অন্ধকারে টর্চ জ্বালিয়ে সিজার, মুম্বইয়ে মর্মান্তিক ভাবে প্রাণ গেল মা ও শিশুর

মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে সিজারিয়ান ডেলিভারি করেছিলেন ডাক্তাররা। অন্ধকারে খেই হারিয়ে মারা গিয়েছিলেন মা এবং শিশু উভয়ই। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে, মুম্বইয়ের সুষমা স্বরাজ ম্যাটারনিটি হোমে। দেশের সবচেয়ে ধনী পৌর কর্পোরেশন বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশন (বিএমসি) পরিচালনা করে এই হাসপাতাল, যার বাজেট ৫২,০০০ কোটি টাকারও বেশি। এমনকি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দকৃত পরিমাণ ১২ শতাংশ, যা প্রায় ৬,২৫০ কোটি টাকা।

মহিলার মৃত্যুর পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ করে আসছে ওই মহিলার পরিবার। অবশেষে বিএমসি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। জানা গিয়েছে, ওই মহিলার নাম ছিল সাহিদুন, বয়স ২৬ এবং তাঁর স্বামীর নাম খুসরুদ্দিন আনসারি। স্বামী প্রতিবন্ধী, তাঁর একটি পা নেই। দুজনের বিয়ে হয়েছিল ১১ মাস। সোমবার সাহিদুনের ডেলিভারির সময় হাসপাতালের আলো নিভে যাওয়ার পর তিন ঘণ্টা জেনারেটর না চালানোর অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। পরিবার আরও জানিয়েছেন, সাহিদুন ও শিশুর মৃত্যুর পরও থেমে থাকেননি চিকিৎসকেরা, অন্ধকারে আরও একটি ডেলিভারি করিয়েছিলেন তাঁরা।

  • লাইট নিভে গেলেও জেনারেটর চালু হয়নি

আনসারীর মা জানিয়েছেন, আমার পুত্রবধূর গর্ভাবস্থার সব রিপোর্টই ঠিক ছিল। আমরা তাকে ২৯ এপ্রিল সকাল ৭ টায় প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাঁকে সারাদিন ভর্তি করে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। আমাদের বলা হয়েছিল সবকিছু ঠিক আছে। প্রসব স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু, আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখেছিলাম যে ততক্ষণে সে রক্তে ভিজে গিয়েছিল। ডাক্তাররা তার পেটে একটি ছেদ করে আমাদের স্বাক্ষর নিতে এসেছিলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সাহিদুনের স্ট্রোক হয়েছে এবং সি সেকশন প্রয়োজন। এরপর লাইট নিভে গেলেও চিকিৎসকরা আমাদের অন্য হাসপাতালে পাঠাননি। তাঁরা ফোনের টর্চ লাইটের সাহায্যে ডেলিভারি করেছিল। প্রসবের সময়ই শিশুটি মারা যায়। ডাক্তাররা আমাদের বলেছিলেন যে মা বেঁচে থাকবেন এবং তারপর আমাদের সায়ন হাসপাতালে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে সাইদুনও মারা গিয়েছে। তার জন্য অক্সিজেন পর্যন্ত ছিল না।

চিকিৎসকদের শাস্তি দিতে হবে এবং হাসপাতাল বন্ধ করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন ওই নারীর স্বামী। আমি যেমন কষ্ট পাচ্ছি, তেমনই ডাক্তার ও কর্মচারীদের শাস্তি হওয়া উচিত। হাসপাতাল বন্ধ করতে হবে। আনসারী বলেন, আমি বিচার চাই। আমার আয় খুবই কম এবং আমি প্রতিবন্ধী। খুব কষ্টে বিয়ে করেছিলাম এবং এখন আমার জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরিবারটি কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো দেখিয়ে সেলফোন টর্চের সাহায্যে একই অপারেশন থিয়েটারে দ্বিতীয় ডেলিভারি করার প্রমাণও দেখিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন বিজেপি বিএমসি কাউন্সিলর জাগরিতি পাতিল বলেছেন যে তিনি মুম্বই উত্তর পূর্ব লোকসভা আসনের প্রার্থী মিহির কোটেচার সঙ্গে দেখা করেছেন। এই হাসপাতালটি এই বিধানসভা আসনের অধীনে আসে। বিএমসি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পাতিল আরও জানিয়েছেন, হাসপাতালের অবস্থা খারাপ। এর আগেও হাসপাতাল নিয়ে এমন অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।