জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র ২০২৪: ভোটের ফ্যাক্টর, অতীতের ফলাফল -একনজরে সব তথ্য

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকসভা কেন্দ্র। এই লোকসভা কেন্দ্রটি বর্তমানে তফশিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। ১৯৬২ সালে প্রথম লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জলপাইগুড়ি লোকসভা। এর পরবর্তীতে কখনও জাতীয় কংগ্রেস, কখনও বামফ্রন্ট, কখনও তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করেছে এই কেন্দ্রে। বর্তমানে এই কেন্দ্রটি বিজেপির অধীনে রয়েছে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী ডক্টর জয়ন্ত কুমার রায় এই আসন থেকে জয়লাভ করেন। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সময়কার পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ১৩ লক্ষ ৫১ হাজার ভোটার রয়েছে এই কেন্দ্রে। 

সবথেকে বেশি বার এই কেন্দ্র থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) জয়লাভ করলেও বর্তমানে এই আসনে জোর টক্কর ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। এই লোকসভার অধীনে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র অবস্থিত। বিধানসভা কেন্দ্রগুলি যথাক্রমে মেখলিগঞ্জ (তফসিলি জাতি), ময়নাগুড়ি (তফসিলি জাতি), ধুপগুড়ি, জলপাইগুড়ি (তফসিলি জাতি), রাজগঞ্জ (তফসিলি জাতি), ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, মাল (তফসিলি উপজাতি)।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিকভাবে এই কেন্দ্রটিতে নির্বাচনী ফলাফল। ১৯৭১ সালে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রটি থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তুনা ওরাওঁ জয়লাভ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীর বিরসেন কুজারকে হারিয়ে। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনটি প্রথমবার জাতীয় কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। নির্দল প্রার্থী খগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত কংগ্রেসের মায়া রায়কে এই নির্বাচনে পরাস্ত করেন। ১৯৮০ লোকসভা নির্বাচনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) -এর পক্ষ থেকে সুবোধ সেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (ইন্দিরাপন্থী)-এর প্রার্থী শ্রীরাম সিংহকে পরাজিত করেন। এরপরের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এই আসনটি সিপিআইএম-এর অধীনে থেকেছে। ১৯৮৪ ও ১৯৮৯ সালে সিপিআইএমের মানিক সান্যাল পরপর দুবার জয়ী হন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৯১ এবং ১৯৯৮ সালে সিপিআইএম থেকে এই কেন্দ্রে সাংসদ নির্বাচিত হন জিতেন্দ্রনাথ দাস। এর পরবর্তীতে সিপিআইএম প্রার্থী মিনতী সেন ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে পরপর তিনবার এই কেন্দ্র থেকে জয়যুক্ত হন। ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসাবে উঠে আসে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে মহেন্দ্র কুমার রায় ৪ লক্ষ ৬৯ হাজার ভোট পান, অন্যদিকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মা ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ভোট পান।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে যদি আমরা তাকাই, দীর্ঘদিন ধরে সিপিআইএমের হাতে থাকা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় চন্দ্র বর্মন ৭০ হাজারের কাছাকাছি ভোটের নিকট নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাস্ত করে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির ভোট সংখ্যা ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। ৪০.৬ শতাংশ ভোট পায় তারা, অন্যদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৪৩.৭ শতাংশ ভোট পায়। সিপিআইএম ও জাতীয় কংগ্রেসের ভোট শেয়ার ৬.৩ শতাংশ এবং ৫.৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রটিতে ভারতীয় জনতা পার্টির ডক্টর জয়ন্ত কুমার রায় ১ লক্ষ ৮৪ হাজারের কাছাকাছি ভোটে পরাস্ত করেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে৷

এবার দেখে নেওয়া যাক, এই লোকসভা কেন্দ্রে অবস্থিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলির বিস্তারিত তথ্য। জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলি অবস্থিত, তার মধ্যে একমাত্র মেখলিগঞ্জ কোচবিহার জেলার অন্তর্গত। বাকি ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্র জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত। ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই সাতটি বিধানসভায় কেন্দ্রের শাসকদল এবং রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। মেখলিগঞ্জ, জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ এবং মাল এই চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে ধুপগুড়ি, ময়নাগুড়ি এবং ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ভারতীয় জনতা পার্টি তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করে আসনগুলি ছিনিয়ে নেয়। এই প্রত্যেকটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ভোটদানের হার থেকেছে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। মেখলিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের অধিকারী পরেশ চন্দ্র ১৪ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি এবং রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র দুটিতেই যথাক্রমে তৃণমূল কংগ্রেসের ডক্টর প্রদীপ কুমার বর্মা এবং খগেশ্বর রায় জয় লাভ করেন। মাল বিধানসভা কেন্দ্রটিতেও তৃণমূল কংগ্রেসের বালুচিক বারিক ৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। অন্যদিকে ময়নাগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির কৌশিক রায় ১১ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেন। ধুপগুড়ি এবং ফুলবাড়ী বিধানসভা কেন্দ্রদুটিতে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে জয়লাভ করে যথাক্রমে বিষ্ণুপদ রায় এবং শিখা চ্যাটার্জি। উল্লেখ্য শিখা চ্যাটার্জি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে প্রায় ১১ শতাংশ ভোট বেশি পান। ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে ২০২৪ এর নির্বাচনে কে জয়লাভ করে সেই দিকেই নজর থাকবে সকলের।

জলপাইগুড়িতে এবার বিজেপির প্রার্থী গতবারের জয়ী ডক্টর জয়ন্ত রায়। তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়। সিপিএমের দেবরাজ বর্মনও আছেন লড়াইয়ে। সবমিলিয়ে দুজন নির্দল সহ আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯ তারিখ ভোটগ্রহণ জলপাইগুড়িতে। তারপরেই ৪ জুন ফলাফলের জন্য শুরু হবে অপেক্ষা।