কে এই পলাতক কারাবন্দি মোহাম্মদ আমরা?

ফ্রান্সের প্যারিসে আলোড়ন ফেলেছে এক কারাবন্দির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৪ মে) মোহাম্মদ আমরা নামের এক সন্দেহভাজন ড্রাগ মাফিয়াকে কারাগার থেকে রুয়েন আদালতে স্থানান্তর করা হচ্ছিলো। এসময় হঠাৎ ভারী অস্ত্রে সজ্জিত এক দল মুখোশ পরা বন্দুকধারী পুলিশের গাড়িতে হামলা করে আমরাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় মুখোশধারী বন্দুকধারীদের গুলিতে দুই কারা কর্মকর্তা নিহত ও আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার পর সন্দেহভাজন এই মাফিয়াকে নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন—কেই এই ড্রাগ মাফিয়া যাকে উঠিয়ে নিতে দিনে দুপুরে প্যারিসের মতো স্থানে গুলি চালানো হলো।

পলাতক এই কারবন্দির পরিচয়

মার্কিন সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পলাতক এই কারাবন্দির নাম মোহাম্মদ আমরা। ফরাসি মিডিয়াগুলো বলছে, স্থানীয়ভাবে তিনি ‘লা মোচে’ বা ‘মাছি’ নামেও পরিচিত।

৩০ বছর বয়সী এই ড্রাগ ডিলার উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্সিলিস শহরের শক্তিশালী গ্যাং ‘ব্ল্যাকস’ এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তার।পাবলিক প্রসিকিউটর ‍লুর বাকু জানিয়েছেন, কিডন্যাপিং ও হত্যা মামলায় আমরার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছিলো।

তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে স্পেনে এক ফরাসিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, চুরি দায়ে সম্প্রতি তাকে ১৮ মাসের কারাভোগের সাজা দেওয়া হয়েছে। কারাগারে তাকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। ফরাসি পত্রিকা লা ফিগারোকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তবে তাকে উগ্রপন্থি কারাবন্দি হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।

বিএফএম টিভি জানিয়েছে, চুরি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া্ গাড়ি চালানো এবং পুলিশ বাধা উপেক্ষা করে পালিয়ে যাওয়ার মতো ছোটখাটো ১৩টি অপরাধে দোষী সাবস্ত্য তিনি।

পালানোর প্রচেষ্টাসমূহ

লা পিরিসিয়েনকে একটি কারা সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের ভ্যানে হামলা হওয়ার দুদিন আগে তিনি কারাগারের রড কাটার চেষ্টা করেছিলেন।

বেশ কিছুদিন তাকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছিল। এসময় তাকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয়। এমনকি আমরাকে স্থানান্তরের সময় অতিরিক্ত রক্ষীও মোতায়েন করা হয়।

আকস্মিক এই হামলায় যা ঘটেছিল

রুয়েনে আদালতের শুনানি শেষে আমরাকে নরমান্ডির এবরক্স কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। এসময় কারাগার থেকে ৩৫ মাইল দূরে পুলিশের ভ্যানে হঠাৎ দুটি গাড়ি থেকে হামলা চালানো হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে একটি কালো এসইউভি গাড়িকে একটি সাদা গাড়িতে ধাক্কা দিতে দেখা গেছে।

ফরাসি সম্প্রচারমাধ্যম বিএফএম টিভি জানিয়েছে, বন্দুকধারীদের ব্যবহার করা দুটি গাড়ির একটি সম্প্রতি সিন-এত-মার্ন এলাকা থেকে চুরি হয়েছিল। পালানোর আগে হামলাকারীরা প্রথম গাড়িট আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে ঘটনাস্থলে দুটি গাড়িকেই পুড়ে যাওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।

টুল প্লাজার কাছে হওয়া এই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এসময় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।

ফুটেজে দুইজন হামলাকারীকে রাইফেল হাতে আগুনে পুড়তে থাকা এসইউভি গাড়িটির চারপাশে চক্কর দিতেও দেখা গেছে।

আমরার মা ও তার আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া

আমরার আইনজীবি হাগস ভিজিয়ের বলেছেন, এ ধরণের ‘জঘন্য’ সহিংসতার ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।

আমরা সম্পর্কে ফরাসি সম্প্রচারমাধ্যম বিএফএম টিভিকে তিনি বলেছেন, ‘তার সম্পর্কে আমার যে ধারণা সেটির সঙ্গে এর কোনও মিল নেই।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে তিনি যদি কোনওভাবে জড়িত থাকেন, তবে আমি বলব, মোহাম্মদ আমরা কীভাবে কাজ করে এবং তিনি কী করতে পারেন সে সম্পর্কে আমার ধারণা ভুল।’

পরিকল্পিত এই হামলা সম্পর্কে আমরার মা কিছুই জানতেন না। তিনি বলেন, ‘সে আমার সঙ্গে কিছু বলে না। সে আমার ছেলে সত্যি, তবে আমরা সঙ্গে কোন্রকিছু নিয়েই আলাপ করে না সে।’

আরটিএলকে হামলা ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় আমরার মা বলেন, ‘আমি সত্যিই আশাহত হয়েছি। আমি কেঁদে ফেলেছি-আমার এত খারাপ লাগছিলো-এভাবে কীভাবে মানুষে প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়?’

হামলা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার সকালের এই হামলার পর ঘটনাস্থলে কয়েকশ পুলিশ মোতয়েন করা হয়েছে।

সামজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল দারমানিন বলেছেন, ‘এই অপরাধীদের খুঁজে পেতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমার নির্দেশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কয়েকশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’

এই হামলার তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর লুর বাকু। তিনি জানান, এটিকে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ ও হত্যা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।