ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু

আইপিএলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচকে। ঠিক তাই হলো। ম্যাচের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে অফ নিশ্চিত করলো বেঙ্গালুরু। অথচ প্রথম আট ম্যাচে মাত্র একটি জিতেছিল তারা। দশ দলের তালিকায় ছিল সবার শেষে। টানা ছয় হারের পর বেঙ্গালুরু উড়তে থাকা সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়ে সেই যে ঘুরে দাঁড়ালো, এরপর শনিবার টানা ষষ্ঠ ম্যাচ জিতে তারা নিশ্চিত করলো পরের পর্ব। 

জিততে ২১৯ রান করতে হতো চেন্নাই সুপার কিংসকে। কিন্তু হেরেও বেঙ্গালুরুকে টপকে প্লে অফ নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল তাদের সামনে, এজন্য ২০১ রান করলেই হতো। রাচিন রবীন্দ্রর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেই চ্যালেঞ্জ সহজ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তার বিদায়ের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারালেও চেন্নাই ঘুরে দাঁড়ায় মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাটে। তাদের জুটিতে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বল পর্যন্ত বুক কেঁপেছিল বেঙ্গালুরুর। তবে জয় হয়েছে তাদেরই। ৭ উইকেটে ১৯১ রান করে চেন্নাই। ২৭ রানে জেতে বেঙ্গালুরু।  

লক্ষ্যে নেমে তৃতীয় ওভারে ১৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল চেন্নাই। কিন্তু আজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে রাচিন রবীন্দ্র হাল ধরেন। দশম ওভারে দলীয় ৮৫ রানে এই জুটিকে আলাদা করেন লোকি ফার্গুসন। ৩৩ রানে ফিরে যান রাহানে। ভেঙে যায় ৬৬ রানের জুটি।

নতুন ব্যাটার শিবম দুবে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। তবে আরেক প্রান্ত থেকে রাচিন রানের গতি বাড়াতে থাকেন। তবে নিজের ভুলে দলের জন্য বিপদ ডেকে আনেন নিউজিল্যান্ড ব্যাটার।

১৩তম ওভারের শেষ বলে ডিপে বল পাঠান রাচিন। তারপর দ্বিতীয় রান নিতে দুবেকে ডাক দেন। ভারতীয় ব্যাটার যখন তার ডাকে সাড়া দেন, তখন আবার ফিরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। স্ট্রাইকিং প্রান্তে স্বপ্নীল সিংয়ের ছোঁড়া বলে কার্তিক স্টাম্প ভেঙে দেন। দুবে নন স্ট্রাইক এন্ডে, আর ক্রিজের বাইরে থাকায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় রাচিনকে। ৩৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ে আউট তিনি ৬১ রান করে।

ম্যাচের মোমেন্টাম যেন হারায় চেন্নাই। ক্যামেরন গ্রিনের বলে পরের ওভারে ৭ রান করে ফার্গুসনের ক্যাচ হন দুবে। ১৫ বল খেলেন তিনি। দুবেকে ৪ রানে জীবন দেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করেন মোহাম্মদ সিরাজ। পরের ওভারে তার বলে মিচেল স্যান্টনার আউট হন। মিড অফে উড়ানো বল ডু প্লেসি একটু লাফিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে দেন, বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে বল হাতে নেন। হতবাক করা ক্যাচে নিউজিল্যান্ড ব্যাটারকে ফেরান তিনি।

১৫তম ওভার শেষে ১২৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে চেন্নাই। ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন জাদেজা ও ধোনি। বল বুঝে চার-ছক্কায় গ্যালারি মাতান তারা। প্লে অফে উঠতে শেষ ওভারে লাগতো ১৭ রান। প্রথম বলে পুল করে বিশাল ছক্কা হাঁকান ধোনি। উল্লাসে ফেটে পড়ে তার সমর্থকরা। পরের বলে ব্যাকওয়ার্ড ডিপ স্কয়ার লেগে তিনি স্বপ্নীলের ক্যাচ হন বাউন্ডারির সামনে। শেষ ৪ বলে ১১ রান নিতে পারেননি জাদেজা ও শার্দুল ঠাকুর। শেষ ভরসা ছিলেন জাদেজা, সিঙ্গেল নিয়ে তিনি যখন স্ট্রাইকে, দুই বলে লাগতো ১০ রান। পঞ্চম বলে ডট দিতেই উল্লাসে মেতে ওঠে স্বাগতিক দলের সমর্থকরা। ওভার শেষে প্লে অফে উঠতে তখনও ১০ রান পেছনে চেন্নাই। জাদেজা ২২ বলে তিনটি করে চার ও ছয়ে ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন।

বেঙ্গালুরুতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বিরাট কোহলি ও ডু প্লেসি স্বাগতিকদের শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। দুজনের জুটি ৭৮ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হয়। ২৯ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ে ৪৭ রানে মিচেল স্যান্টনারের বলে ড্যারিল মিচেলকে ক্যাচ দেন কোহলি।

অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেন ডু প্লেসি

এরপর রজত পতিদারকে নিয়ে জুটি বড় করতে পারেননি ডু প্লেসি। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরি করে থামেন। ৩৯ বলে তিনটি করে চার ও ছয়ে ৫৪ রান করেন তিনি। রজত পতিদারের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৩৫ রানের।

বেঙ্গালুরু ঝড় তোলে শেষ ৫ ওভারে, এই সময়ে ৮০ রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়। রজতের সঙ্গে ক্যামেরন গ্রিন আগ্রাসী ব্যাটিং করেন। ৭১ রানের জুটি গড়েন দুজনে। রজত ২৩ বলে দুই চার ও চার ছয়ে ৪১ রানে থামেন।

শেষ দিকে দিনেশ কার্তিকের ৬ বলে ১৪ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ৫ বলে ১৬ রানের ক্যামিও ইনিংসে বেঙ্গালুরুর স্কোর দুইশ ছাড়ায়। গ্রিন ১৭ বলে তিনটি করে চার ও ছয়ে ৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৫ উইকেটে ২১৮ রান করে বেঙ্গালুরু।

কলকাতা নাইট রাইডার্স, রাজস্থান রয়্যালস, হায়দরাবাদের পর শেষ দল হিসেবে প্লে অফে উঠলো বেঙ্গালুরু। ১৪ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট তাদের। সমান পয়েন্ট পেলেও রান রেটে পিছিয়ে থেকে পাঁচে নেমে ছিটকে গেলো চেন্নাই।