‘আমি আমার স্ত্রীকে ছুরি মেরেছি’‌, লালবাজারে ফোন করলেন সিঁথির কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী

লালবাজারের কন্ট্রোল রুমের ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটি এসেছিল সিঁথি এলাকা থেকে। আর ফোনটি করেন একজন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। লালবাজারের যে অফিসার ফোনটি ধরেছিলেন তখন তাঁর কান গরম হয়ে উঠেছিল। কারণ উল্টো দিকের ব্যক্তিটি নিজের নাম–পরিচয় দিয়ে নিজের স্ত্রীকে ছুরি মারার কথা জানাচ্ছেন। এমনকী পুলিশকেই ডাকছেন। এমনটা হতে পারে শনিবারের বারবেলায় তা কল্পনাও করতে পারেননি পুলিশ কর্তারা। এই ফোন পেয়ে ছুটলেন পুলিশ অফিসাররা। নিজেদের চোখেই দেখলেন রক্তারক্তি কাণ্ড।

এদিকে ১০০ ডায়ালে ওই ব্যক্তি ফোন করে যা বলেছেন তাতে সিঁথি এলাকায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। মাত্র সাত মিনিটে সিঁথির ওই বাড়িতে পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের টিম। আর দেখতে পান বিছানার উপর পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত গৃহবধূ। আর রক্তমাখা ছুরির পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর স্বামী। তিনি কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির স্থায়ী কর্মী। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। সিঁথি এলাকার কোয়ার্টার থেকে জখম বধূকে উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। আটক করা হয় বধূর স্বামীকে। পুলিশের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়নি। তাই আহত ও অভিযুক্তের নাম গোপন রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন:‌ তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল পিডিপি, ভূস্বর্গে জোট অধরা, মেহবুবা অনন্তনাগে লড়বেন 

অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই গৃহবধূ ছুরির আঘাতের পরও বেঁচে আছেন। তবে চিকিৎসাধীন। সিঁথি থানা এলাকার এই কোয়ার্টারে বহু বছর ধরেই বসবাস করছেন ওই দম্পতি। এঁরা ওড়িশার বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে সেদিন অশান্তি শুরু হয়। তা থেকেই এই কাণ্ড ঘটে যায়। প্রায় আধঘণ্টা ঝগড়া চলেছিল। বচসার সময়ই টেবিলের উপরে থাকা ফল কাটার ছুরিটি হাতে তুলে নিয়ে স্বামী সেটি চালিয়ে দেন স্ত্রীর পিঠে। মারাত্মক জখম হন তিনি। মায়ের এমন অবস্থা দেখে কাঁদতে থাকে দুই শিশু। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা পুলিশকে জানান, এই ঘটনায় গৃহবধূর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর স্বামী লালবাজারে ফোন করে বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে ছুরি মেরেছি। প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন।’

এই ফোনের পরই নড়েচড়ে বসে লালবাজার। তড়িঘড়ি পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী। দাম্পত্য কলহ কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে সেটা নিজের চোখেই দেখলেন পুলিশ অফিসাররা। এমন কী ঘটল?‌ যার জন্য নিজের স্ত্রীর পিঠে ছুরি গেঁথে দিতে হল!‌ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারেন, সামান্য জলের বোতল রাখা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বচসা শুরু হয়। আর তা থেকেই ছুরি মারলেন স্বামী স্ত্রীকে। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার রাত পর্যন্ত স্বামীকে আটক রাখলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। কারণ আহত গৃহবধূ বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। এখন পুলিশ কোন পথে হাঁটে সেটাই দেখার।