মায়ের কাছে অবহেলিত ৯ বছরের কন্যাসন্তান, মেয়েটি বাবার হেফাজতে পাঠাল ছত্তিশগড় হাইকোর্ট

মায়ের কাছে সন্তান অবহেলার শিকার!‌ তাও আবার কন্যা সন্তান। এমনই অভিযোগ এবার সামনে এসেছে। আর তাই ৯ বছর বয়সের কন্যাসন্তানের দায়িত্ব মায়ের কাছ থেকে নিয়ে বাবার হাতে তুলে দিয়েছে ছত্তিশগড় হাইকোর্ট। আর এই ঘটনা সামনে আসায় তা জোর চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। অভিযোগ, মেয়েটি মায়ের কাছ থেকে গালিগালাজ শুনত এবং অবহেলিত হতো। এই তথ্য মেয়েটিই আদালতকে দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে মায়ের হেফাজত থেকে নিয়ে বাবার হেফাজতে মেয়েটিকে পৌঁছে দিয়েছে আদালত।

এই মেয়েটি কার কাছে থাকবে?‌ এমন প্রশ্নে মামলা হয়েছিল ছত্তিশগড় হাইকোর্টে। সেখানে বিচারপতি গৌতম ভাদুড়ি এবং রাধাকৃষ্ণণ আগরওয়ালের বেঞ্চ নাবালিকার ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। যেখানে মেয়েটি ভাল থাকবে, সুরক্ষিত থাকবে তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছেন বিচারপতিরা। সেখান থেকে জানতে পারেন মেয়েটিকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হতো, গালিগালাজ দেওয়া হতো এবং অবহেলা করা হতো। মেয়েটি একাধিক নজির তুলে ধরে বিচারপতিদের সামনে। যা দেখে বিস্মিত বিচারপতিরা। মায়ের কাছে কন্যাসন্তান অবহেলিত, নির্যাতনের শিকার!‌ অবাক সকলেই।

আরও পড়ুন:‌ রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তে শীর্ষে মুর্শিদাবাদ, বঙ্গে এখন রোগীর সংখ্যা সাতশোর কাছে

এই ৯ বছরের মেয়েটি আদালকে জানিয়ে দেয়, সে একা নির্যাতনের শিকার নয়। বরং তার দিদাকেও নির্যাতন সহ্য করতে হয়। যা আদালত নোট করে। তারপরই মেয়েটি জানায়, সে তার বাবার সঙ্গে থাকতে চায়। সেখানে সে ভাল থাকবে। কারণ বাবা সেই পরিবেশ দেয়। তাকে যত্ন করে। ভয় দেখায় না। মায়ের ভয়ে সে বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারে না। এমনকী বাবার দিকের দাদু–ঠাকুমার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। একটা ছোট্ট মেয়ের এমন কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন বিচারপতিরা। মায়ের কাছে সন্তান থাকবে এমন রায়ই বারবার দেখা গিয়েছে। সেখানে এটা একটু বিরল। কারণ সন্তানের ইচ্ছাকে এবং বয়ানকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বাবার হেফাজতে মেয়েটিকে আদালত পাঠালেও মায়ের পরিদর্শন করার অধিকার কেড়ে নেয়নি। প্রযুক্তির মাধ্যমে মেয়েকে মা দেখতে পাবেন।

এছাড়া ২০১৪ সালে বিয়ে হয় এই দম্পতির। আর ২০১৫ সালের ২১ মার্চ মেয়েটির জন্ম হয়। কিন্তু শ্বশুর–শাশুড়িকে না দেখার অভিযোগে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। যেখানে শ্বশুর অসুস্থ ছিলেন। তাঁর সেবার প্রয়োজন ছিল। এই দাম্পত্য কলহই বিবাহবিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যায় স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্ককে। তার পর থেকে শুরু হয় মেয়েকে হেফাজতে রাখার দাবি। আর এই দাবির জন্য পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে স্বামীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পর্যন্ত বের করে ফেলেছিলেন। অভিযোগের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন স্বামী। বিষয়টি পৌঁছে যায় আদালতে। সেখানেই মেয়েটির জবানবন্দী নেওয়া হয়। তাতেই ফাঁস হয় সবকিছু। হেফাজতের অধিকার যায় বাবার পক্ষে।