রেমালে রক্ষা অল্পের জন্যই, কেন বারে-বারে পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়ছে দৈত্যাকার সাইক্লোন?

সাগরের জলের উষ্ণতা বাড়ছে, মেরু অঞ্চলে গলছে হিমবাহ, আর জলভাগের এই সার্বিক অবক্ষয়-উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রভাব পড়ছে আবহাওয়া-জলবায়ুতের ঘটনাগুলিতেও। প্রশ্ন উঠছে, ঘন ঘন কেন সংগঠিত হচ্ছে এতো ঘূর্ণিঝড়? আমরা সাম্প্রতিককালে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় প্রত্যক্ষ করলাম। আমফান, ইয়াস, বুলবুল, রেমাল একের পর এক সাইক্লোন বঙ্গোপসাগর থেকে উৎপন্ন হয়ে আছড়ে পড়েছে ওড়িশা, বাংলা ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলভাগ জুড়ে। আবহাওয়াবিদরা জানান, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং এল নিনো’র নিরপেক্ষতার কারণে সাগরের পরিবেশগুলোও অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। যেমন- ভারত মহাসাগরও স্বাভাবিকের তুলনায় তাপমাত্রা এক-দুই ডিগ্রি বেশি উষ্ণ হয়ে উঠেছে।এসব কারণে ঝড়গুলো এখন ঘন ঘন আঘাত হানছে উপকূলগুলোতে।

আগে যেখানে বড় মাপের এই সাইক্লোনগুলি কয়েক বছর অন্তর আঘাত হানত উপকূলে, সেখানে এখন প্রতি বছর মে মাসের ২০-২৫ তারিখ নাগাদ সিভিয়র সাইক্লোনগুলি উপকূলে আছড়ে পড়ছে। যতদিন বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা না কমে, ততদিন নিস্তার নেই উপকূলের রাজ্যগুলির। অন্যদিকে কিছু বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, মূলত বঙ্গোপসাগরের ত্রিভুজ আকৃতি এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হয়ে আসছে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা। আবহাওয়াবিদদের মতে, সামুদ্রিক জলোচ্ছাস সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে অবতল আকৃতির অগভীর উপসাগরে। মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাস যখন এরকম জায়গায় সাগরের জলকে ঠেলতে থাকে, তখন সাগরের ফুঁসে উঠা জলরাশি চোঙা বরাবর ছুটতে থাকে।

‘ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামের একটি ওয়েবসাইটে বিশ্বের ৩৫টি সবচাইতে ভয়ঙ্কর মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা রয়েছে। জানা গেছে, এই তালিকার ২৬টি ঘূর্ণিঝড়ই তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এই ঘূর্ণিঝড়েই বারেবারে বিপর্যস্ত হয় ভারত-বাংলাদেশ। এবছর রেমাল ঘূর্ণিঝড়টি ১২০-১৪০ কিমি বেগে উপকূলে আছড়ে পড়লেও কোটাল কিংবা পূর্ণিমা, অমাবস্যার সময় না হওয়ায় তুলনায় শান্ত ছিল নদী-সাগরের জল। ফলে অল্পের মধ্যেই এবারের দুর্যোগ কেটেছে, তবে আগামীতে সার্বিকভাবে জলবায়ু সংকট রোখা না গেলে আরও ঝড়ে-ঝাপটায় বিপন্ন হলে বদ্বীপ উপকূল অঞ্চল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্র জলতল বৃদ্ধির ফলে আগামী ৩০-৪০ বছরেও সুন্দরবনের বহু দ্বীপ ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেবল বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা যাবে না দুই বাংলার জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটি।