ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি

প্রচণ্ড গরমে যশোরের শার্শার বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা আলু খালাসের আগেই ট্রাকে পচে যাচ্ছে। সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৬ ট্রাকে সাত হাজার ৪০০ ব্যাগে ৩৭০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়। এই আলু ভারত থেকে লোড করে বন্দরে পৌঁছাতে কয়েকদিন লেগে যায়। এদিকে আবার প্রচণ্ড গরম। সে কারণে ট্রাকে থাকা আলু পচে যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে।

আমদানি করা আলু খালাস করার জন্য কাস্টমসে কাগজপত্র দাখিল করেছেন ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক নামে এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। আলুর আমদানিকারক বাংলাদেশের ইন্টিগ্রেটেড ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ।

বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আলু আমদানি বৃদ্ধি পেলেও বাজারে দিন দিন দাম বাড়ছেই। বর্তমানে আলুর দাম কেজি প্রতি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও গত বছর এই সময়ে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। পণ্যটির আমদানি বাড়লে ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না বলে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ। এদিকে প্রচণ্ড গরমে ট্রাকে থাকা আলু পচতে শুরু করেছে।

তবে বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার বলেছেন, দ্রুত যাতে পণ্য চালানটি খালাস দেওয়া যায় সেজন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদা ১ কোটি মেট্রিক টনের মতো। আর চাহিদার বিপরীতে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে আলুর উৎপাদন ছিল এক কোটি ১২ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও মজুত করতে ব্যবসায়ীরা সারা বছর কমবেশি আলু আমদানি করে থাকেন। বৈশ্বিক মন্দায় গত বছর যখন দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে তখন পাল্লা দিয়ে আলুর দাম বেড়ে দাঁড়ায় কেজি প্রতি ৮০ টাকা। এতে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ বাড়াতে গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বেসসরকারিভাবে আলু আমদানির অনুমতি দেয়।

পরে গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে শুরু হয় আলু আমদানি। বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়লেও ভরা মৌসুমেও তার সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটরা দিন দিন আলুর দাম বাড়াচ্ছে। এতে ক্ষোভ সাধারণ ক্রেতাদের। এদিকে ভারতের ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার দূর থেকে আলু আমদানি এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়। এ সময় পর্যন্ত আলু গাড়িতে তেরপাল দিয়ে বাঁধা থাকে। এতে গরমেই ট্রাকেই আলু পচে যাচ্ছে।

বাংলাদেশি ট্রাক চালকেরা জানান, তারা ভারতীয় ট্রাক থেকে আলু খালাস করে রংপুর নিয়ে যাবেন। কিন্তু গরমের কারণে বন্দরে ট্রাকে আলু বস্তাতেই পচে যাচ্ছে। দ্রুত খালাস না হলে আরও নষ্ট হয়ে যাবে।

বেনাপোল বাজারের আলু বিক্রেতা রাসেদুর রহমান জানান, বাজারে আলুর সরবরাহ কম থাকায় দাম কমছে না। বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু।

সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, ভারত থেকে আলু আমদানি হলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দাম কমছে না। বাজার মনিটরিং না থাকায় বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঠিকমতো তদারকি করলে দাম কমে আসবে বলে করেন।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডে দায়িত্বরত এডি কাজি রতন আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানান, ভারত থেকে গত সোমবার ৩৭০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। আলুর মান পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে প্রচণ্ড গরমের কারণে কিছু কিছু বস্তায় সামান্য পরিমাণ আলু পচা দেখা যাচ্ছে। আমদানিকারকরা যত তাড়াতাড়ি চালানগুলো খালাস নেবেন ততোই ভালো।