বিচারক সেজে নিজেই নিজের জামিন করিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর শিরোনামে বছর ৮৫-র বিখ্যাত ‘চোর মাস্টার’

প্রয়াত চোর মাস্টার ধনীরাম, জীবনের শেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়েও অপরাধ করা বন্ধ করেননি তিনি। নকল বিচারক সাজিয়ে এনে ২৭০০ জন জেলবন্দিদের মুক্ত করে লাইমলাইটে এসেছিলেন যিনি, হরিয়ানার বাসিন্দা ধনীরাম মিত্তাল তাঁর নাম। সারা দেশে ‘সুপার নটওয়ারলাল’ এবং চোর মাস্টার হিসাবে পরিচিত ছিলেন, ৮৫ বছর বয়সে এসে সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। গত ১৮ এপ্রিল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ধনীরাম ‘ভারতীয় চার্লস শোভরাজ’ নামেও পরিচিত ছিলেন।

  • ধনীরামের অত্যাশ্চর্য কীর্তিকলাপ

১৯৩৯ সালে ভিওয়ানি জেলার বাসিন্দা ধনীরাম মিত্তাল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দেশের সবচেয়ে পণ্ডিত ও বুদ্ধিমান অপরাধীদের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। শিক্ষিত ছিলেন ধনীরাম। আইনের ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও এবং একজন গ্রাফোলজিস্ট হওয়ার পাশাপাশি একজন হস্তাক্ষর বিশেষজ্ঞ হয়েও, তিনি চুরি করেই জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নেন। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন একজন উচ্চ প্রযুক্তি জানা অপরাধী, যিনি শুধু ভুয়ো বিচারক হওয়ার ভান করেননি এবং দীর্ঘ সময় ধরে একজন প্রকৃত বিচারকের চেয়ারে বসে রায়ও দিয়েছিলেন। আসলে, ৭৭ বছর বয়সে দিল্লির রানিবাগ এলাকা থেকে গাড়ি চুরির মামলায় ধরা পড়েছিলেন ধনীরাম। চার দিন পর দিল্লির রোহিণী আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে হয় ধনীরাম মিত্তলকে। এরপরই তিনি নিজের পাশাপাশি ভুয়ো বিচারক সেজে শতাধিক আসামিকে জামিনও করিয়েছিলেন। ধনীরাম আদালতে নিজের মামলার পক্ষে নিজেই সাক্ষ্য দিতেন। কিছুদিন আগে ধনীরাম একটি পুরনো মামলায় দুই মাস কারাভোগ করার পর চণ্ডীগড় জেলে ফিরেছিলেন।

  • এক হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরি

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, চণ্ডীগড় এবং পাঞ্জাব এবং অন্যান্য রাজ্য মিলিয়ে এক হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরির ঘটনায় ধনীরামের নাম এসেছে। তিনি এতটাই চতুর ছিলেন যে, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং আশেপাশের এলাকায় দিনের বেলাতেই চুরি করতেন। কেউ ধরতে পারত না। তাঁর বিরুদ্ধে তাজ অসংখ্য মামলাও রয়েছে। যার কারণে তিনি কারাগারেও গিয়েছেন।

  • ছয় বছর ধরে ভুয়ো স্টেশন মাস্টারের চাকরি

জাল নথির মাধ্যমে স্টেশন মাস্টার হওয়া ধনীরাম এতটাই চালাক যে তিনি জাল নথির মাধ্যমে রেলে চাকরিও পেয়েছিলেন। চাকরিটাও ছোট নয়, সরাসরি একজন রেলওয়ে মাস্টারের। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে প্রায় ৬ বছর তিনি দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশনে স্টেশন মাস্টার হিসেবে কাজ করেছিলেন।

  • কীভাবে ৪০ দিনের জন্য বিচারক হয়েছিলেন

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে ধনীরাম হরিয়ানার ঝাজ্জারের অতিরিক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের আদেশ সম্পর্কে একটি সংবাদপত্রে খবর পড়েছিলেন। এরপর তিনি আদালত চত্বরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে একটি চিঠি টাইপ করে সিলগালা খামে রেখে দিয়ে এসেছিলেন। এই চিঠিতে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের জাল স্ট্যাম্প লাগিয়ে হুবহু স্বাক্ষর করে বিভাগীয় তদন্তকারী বিচারকের নামে পোস্টও করেছিলেন। ওই চিঠিতে ওই বিচারককে দুই মাসের ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ ছিল। বিচারক এই ভুয়ো চিঠি বুঝতে না পেরে ছুটিতে চলে যান। পরের দিন, হরিয়ানা হাইকোর্টের নামে ঝাজ্জারের একই আদালতে আরেকটি সিল করা খাম আসে, যেখানে ওই বিচারক দুই মাসের ছুটিতে থাকাকালীন সেই বিচারকের কাজ দেখাশোনা করার জন্য একজন নতুন বিচারপতি নিয়োগের আদেশ ছিল। এরপর ধনীরাম নিজেই বিচারক হয়ে আদালতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ৪০ দিন ধরে মামলার শুনানি করেন এবং হাজার হাজার মামলার নিষ্পত্তি করেন। এই সময়ের মধ্যে, ধনীরাম ২৭০০ জনেরও বেশি আসামিকে জামিনও দিয়েছেন। ধনীরাম মিত্তাল নিজেই ভুয়া বিচারক হিসাবে নিজের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি করেছিলেন এবং নিজেকে খালাস দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। অফিসাররা বুঝতে পারার আগেই মিত্তাল পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি যে আসামিদের জামিন করিয়েছিলেন, তাঁদের আবার খুঁজে বের করে জেলে পাঠানো হয়।