Sydney: খ্রীষ্টান যাজকদের ছুরি মেরে নবীর নামে জয়ধ্বনি,কী বললেন সিডনির ওই কিশোরের বাবা?

অস্ট্রেলিয়ায় দুই খ্রিষ্টান ধর্মযাজককে ছুরিকাঘাতে অভিযুক্ত এক ছেলের বাবা জানিয়েছেন, তার ছেলের চরমপন্থার কোনো লক্ষণ দেখতে পাননি।

সোমবার রাতে গির্জার প্রার্থনার সময় বিশপ মার মারি ইমানুয়েল ও রেভারেন্ড আইজ্যাক রোয়েলকে ছুরিকাঘাত করার পর ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর আরবিতে নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কথা বলে। দুজনের কেউই প্রাণঘাতী আঘাত পাননি।

অর্থোডক্স আসিরিয়ান মণ্ডলী ছেলেটিকে কাবু করেছিল এবং বুধবার তাকে পুলিশি প্রহরায় একটি অজ্ঞাত হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। সংঘর্ষে তিনি হাতে গুরুতর আঘাত পান।

সিডনির বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়ের আইনজীবী লেবাননের মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি গামেল খেইর বলেন, হামলার পরপরই তিনি ছেলেটির শোকাহত বাবার সঙ্গে তার বাড়িতে দুই ঘণ্টা সময় কাটান। এরপর থেকে প্রতিশোধের ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে পরিবারটি।

অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পকে খাইর বলেন,  তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন এই ঘটনায়।

‘তিনি তার বাবার প্রতি আরও অবাধ্য হয়ে উঠছেন তা ছাড়া আরও চরম হয়ে ওঠার আর কোনও লক্ষণ সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন না। কিন্তু সেটা নিয়েই কথা হচ্ছিল। তিনি কোনও টেল-টেল লক্ষণ দেখতে পাননি, খেইর যোগ করেছেন।

ক্রাইস্ট দ্য গুড শেফার্ড চার্চে হামলা নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞার সঙ্গে মানানসই বলে অযথা কমিউনিটি উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ এনে খাইর বেশ কয়েকজন কমিউনিটি নেতার মধ্যে অন্যতম।

আমি উদ্বিগ্ন যে আমরা ১৬  বছর বয়সি একটি শিশুর প্রাক-বিচারের দিকে ছুটে গেছি, খাইর বলেছিলেন।

তিনি ধর্মের ভাষা ব্যবহার করেছেন, এ নিয়ে আমরা মোটেও বিতর্ক করছি না। এক অর্থে তিনি অন্য ধর্মকে টার্গেট করেছেন, এটা বিতর্কের বিষয় নয়।

এই শিশুটির মানসিক অবস্থা কী ছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে? তিনি কি এমন যৌক্তিক আহ্বান জানানোর মতো বিবেকবান মনের অধিকারী ছিলেন? আমরা যা বলছি তা হলো, এটাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করার আগে পুলিশের আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও পর্যালোচনা করার সময় আছে।

নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার কারেন ওয়েব বুধবার সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০২ দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি সন্ত্রাসী ঘটনার ঘোষণার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

এই আইনটি পুলিশকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই লোকজন, প্রাঙ্গণ এবং যানবাহন থামানো এবং তল্লাশি করার এবং সন্ত্রাসী হামলা বা হামলার আসন্ন হুমকির প্রতিক্রিয়ায় সন্দেহভাজনদের আটক করার ক্ষমতা প্রসারিত করেছে।

তিনি বলেন, গির্জায় হামলা রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা আদর্শিক প্রেরণা থাকার আইনটির মানদণ্ড পূরণ করেছে এবং ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।

ওয়েব বলেন, মঙ্গলবার সকালে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি যে এটি সেই মানদণ্ড পূরণ করেছে এবং আমি কোনও দ্বিধা ছাড়াই এই ঘোষণাটি দিয়েছি।

তিনি বলেন, ছেলেটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অপরাধের অভিযোগ আনা হবে কিনা তা একটি পৃথক বিবেচ্য বিষয় এবং এটি পুলিশি তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ছেলেটিকে জানুয়ারিতে সুইচব্লেড ছুরি রাখা, অপরাধ করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা, পিছু নেওয়া, ভয় দেখানো এবং সম্পত্তির ক্ষতি করা সহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ভালো আচরণের মুচলেকায় তাকে আদালত থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সোমবার রাতে গির্জায় জড়ো হওয়া ৬০০ জনের আচরণও পুলিশ তদন্ত করছে এবং নিজের নিরাপত্তার জন্য অস্থায়ীভাবে ভিতরে আটকে রাখা ছেলেটিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে।

জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বোতল ও বেড়ার বোর্ড নিক্ষেপ করে। দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়েব বলেন, পুলিশ বিভিন্ন ভিডিও উৎস থেকে এবং পুলিশের গাড়িতে ফেলে যাওয়া আঙুলের ছাপ থেকে দাঙ্গার সময় অপরাধীদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছে। বুধবারের মধ্যেই গ্রেফতার করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ওয়েব বলেন, সেখানে যারা ছিল তারা সবাই পুলিশের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করছিল না, তবে যারা ছিল, তারা আশা করতে পারে যে তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং গ্রেপ্তার করা হবে এবং আদালতে হাজির করা হবে।

লেবানিজ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন সিডনির শহরতলী লাকেম্বায় অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম মসজিদ পরিচালনা করে। সোমবার থেকে ওই মসজিদসহ আরও কয়েকটি মসজিদে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ওয়েস্টফিল্ড বন্ডি জংশন শপিং মলে শনিবার এক আততায়ীর ছুরিকাঘাতে ছয়জন নিহত হওয়ার পর শপিং মলগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তাণ্ডবের অবসান ঘটে যখন ৪০ বছর বয়সী হামলাকারী, যার মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস ছিল এবং কোনও স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল না, পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে। সেই ঘটনায় কোনও সন্ত্রাসবাদ ঘোষণা করা হয়নি।

ওয়েস্টফিল্ড বন্ডি জংশন শনিবার অপরাধের দৃশ্য হিসাবে বন্ধ হওয়ার পরে প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার তার দরজা খুলবে। ‘কমিউনিটি রিফ্লেকশন ডে’ উপলক্ষে দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

শপিং মলের মালিক প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ইলিয়ট রুসানো বলেন, মঙ্গলবার নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেছেন।

২০১৮ সালের পর থেকে গির্জায় হামলাটি তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করল অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উইয়ামবিলা সম্প্রদায়ের কাছে তিন খ্রিস্টান মৌলবাদীর অতর্কিত হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় বন্দুকধারীরা।

২০১৮ সালের নভেম্বরে সোমালিয়া বংশোদ্ভূত এক মুসলিম মেলবোর্নের রাস্তায় তিন পথচারীকে ছুরিকাঘাত করলে একজন নিহত হন। নিউজ এজেন্সি এপি সূত্রে খবর।