Summer Heatwave 2024 Pet Health Issues, Prevention Tips And When To Visit Doctor Bengali News

Pet Health Issues And Prevention In Summer: গরমে মানুষের যেমন হাঁসফাঁস দশা, তেমনই অবস্থা কিন্তু পোষ্যদের। বরং কিছু ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা আরও বিপন্নও বলা যায়‌। কারণ তাদের শারীরিক গঠন। তাহলে এই অবস্থায় আমাদের পোষ্যদের ভাল রাখার উপায় কী ? কীভাবেই বা দাবদাহ থেকে তাদের একটু স্বস্তি দেওয়া যায় ? এই বিষয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে বিশদে কথা বললেন রাজ্য প্রাণী ও মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ক্লিনিকাল কমপ্লেক্সের অধ্যাপক ডক্টর শুভমিত্র চৌধুরী ও পশু জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক ডক্টর রিপন বিশ্বাস।

গরমে পোষ্যদের কী কী সমস্যা হয় ?

হিট স্ট্রোক – পোষ্যকে খুব বেশি রোদে বের করা হয় না এই সময়‌ ।‌ তাই সানস্ট্রোকের আশঙ্কা কম থাকে। কিন্তু হিট‌স্ট্রোকের আশঙ্কা যথেষ্ট বেশি। সেটাই মনে করিয়ে দিলেন চিকিৎসক রিপন বিশ্বাস‌‌।

খাবার ও জল থেকে সংক্রমণ – খাবার ও জল থেকেও পেটের সংক্রমণ হতে পারে। গরমে খাবার পচে যায় বেশি। কিন্তু পোষ্যদের খাবার সবসময় চেখে দেখা হয় না। তাই পচা খাবার যাতে ওর পেটে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

হজমের সমস্যা ও অম্বল – জল কম খাওয়া, খাবার কম খাওয়া বা ভারী খাবার খাওয়ার জন্য হজমের সমস্যা হতে পারে। অ্যাসিডিটিও বাড়তে পারে।

খাবার ও জলে নজর রাখা জরুরি

শরীর থেকে জল কমে যাওয়া – আমাদের মতো আমাদের পোষ্যের শরীর থেকেও জল কমে যেতে পারে। যেহেতু পরিবেশের উষ্ণতা বেশি, তাই এই সময় জল কমা অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন দ্রুত হারে হতে থাকে। সাধারণভাবে কুকুর ও বিড়ালদের শরীরের তাপমাত্রা ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি থাকে। গরমকালে ১ ডিগ্রি কমবেশি ধরা হয়।

এঁটুলি বা পোকার সমস্যা – গরমকালে পোষ্যদের ১ ডিগ্রি ওঠানামা করে। কিন্তু এই তাপমাত্রা কখনও কখনও জ্বরের লক্ষণও হতে পারে বলে জানালেন চিকিৎসক শুভমিত্র চৌধুরী। তাঁর কথায়, এই তাপমাত্রার অন্যতম কারণ গায়ে এঁটুলি বা পোকা হওয়া। যা প্রাথমিকভাবে অধরা থেকে যায়। কিন্তু এর প্রাথমিক লক্ষণই হল জ্বর বা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। 

  • বোঝার উপায় ? সাধারণত তাপমাত্রা বেশি গরমের কারণে হতে পারে। আবার, এঁটুলির কারণেও হতে পারে। তাই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে নাকের দিকে। বেশিরভাগ প্রজাতির কুকুরের নাক কালো ও বেশিরভাগ প্রজাতির বিড়ালের নাক গোলাপী রঙের হয়। নাকের উপরের অংশ শুষ্ক থাকছে কি না সেটি দেখতে হবে।
  • কখন সমস্যা বাড়ে ? গরমকালে ভেক্টরবাহিত রোগের আশঙ্কা বেশি। তার মধ্যে কালবৈশাখীর সময় এই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। কারণ বৃষ্টির ফলে জীবাণু সংক্রমণ বাড়ে। তাই সবদিক থেকেই এই সময়টা আশঙ্কার।  বাইরের রোদ থেকে যতটা সম্ভব বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যাতে তাপমাত্রা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি না হয়।
  • ফাইলেরিয়া, ব্যাবেসিয়া ও ই ক্যানিস এই তিনটি রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়‌ গরমে। এটুলির কারণেই তা হয় বলে মনে করিয়ে দিলেন চিকিৎসক রিপন বিশ্বাস।

ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয় – শরীরে জল কমে যাওয়ার ফলে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়‌। এর থেকে বড়সড় রোগের আশঙ্কা থাকে পোষ্যের। 

ভাইরাল সংক্রমণ – এঁটুলি যেমন হয়, তেমনই হতে পারে ভাইরাল সংক্রমণ। যেমন এই সময় ক্যাট ফ্লু বেড়ে যায়‌। বর্তমানে তা কমলেও রেশ এখনও কাটেনি।

বিড়ালের জল খাওয়ার সমস্যা – জল খাওয়া নিয়ে পোষ্য বিড়ালরা একটু সমস্যা করে। কুকুররা নিয়মিত জল খেলেও বিড়ালরা তা নিয়মিত খায় না‌। যার ফলে সমস্যা আরও বাড়ে।

ডায়রিয়া ও মলের সমস্যা – ডিহাইড্রেশন থেকে আমাদের মতোই পোষ্যরাও ডায়রিয়াতে ভুগতে পারে। আবার জল কম খাওয়ার কারণে বিড়ালের মলের সমস্যা বেশি হয়। তারা নিজের ত্বক লেহন করে। যার ফলে প্রচুর লোম পেটে যায়। এই লোমগুলি মলের সঙ্গে মেশে, অন্যদিকে কম জলের কারণে মল প্রচণ্ড শক্ত হয়ে ফিকোলিথের (faecolith/faecalith) রূপ নেয়। গরমে এই সমস্যা বাড়ে।

ত্বকের সংক্রমণ – গরমের পাশাপাশি আবহাওয়া শুষ্ক হলে ত্বকের সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। আবার খুব আর্দ্র আবহাওয়া হয় বেশ কিছু জায়গায়। সেখানে কুকুরদের ডার্মাটাইটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানালেন রিপনবাবু। সেক্ষেত্রে পোষ্যের ব্যাকটেরিয়ালের পাশাপাশি ফাঙ্গাল ডার্মাটাইটিসও হতে পারে‌‌।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরেও প্রভাব ফেলে অতিরিক্ত গরম। এই সময় রোজই উষ্ণতা কমবেশি ৪০-এর বেশি বা তার আশেপাশে থাকে। যে কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। সাধারণ সময় যা থেকে রোগ হওয়ার কথা নয়, এই সময় তার থেকেও রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসক রিপন বিশ্বাসের কথায়, গরমের অস্বস্তির কারণে খাবার কম খেতে চায় পোষ্যরা। তার থেকেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে।

রাস্তার কুকুরের কারণে সমস্যা – রাস্তার কুকুরদের নিয়মিত টীকাকরণ হয় না। অন্যদিকে গরমে তারা বেশ আক্রমণাত্মক থাকে‌‌। তার উপর এই সময় রেবিসের সংক্রমণ বাড়ে। তাই পোষ্যকে নিয়ে বাইরে বেরোলে একটু সচেতন থাকতে হবে। রাস্তার কুকুরের সঙ্গে মেলামেশার কারণে সংক্রমিত হতে পারে পোষ্য।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়

পোষ্যের অতিরিক্ত যত্ন থেকেও হতে পারে সমস্যা 

অযথা ভিটামিন ট্যাবলেট – পোষ্যের যত্ন নেওয়া ভাল‌‌। কিন্তু অনেকে পোষ্যের অতিরিক্ত যত্ন নেন। যার কিছু খারাপ দিক রয়েছে। কেউ কেউ বাজার থেকে ভিটামিন ট্যাবলেট কিনে এনে পোষ্যদের খাওয়ান। যার ফলে তাদের শরীরের বিএমআর (বেসাল মেটাবলিক রেট) বেড়ে যায়। তখন শরীরের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়‌‌। 

বারবার এসি – গরম লাগছে বলে পোষ্যকে সবসময় এসি চালিয়ে রাখা ভাল নয়। এতে এসি থেকে বেরোলে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

বারবার সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে স্নান – গরম কালে আমরা অনেকেই দিনে ৩-৪ বার স্নান করি। পোষ্যকে ভাল রাখতে তাদেরও সপ্তাহে বেশ কয়েকবার স্নান করান অনেকে। এই স্নানের ফলে ত্বকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। প্রতিবার স্নানের সময় সাবান ও শ্যাম্পুর কারণে স্বাভাবিক সিবাম বেরিয়ে যায়। এই সিবাম ত্বককে অনেকটা সুরক্ষিত রাখে। তাই সংক্রমণ বেড়ে যায়। 

কীভাবে যত্ন নেবেন পোষ্যের ?

সকালে ও বিকেলে ১৫ মিনিট গ্রুমিং – পোষ্যকে ভালবাসলে তার সঙ্গে সময় কাটানোও জরুরি। তাই রোজ সকালে ও বিকেলে ওর সঙ্গে ১৫ মিনিট করে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক শুভমিত্র চৌধুরী। এই সময়টুকু গ্রুমিং ব্রাশ দিয়ে ওকে গ্রুম করতে হবে। এই গ্রুমিংয়ের ফলে নানা উপকার পায় পোষ্য। 

  • নিয়মিত গ্রুমিং করলে টিকবোর্ন অর্থাৎ এঁটুলিবাহিত রোগের আশঙ্কা কমবে অনেকটাই। যা এই সময় খুব বেশি হয়। এঁটুলি মূলত রাতের দিকে পোষ্যের শরীর থেকে রক্ত চোষে। এর ফলে সংক্রমণ ছাড়াও অ্যানিমিয়া হতে পারে। তাই সকাল বিকেলের এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ।
  • ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এই ব্রাশিং। কারণ আমাদের ত্বকই সবচেয়ে বড় রোগ প্রতিরোধী অঙ্গ। 

খাবার ও জলের দিকে নজর রাখতে হবে – খাবার ও জল যাতে সংক্রমণমুক্ত হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। খাবার ও জলের পাত্র পরিস্কার রাখতে হবে।

হালকা খাবার খাওয়ানো – বিএমআর বেড়ে যায় এমন খাবার না খাওয়ানোই ভাল। পুষ্টিকর খাবার বলতেই অনেকে মাছ, মাংস বোঝেন। কিন্তু রোজ সেগুলি দিলে শরীর গরম হয়ে যায়। তাই এই সময় হালকা ও পুষ্টিকর সবজি জাতীয় খাবারও খাওয়ানো যায়।

হাইড্রেশন – গরমে শরীর সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি হাইড্রেশন। তাই এই সময় বেশি করে জল খাওয়ানো গেলে তার থেকে ভাল আর কিছু হয় না। 

একদিন অন্তর একদিন‌ স্নান – পোষ্যকে সুস্থ ও চাঙ্গা রাখতে একদিন অন্তর একদিন স্নান করানোর পরামর্শ দিলেন রিপনবাবু। তবে এই স্নানের সময় কোনও সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভাল। ওটা আগের মতোই সপ্তাহে একদিন ব‌্যবহার করা ভাল। একান্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হলে ময়শ্চারাইজিং শ্যাম্পু দিতে বললেন তিনি। এছাড়াও স্নানের পর ওর লোম দ্রুত শুকিয়ে ফেলতে হবে। তাহলে বারবার স্নানেও সংক্রমণের ভয় থাকবে না।

এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ – সরাসরি এসির বদলে একটু আড়ালে রাখা ভাল। এসিতে রাখতে হলে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে বলে জানালেন রিপনবাবু‌। 

চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ  – নিজে থেকে অতিরিক্ত পুষ্টির জন্য ভিটামিনস বা বিএমআর বেড়ে যায় এমন ওষুধ না খাওয়ানোই ভাল‌। বরং কোনও ওষুধ প্রয়োজন হলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়ানোই ভাল।

চিকিৎসকের সঙ্গে বেশি পরামর্শ – গরমে যেহেতু সমস্যা বাড়ে তাই এই সময় একটু বেশি পরামর্শ নেওয়া ভাল‌। শীতকালের তুলনায় এই সময় একটু বেশি ঘন‌ ঘন পোষ্যের চেকআপ করালে ভাল সয় বলে জানালেন শুভমিত্রবাবু। তবে ১২-৩টের সময়টা এড়িয়ে চলাই ভাল।

বি়ড়ালেরও হতে পারে নানা সমস্যা
বি়ড়ালেরও হতে পারে নানা সমস্যা

কখন যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে ?

  • পোষ্য চাঙ্গা মেজাজে আছে কি না দেখে নিন। সাধারণত সুস্থ পোষ্য খেলাধুলা করে, ঠিকমতো খাবার খায়। তা না হলে তার শারিরীক অসুস্থতা থাকতে পারে। এই সময় চিকিৎসক দেখান। 
  • মলের রং বা ধরনে বদল দেখলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা, ডায়রিয়া থাকলে মলের ধরন বদলে যায়। 
  • গায়ে এঁটুলি দেখা গেলে অবশ্যই যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। একটা দুটো দেখা গেলেও তাকে অবহেলা করা যাবে না। 

(সব ছবি ঋণ – পিটিআই)

আপনার পছন্দের খবর এবার হোয়াটসঅ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে।

আরও পড়ুন – Health News: তাপপ্রবাহ, জ্বালাপোড়া, মারণরোগের বাড়বাড়ন্ত; মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের জেরেই কি দুরবস্থা ভোগ ?

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator