North Bengal Tea Garden: লাল পতাকা উধাও! কমরেড ডাক আর শোনা যায় না চা বাগানে, শ্রমিকদের মুখে আজ ‘রাধে রাধে’!

দুপাশে চায়ের বাগান। দুটি পাতা একটি কুঁড়ি। আলিপুরদুয়ারের নাগেশ্বরী চা বাগান। আরও অনেকটা উঁচুতে জুরান্তি বাগান। চারদিকে সবুজে সবুজ। পাতা তোলার কাজ চলছে। ছাতা মাথায় মহিলা চা শ্রমিকের দল এক মনে পাতা তুলছেন। মাঝে মাঝে ছোট ছোট কথায় হেসে উঠছেন শ্রমিকরা। কাজের মাঝে একটু বিরতি। চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে একাধিক সংগঠন। তাদের নেতারাই বাগানের পথে। হেসে হাত জোড় করে প্রণাম করেন শ্রমিকরা। রাধে রাধে! 

চমকে ওঠার মতোই। আসলে গত কয়েক বছরে একেবারে বদলে গিয়েছে উত্তরের চা বাগানের চালচিত্রটা। একটা সময় চা বাগান কার্যত লাল পতাকায় মোড়া থাকত। আর চা বাগানে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আসা মানেই শোনা যেত ‘কমরেড’ ডাক। তবে সেসব আজ অতীত। সেই লাল পতাকাও আজ ফিকে হয়ে গিয়েছে। 

কিরণ ওঁরাও, সঞ্জয় মাহালি সহ একাধিক চা শ্রমিকরা বলেন, বাম জমানায় চা বাগান ছিল অন্য়রকম। মজুরি নিয়ে আন্দোলন লেগেই থাকত। গেট মিটিং, বিক্ষোভ মাঝেমধ্য়েই হত। কমরেডরা আসতেন বাগানে। লাল পতাকা উড়ত এলাকায়। চা বাগানে ধর্মঘট ছিল রোজকার ঘটনা। সেই ছবি বদলে গিয়েছে এখন। 

উত্তরের একাধিক চা বাগানে বর্তমানে লাল পতাকার আর বিশেষ দেখা মেলে না। কিছু জায়গায় এখনও আরএসপির সংগঠন রয়েছে। কিন্তু সংগঠনের ক্ষমতা একেবারে তলানিতে। এখন উত্তরের চা বাগানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের প্রভাব। তবে কিছু অরাজনৈতিক সংগঠনও কাজ করে চা বাগানে। তাদের প্রভাবও কম কিছু নয়। 

শ্রমিকরা যাতে ন্যায্য পাওনা পান, তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে অরাজনৈতিক সংগঠনগুলিও জোরদার আওয়াজ তোলে। শ্রমিকদের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন তাঁরা। স্থানীয় যুবকরাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এমনকী আলিপুরদুয়ারে এবার নির্দল প্রার্থীও দাঁড়িয়েছেন চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়াকে সামনে রেখে। 

তবে এসবের মধ্য়েই বদলে যাওয়া চা বাগানের এই ছবি যেন অনেকটাই অন্যরকম। এমনকী একাধিক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের স্যার বলেও সম্বোধন করছেন চা শ্রমিকদের অনেকেই। কিন্তু কমরেড ডাক আর বিশেষ শোনা যায় না চা বাগানে। এখানে আজ কেবলই রাধে রাধে অথবা স্যার কিংবা বাবু বলে ডাক। আসলে চা শ্রমিকদের মধ্যে কিছু অনুষ্ঠান হয়। তার পর থেকেই এই রাধে রাধে ডাকটা জনপ্রিয় হয়েছে ক্রমশ। বলেছেন শ্রমিকরাই।