হিট স্ট্রোক কেন জরুরি অবস্থা? আক্রান্ত হলে কী করবেন?

ঢাকাসহ দেশের সবগুলো জেলাতে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাসের আদ্রতা। তৈরি হচ্ছে অসহনীয় পরিস্থিতি। এ সময় মানুষ তীব্র মাথাব্যথা, ত্বক লাল হওয়া, অবসন্ন বা অবসন্ন ভাব, অজ্ঞান হয়ে পড়া, মাংশপেশীর খিঁচুনি এবং হিট স্ট্রোকের শিকার হচ্ছে। হিট স্ট্রোক কী, কেন হয় এবং করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।

এমনিতেই আমাদের শরীরের ভেতরে নানা রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে। ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং শরীর নিজ থেকে এই অতিরিক্ত তাপ বের করতে পারে না। শরীরের এই তাপজনিত গুরুতর অসুস্থতাই হলো হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোক। তীব্র গরমে রোদে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করার কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও তরল বেরিয়ে যাওয়ায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। যার ফলে শরীর হয়ে যায় অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত। তাছাড়া কিছু ওষুধ, যেমন; মূত্রবর্ধক, বিটা-ব্লকার্স কিংবা অ্যান্টি-কলিনার্জিক্স, অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক সেবনও শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ঝুঁকি শিশু, বয়স্ক মানুষ (৬৫ বছরের অধিক বয়স), স্থূল ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্তের বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হিট স্ট্রোক সাধারণত ক্লাসিক, এক্সারজেশন-অ্যাসোসিয়েটেড হিট স্ট্রোক এবং হিট স্ট্রোক ফ্রম হিট ইলনেস- এই তিন ধরনের হয়ে থাকে। ক্লাসিক হিট স্ট্রোক সবচেয়ে সাধারণ ধরন, যা গরমের পরিবেশে দীর্ঘ সময় অবস্থানের কারণে হয়। গরম পরিবেশে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এক্সারজেশন-অ্যাসোসিয়েটেড হিট স্ট্রোক হতে পারে এবং হিট স্ট্রোক ফ্রম হিট ইলনেস হিট স্ট্রোকের একটি জটিলতা, যা হালকা হিট ইলনেসের পরেও ঘটে। হিট স্ট্রোকের ফলে রোগী বা রোগীর মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃত, পেশী ও ত্বকের নানাবিধ ক্ষতি হয়।

হিট স্ট্রোকের তীব্র তাপমাত্রা মস্তিষ্কের কোষ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। হিট স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হিট স্ট্রোক কিডনি ও যকৃতের রক্ত নালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এইসব অঙ্গগুলো বিকল করে দিতে পারে। তাছাড়া হিট স্ট্রোক রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। মনে রাখতে হবে, হিট স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা যার দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। না হলে হিট স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হিট স্ট্রোক এড়াতে কী কী করবেন?

  • যতটা সম্ভব তীব্র তাপদাহ বা অতিরিক্ত গরমের সময় বাইরে কম বের হোন
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
  • হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
  • টুপি, রোদ চশমা, এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কী করবেন?

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত জায়গায় নিয়ে যান। পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন, বা বরফের পানিতে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন। মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালুন এবং উক্ত স্থানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। 
  • পানিশূন্যতা রোধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ORS (Oral Rehydration Solution) বা ঠান্ডা পানি বা লবণ ও চিনি মিশ্রিত (electrolyte solution) পানি পান করান।
  • • অবস্থা দ্রুত উন্নতি না হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রোগীকে নিকটস্ত জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে, বা অ্যাম্বুলেন্স কল করতে হবে। 

লেখক: জেনারেল ম্যানেজার, কমিউনিকেশান ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড