Bizarre News: কেউ মারা গেল শোক নয়, উৎসব হয়! মৃতদেহকেই আগলে রাখে পরিবার, অদ্ভুত রীতি এই গ্রামের

মৃতদেহই পরিবার। প্রিয়জনের মৃতদেহকে কবর না দিয়ে সঙ্গেই রাখেন গ্রামবাসীরা। মৃতদেহকে খাবার খাওয়ান। একসঙ্গে বসবাস করেন, সময় কাটান। ভুতে মানুষে একাকার যাকে বলে। পৃথিবীতে এমনই এক বিশেষ গ্রাম রয়েছে, যা ভারতের অত্যন্ত কাছে অবস্থিত। ইন্দোনেশিয়ায় একটি সম্প্রদায়, তাঁদের এক অনন্য ঐতিহ্য অনুসারে, মৃত্যুর পর মৃতদেহ কবর দেয় না। পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যুর পর তাঁর শেষকৃত্য করে না বরং তাদের কাছেই রাখে।

ইন্দোনেশিয়ার তোরাজান সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এই রীতি রয়েছে। তাঁরা আধ্যাত্মিকভাবে মৃত্যুকে নিজেদের জীবনের একটি অংশ হিসাবে বিবেচনা করে পরিবারের মৃত সদস্যের সঙ্গে বসবাস করেন। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিবারগুলি তাদের মৃত সদস্যের মৃতদেহ বছরের পর বছর ধরে বাড়িতে যত্ন সহকারে রাখে। শুধু তাই নয়, ঐতিহ্যগতভাবে ওই মৃতদেহগুলোকে প্রতিদিন দুপুরের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। যতদিন না পর্যন্ত তাদের কবর দেওয়া হচ্ছে, ততদিন এই প্রথা চলতে থাকে।

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি পাহাড়ে বসবাসকারী তোরাজানরা তাঁদের মৃত সদস্যদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন যেন ওই প্রাণহীন দেহগুলো মৃত নয়। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা একজন মৃত ব্যক্তির সঙ্গে জীবিত ব্যক্তির মতো আচরণ করে। তাঁরা তাদের খাওয়ান, সাজাযন এবং ছবিও তোলেন। প্রত্যেকটি পরিবার নিজেদের বাড়ির একটি পৃথক ঘরে একটি বিছানা পেতে আরামে মৃতদেহগুলোকে শুইয়ে রাখে। যেতক্ষণ না পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য যথাযথভাবে সম্পন্ন না হচ্ছে।

যদিও শেষকৃত্যের পরেও যত্ন নেওয়া হয়। শেষকৃত্যের পর, মৃতদের শেষ পর্যন্ত কবর দেওয়া হয়। তবে তাদের এরপরও নিয়মিত দেখাশোনা করা হয়, পরিষ্কার করা হয় এবং মা’নেন (পূর্বপুরুষদের যত্ন নেওয়া) নামে একটি আচারে নতুন পোশাকও পড়ানো হয়। আসলে, এখানে কেউ মারা গেলে শোক নয়, উদযাপন হয়। প্রতি তিন বছর পরপর লাশ ঘরে ফেরে।

তোরাজার অ্যানিমিস্টিক বিশ্বাস যে মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাকৃতিক জিনিসের একটি আত্মা আছে। এখানে মৃত্যুকে চূড়ান্ত হিসাবে দেখা হয় না বরং একটি দীর্ঘায়িত প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা হয়। মৃতদেহকে মকুলা বলা হয়, যার অর্থ একজন অসুস্থ ব্যক্তি এবং জীবিতদের মতোই সম্মান ও যত্ন পেয়ে থাকেন মৃতরা। প্রতি আগস্টে, মৃতের পরিবারগুলি মা’নেনের আচারের জন্য জড়ো হয়। এর জন্য কবর থেকে সাবধানে মৃতদেহগুলি তুলে, সেগুলো থেকে ময়লা অপসারণ করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরানো হয় এবং তাদেরও সমাধিগুলো সাজানো হয়। আসলে মমি করা মৃতদেহগুলিকে সাজানোর এবং প্রতিকার করার এই কাজটি শুধুমাত্র ভালবাসা এবং সম্মানের অঙ্গভঙ্গি নয়, বরং এটি একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা যা পারিবারিক বন্ধন এবং পূর্বপুরুষের সঙ্গে সংযোগের প্রমাণ দেয়। যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের আমরা কীভাবে সম্মান করতে এবং স্মরণ করতে পারি সে সম্পর্কে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।