Ayodhya Surya Tilak: সূর্যে অভিষিক্ত রাম লালা, সূর্য তিলক পর্বে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছেন এই অধ্যাপক

ছবি দেখে এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল যেন স্বয়ং রামলালাই মন্দিরে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর ‘সূর্যাভিষেক’ বিজ্ঞানের হাত ধরেই দুপুর ১২টায় সূর্যবংশী রামের ‘সূর্য তিলক’ হয়েছে। সে এক অনন্য দৃশ্য। বেলা ১২টায় মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ভগবান শ্রীরামের ‘সূর্যাভিষেক’ হয়। প্রায় সাড়ে তিন মিনিট ধরে রামলালার কপালে সূর্য তিলক লাগানো হয়। কীভাবে?

প্রায় ৫০০ বছর পেরিয়ে প্রথমবারের মতো ভগবান রামের জন্মস্থানে পালিত হচ্ছে তাঁর জন্মবার্ষিকী। উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা আলোকিত। ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি ঐশ্বরিক আবাসে ফিরেছেন ভগবান শ্রীরাম। তাই এবার রামনবমীটা স্পেশাল ছিল। রামমন্দিরেই জমকালো ও ঐশ্বরিকভাবে পালিত হয় রাম নবমীর। আধ্যাত্মিকতা ও ঐশ্বরিক মনোভাবের মধ্যেই বিজ্ঞান লুকিয়ে ছিল অযোধ্যায়।

সিএসআইআর-সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিবিআরআই), রুরকির পরিচালক এবং অধ্যাপক প্রদীপ কুমার, রাম মন্দিরে অপটো-মেকানিক্যাল সিস্টেম তৈরি এবং ইনস্টলেশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা অযোধ্যার রাম মন্দিরে ‘সূর্য তিলক’ পর্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সিবিআরআই, রুরকির এই সিনিয়র বিজ্ঞানীর মতে, সূর্যতিলকের আকার ছিল ৫৮ মিমি। তিনি বলেছিলেন যে রাম লালার কপালের মাঝখানে তিলক লাগানোর সঠিক সময়কাল ছিল প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিট, যার মধ্যে দুই মিনিট সম্পূর্ণ আলোকিত হয়েছিল। তাঁর মতে, আমি সূর্যতিলক লাগানোর প্রকল্পে অবদানকারী দলের সদস্যদের একজন হতে পেরে গর্বিত বোধ করছি।’

  • কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সূর্য তিলক হয়েছে রাম লালার

আসলে, এটা ঘটেছে আয়না এবং লেন্সের নতুন ব্যবস্থার ব্যবহারের মাধ্যমে। এর জন্য অষ্টধাতুর ২০৬৫ ফুট লম্বা পাইপ বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ফিল্টারও বসানো ছিল। এই পাইপগুলিকে সিলিংয়ে সংযুক্ত করে বসানো হয়েছিল।

প্রদীপ কুমার জানিয়েছেন যে ‘সূর্যাভিষেক’ একটি অপটো-মেকানিকাল সিস্টেম ব্যবহার করে সঞ্চালিত হয়েছিল। সূর্যের রশ্মি প্রথমে মন্দিরের উপরের তলায় স্থাপিত একটি উচ্চ-মানের আয়নায় পড়েছিল, তারপর তিনটি লেন্সের সাহায্যে দ্বিতীয় তলায় আরও একটি আয়নার দিকে পরিচালিত হয়েছিল এটি। অবশেষে সব স্থান পেরিয়ে রাম লালার কপালে এসে স্থির হয়ে গিয়েছিল সূর্য রশ্মি। এইভাবেই সম্পন্ন হয়েছে সূর্য রশ্মি।

প্রদীপ কুমার আরও জানিয়েছেন যে আগামী বছরের মধ্যে তৃতীয় তলার নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং সেখানে একই অপটিক্যাল সিস্টেম স্থাপন ও পরিচালনা করা হবে। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে প্রতি বছর রামনবমীর দিনে আকাশে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তিত হয়। বিশদ গণনার পরে, এটি জানা গিয়েছে যে রামনবমীর তারিখ প্রতি ১৯ বছরে পুনরাবৃত্তি হয়। সিএসআইআর-সিবিআরআই-এর দল, রুরকি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ব্যাঙ্গালোরের সঙ্গে পরামর্শ করে, মন্দিরের তৃতীয় তলা থেকে গর্ভগৃহে সূর্যালোক চালানোর জন্য এই প্রক্রিয়া তৈরি করেছে। রুরকির সিএসআইআর-সিবিআরআই-এর পরিচালক হিসেবে যোগদানের আগে, কুমার ২০০২ সালে আইআইআইটি হায়দ্রাবাদে ছিলেন এবং ভূমিকম্প প্রকৌশল গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সদস্য অনিল মিশ্রও এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে সূর্য তিলকের সময় ভক্তদের রাম মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য মন্দির ট্রাস্ট প্রায় ১০০টি এলইডি এবং সরকার কর্তৃক ৫০টি এলইডি স্থাপন করা হয়েছিল। এখানেই রাম নবমী উদযাপন দেখানো হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত লোকজন এই উৎসব দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। আকাশ পরিষ্কার ছিল বলেই এই প্রক্রিয়াটি সহজে সম্পন্ন হয়েছিল। এবার থেকে প্রতি বছর রাম নবমীতে এইভাবেই সূর্য তিলক হবে রাম লালার।