচ্ছে। সচেতনতা এলে ওবেসিটির সমস্য়া অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে শুধু খাওয়াদাওয়া নয়, আরও কিছু বিষয় ইন্ধন জোগাচ্ছে। সারা দিন বসে কাজ করা, রাতে দেরি করে ঘুমোনো, সকালে দেরি করে ওঠা, প্রচন্ড স্ট্রেস বেড়ে যাওয়ার কারণেও ওবেসিটি হতে পারে। এর পাশাপাশি শরীরচর্চা করেন না অনেকে। যার ফলে ওবেসিটি আর তার থেকে ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনির সমস্যা বাড়ছে। 

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

রোগ গুরুতর পর্যায়ে না গেলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যান না। যার ফলে ক্রনিক রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা তাই জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। পরিবারে বাবা-মা বা অন্য আত্মীয়রা যদি এমন কোনও রোগে ভোগেন, তাহলে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো দরকার।  এতে রোগ বাড়াবাড়ি হওয়ার আগে ধরা পড়ে।

ডিসক্লেইমার: লেখায় উল্লেখিত দাবি বা পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। এটি মেনে চলার আগে অবশ্যই সরাসরি বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আপনার পছন্দের খবর এবার হোয়াটসঅ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে।

আরও পড়ুন – Health News: গায়ের নানা জায়গায় ব্যথাহীন টিউমার, ক্যানসার কি না বোঝার উপায় ?

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator