Crime News: ঘনঘন প্লেনে উঠতেন চুরি করার জন্য! অভিযুক্তকে আটক করতেই প্রকাশ্যে তথ্য

শুধু ট্রেনেই নয়, ফ্লাইটেও ঘটছে চুরির ঘটনা। সম্প্রতি, এমনই একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ওই অভিযুক্ত নাকি দেশের বিভিন্ন রাজ্যের উদ্দেশে উড়ে যাওয়া ফ্লাইটে উপস্থিত যাত্রীদের হাতব্যাগ থেকে গয়না এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করত। সে ফ্লাইটেই চাপত চুরি করার জন্য। সোমবার দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এই অভিযুক্তের নাম রাজেশ কাপুর। বয়স ৪০ বছর।

কাপুর ২০০৫ সাল থেকে এমন কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ। বহু বছর ধরে তিনি ট্রেনের এসি কোচে যাত্রীদের কাছ থেকে চুরি করতেন। পরে, তিনি ফ্লাইটে এ কাজ শুরু করেন। বিমানে অপরাধ চক্র চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি প্রায় ১১০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ২০০ বার বিমানে চেপেছিলেন। কখনও কখনও দিনে ৪-৫টি ফ্লাইটেও চড়েছেন। চুরি করে করে এখন একটি হোটেলেরও মালিক তিনি।

  • পাহাড়গঞ্জ থেকে গ্রেফতার আসামী

দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনের সময় পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (আইজিআই) ঊষা রঙ্গনানি জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে পাহাড়গঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চুরি যাওয়া গয়না সেখানেই রেখেছিল চোর। তিনি বলেছিলেন যে অভিযুক্ত গয়নাগুলো ৪৬ বছর বয়সী শরদ জৈনের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল। করোলবাগ থেকে ওই শরদ জৈনকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রঙ্গনানি আরও বলেছেন, গত তিন মাসে বিভিন্ন ফ্লাইটে চুরির দু’টি পৃথক ঘটনা ঘটেছে, এরপর অপরাধীকে ধরতে আইজিআই বিমানবন্দরের একটি দল গঠন করা হয়েছিল।

  • এইভাবেই শেষ হল কাপুরের চৌর্যবৃত্তি

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১১ এপ্রিল একজন যাত্রী হায়দরাবাদ থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন, কিন্তু এই সময় বিমানেই তাঁর সাত লক্ষ টাকার গয়না চুরি হয়ে গিয়েছিল। এরপর ২ ফেব্রুয়ারি চুরির আরও একটি একইরকম ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। অমৃতসর থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন এক আমেরিকান যাত্রী। এসময় তাঁর ২০ লাখ টাকার গয়না চুরি হয়ে গিয়েছিল। এরপরই বিষয়টিতে জোরদার ভাবে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। রঙ্গনানি আরও বলেছেন যে এই চুরির মামলাগুলির তদন্তের সময়, দিল্লি এবং অমৃতসর বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ এবং ফ্লাইট সম্পর্কিত প্রমাণগুলি খতিয়ে দেখে, এই ঘটনায় সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছিল।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন যাত্রীর ফোন নম্বর সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স থেকে নেওয়া হলেও ফ্লাইটের টিকিট বুকিংয়ের সময় একটি ভুয়ো নম্বর দিয়েছিল সে। পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঊষা জানিয়েছেন, প্রযুক্তিগত নজরদারির পর অভিযুক্তের সঠিক ফোন নম্বর সামনে আসে। পুলিশ জানিয়েছে যে ওই ব্যক্তিকে কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গিয়েছে যে অভিযুক্ত এমন আরও পাঁচটি চুরির মামলায় জড়িত। অভিযুক্তের দাবি, যাত্রীদের বহুমূল্য জিনিস চুরি করে বেশিরভাগ নগদ সে অনলাইন এবং অফলাইন জুয়ায় ব্যয় করেছে।

  • কীভাবে চুরির জাল সাজিয়েছিল চোর

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মূলত নিজের জন্য সহজ লক্ষ্য খুঁজত। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী বয়স্ক মহিলাদের টার্গেট করা হত। কারণ, অভিযুক্ত জানত যে বেশিরভাগ যাত্রীরা নিজেদের হ্যান্ডব্যাগে মূল্যবান জিনিসপত্র বহন করে, তাই সে বড় মাপের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, যেমন এয়ার ইন্ডিয়া এবং ভিস্তারা ফ্লাইটে চড়ে দিল্লি, চণ্ডীগড় এবং হায়দ্রাবাদে যাতায়াত করত। চুরির সময় হলে অভিযুক্ত চুপিসারে ওভারহেডের কাছে গিয়ে যাত্রীদের হ্যান্ডব্যাগ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিত। যাত্রীরা বিমানে উঠে সিট খুঁজতে যখন ব্যস্ত থাকতেন, সেই সময়ই কাজ সেরে নিত চোর। চোর নিজেই জানিয়েছে যে অনেক সময় সে নাকি লক্ষ্যের কাছাকাছি বসার জন্য সিট বদলও করতেন। নিজের কাজের জন্য এমন একটি সময় বেছে নিতেন যখন যাত্রীরা বিমানে ওঠা বা চড়ার দিকে মনোনিবেশ করতেন এবং চুরিও ধরা পড়ত না। এয়ারলাইন্স ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের পরিচয়ও পরিবর্তন করত। এমনকি মৃত ভাইয়ের নামেও টিকিট বুক করত চোর।