২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার কি আদৌ বৈধতা থাকতে পারে? জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট

কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের জেরে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–অশিক্ষক কর্মীর চাকরি খোয়া গিয়েছে। এখন এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেলই বাতিল করে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। এই নিয়ে রাজ্য–রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে এবার ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট মামলা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। তাই বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, সিবিআই রিপোর্টে ওই পরীক্ষা নিয়ে অনিয়মের কথা বলেছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ টেট পাশ করা ও ফেল করা প্রার্থীদের পৃথক করতে পারছে না। সুতরাং ওই পরীক্ষার কি আদৌ বৈধতা থাকতে পারে?

এই প্রশ্ন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা তুল দেওয়ায় আবার অনিশ্চয়তার মেঘ দেখতে শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই আবহে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জানতে চান, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কি পাশ–ফেল করা প্রার্থীদের পৃথক তালিকা জমা দিতে পারবে?‌ টেট পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত ভুয়ো ওয়েবসাইটে যাঁদের নাম ছিল এবং চাকরির জন্য টাকা দিয়েছেন তাঁদের কি অযোগ্য বলা যেতে পারে? এই প্রশ্ন তুলে পর্ষদ–সহ সব পক্ষের মতামত জানতে চেয়েছেন বিচারপতি। আগামী জুন মাসের শেষে আবার এই মামলার শুনানি হবে। তাই একরাশ আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে। এই বিষয়ে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‌কারা টেট পাশ করেছিলেন এবং কারা করেননি সেটা পর্ষদ বলতে পারছে না। তাই পৃথক করে দেখা যাচ্ছে না। তবে যাঁদের কাছে উত্তরপত্রের প্রতিলিপি আছে তাঁদের পাশ–ফেল নিয়ে চিন্তা থাকার কথা নয়।’‌

আরও পড়ুন:‌ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত কংগ্রেস, জয়রাম রমেশের মন্তব্য শোরগোল

আর একটি বিষয় সামনে এসেছে। সেটি হল—২০১৬, ২০২০ ও ২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা। প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরির আবেদন করার ক্ষেত্রে টেট পাশ বাধ্যতামূলক। এখানে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি চলাকালীন উত্তরপত্র এবং তার স্ক্যান করা প্রতিলিপি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাই সবপক্ষের কথা শুনে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা তাঁর লিখিত নির্দেশে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে এবং ওই উত্তরপত্র স্ক্যান করার দায়িত্বে থাকা সংস্থা এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী টেট পরীক্ষা নিতে কী নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল?‌ কেন টেন্ডার ছাড়া এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানিকে বরাত দেওয়া হল?‌ জানতে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

এছাড়া এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানির এক কর্মী কেন মেধাতালিকা পর্ষদের সরকারি ই–মেলে না পাঠিয়ে মানিক ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত ই–মেলে পাঠিয়েছিলেন? আসল উত্তরপত্র কেন পর্ষদ ওই সংস্থার কাছ থেকে ফেরত চাইল না? এইসব প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার উত্তরপত্রই স্ক্যান করা হয়েছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানি প্রায় আট হাজার উত্তরপত্রের প্রতিলিপি পর্ষদকে পাঠিয়েছিল। ৭৫২ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরে অবশ্য পাশ করেছে বলে দেখানো হয়। সব উত্তরপত্র স্ক্যান করা না থাকলে সেটা সম্ভব হতো না। এমনকী ২,৮৩০ জন পরীক্ষার্থীকে বাড়তি এক নম্বর দেওয়াও সম্ভব হতো না বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট।