পহেলা বৈশাখ ঘিরে কেমন প্রস্ততি নিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী?

২০০১ সালে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর থেকে প্রতি বছরই বাঙালির অন্যতম এই উৎসবের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ফলে পহেলা বৈশাখ আসার অনেক আগে থেকেই নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এছাড়া বোমা হামলার পর থেকে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান থাকছে ‘বেড়াবন্দি’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘেরাটোপের ভেতর থেকেই দুই যুগ ধরে চলে আসছে সাংস্কৃতিক মুক্তির গান।

ঢাকা মহানগর পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) তাদের নিরাপত্তা প্রস্তুতির কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে দুই সংস্থার দুই প্রধান বলেছেন, এবারের পহেলা বৈশাখ ঘিরে নাশকতা কিংবা জঙ্গি হামলার কোনও গোয়েন্দা তথ্য তাদের হাতে নেই। তবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও তল্লাশি চলছে পহেলা বৈশাখের আগের দিন শনিবার (১৩ এপ্রিলে) থেকেই।

রবিবারের, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা বটমূল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা মানচিত্র প্রকাশ করেছে ডিএমপি। গোয়েন্দারা জানান, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা, শত শত সিসিটিভি ক্যামেরা ছাড়াও ছোট বড় ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে সাদা পেশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন সক্রিয়।

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে রমনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিমূলক মহড়া (ছবি: ফোকাস বাংলা)

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও উগ্রবাদীদের নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্টা থাকে। যে কারণে তাদের অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর এলাকাসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় স্ব-উদ্যোগে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বিট পুলিশকে। কমিউনিটি পুলিশিং ও উঠান বৈঠক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে বলা হয়েছে। ধর্মীয় আলেমদের সমন্বয়ে জঙ্গি ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। 

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে রমনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিমূলক মহড়া (ছবি: ফোকাস বাংলা)

শনিবার (১৩ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের আয়োজন নিয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পহেলা বৈশাখ ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনও হামলা নাশকতার কোনও শঙ্কা নেই। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ। এ কারণে বারবার এ আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি হামলা হয়েছে। তাই অতীতের সবকিছু মাথায় রেখেই কয়েকস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা রকম সরঞ্জামসহ কয়েক স্তরের প্রস্তুতি নিয়েছে (ছবি: ফোকাস বাংলা)

একইদিন পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, র‍্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। তিনি বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখ ঘিরে জঙ্গি হামলার কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তারপরও তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন। যেসব জায়গায় অনুষ্ঠান হবে, সেখানে সিসিটিভি দিয়ে পুরো এলাকার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোনের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় নজরদারি করা হবে। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট স্ট্যান্ডবাই থাকবে, ইতোমধ্যে তারা মহড়া করেছে।

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে রমনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিমূলক মহড়া (ছবি: ফোকাস বাংলা)

হামলার শঙ্কা নেই, তারপরও উদ্বেগ কেন—জানতে চাইলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও দমনে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ হচ্ছে, অজানা আশঙ্কাটা তো থেকেই যায়। ঝুঁকি হয়তো আগের মতো নেই। কারণ বর্তমানে অনেকগুলো এজেন্সি আমরা সুনির্দিষ্টভাবে এগুলো নিয়ে কাজ করি। এভাবে তো কাজ আগে হত না। যে কারণে তখন বিষয়টা অজানা থাকতো। বর্তমানে এ নিয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারণা আছে। কার কতটুকু সক্ষমতা, কতটুকু কে কী করতে চায়। আমাদের ইন্টেলিজেন্স আগের চেয়ে অনেক স্ট্রং। সেদিক থেকে বলতে গেলে বর্তমান পরিস্থিতিতে হামলার আশঙ্কা অনেকটা কম। কিন্তু সতর্ক তো থাকতেই হয়।

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে রমনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিমূলক মহড়া (ছবি: ফোকাস বাংলা)