T20 World Cup 2024 Jasprit Bumrah exclusive unknown story shared by his bowling partner of ranji trophy roosh kalaria after IND vs PAK

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: হাতে মাত্র ১১৯ রানের পুঁজি। প্রতিপক্ষ শিবিরে আবার বাবর আজ়ম, মহম্মদ রিজওয়ানের মতো বিশ্ব ক্রিকেটের তাবড় সব নাম। ভারতের অতি বড় সমর্থকও রবিবার ভাবতে পারেননি যে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের রুখে দেবে টিম ইন্ডিয়া।

কিন্তু কার্যত অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে ভারত (India vs Pakistan)। ১১৩ রানে আটকে দিয়েছে পাকিস্তানকে। ৬ রানে ম্যাচ জিতে সুপার এইটের দিকে আরও এক কদম এগিয়ে গিয়েছেন রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma)।

নিউ ইয়র্কে যে জয়ের পর হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে যশপ্রীত বুমরাকে (Jasprit Bumrah) নিয়ে। রবিবারের ম্যাচে তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ৪-০-১৪-৩। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য! শিকারের তালিকায়? মহম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম ও ইফতিকার আমেদ। কার্যত একা হাতে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালিয়েছেন আমদাবাদের ডানহাতি পেসার। যত দিন যাচ্ছে, বল হাতে যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছেন। বুমরার এই পরিবর্তন দেখে অবশ্য অবাক নন রুশ কালারিয়া। প্রায় ১৫ বছর আগেই যেন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন বুমরার ভবিষ্যৎ।

ঘরোয়া ক্রিকেটে রুশ কালারিয়া (Roosh Kalaria) পরিচিত নাম। গুজরাতের বাঁহাতি পেসার বুমরার দীর্ঘদিনের সতীর্থ। রঞ্জি ট্রফি হোক বা সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি, বুমরার অভিষেকের সাক্ষী থেকেছেন কালারিয়া। বেশিরভাগ ম্যাচে তিনিই ছিলেন নতুন বলে বুমরার পার্টনার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সতীর্থের বোলিং বিক্রম দেখেছেন টিভিতে। সোমবার আমদাবাদ থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে কালারিয়া বলছিলেন, ‘যখন একসঙ্গে খেলা শুরু করি, তখন আমাদের বয়স বছর সতেরো হবে। গুজরাতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পেয়েছিলাম দুজনই। সেই থেকে প্রায় ১০ বছর একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। জুনিয়র ও সিনিয়র – দুই পর্যায়ে প্রচুর ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছি। তারপর থেকে ওকে যেভাবে বোলার হিসাবে পাল্টে যেতে দেখেছি, অভাবনীয়। ও খুব স্মার্ট বোলার। বছরের পর বছর ধরে অনেক কিছু শিখেছে। এবং খুব দ্রুত শিখেছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি খুব ভাল বুঝতে পারে। কখন রান আটকে রাখার বোলিং করবে আর কখন উইকেট তোলার জন্য আগ্রাসী বোলিং করবে, সেটা ওর মতো ভাল কমজনই জানে।’ 

বুমরার সবচেয়ে বড় গুণ কী? গুজরাত রাজ্য দলে বুমরার এক সময়কার বোলিং পার্টনার বললেন, ‘১৭-১৮ বছর বয়স থেকে ওকে দেখছি। সেই থেকেই ভীষণ স্মার্ট বোলার। দলের সকলে ওর যে গুণটা পছন্দ করে, সেটা হল ওর লড়াকু মানসিকতা। দল ওকে যে দায়িত্ব দেয়, সেটা পালন করে। সেটা রাজ্য দল হোক বা জাতীয় দল। গত ৬-৭ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করে চলেছে। পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায় না।’

আলাপ হয়েছিল কোথায়? ‘আমদাবাদে অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে জেলা স্তরের একটা টুর্নামেন্টে ওকে প্রথম দেখেছিলাম। সেখানেই আলাপ। তারপর প্রচুর ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছি,’ বলছিলেন কালারিয়া। বুমরার যে ইয়র্কার গোটা বিশ্বের তাবড় ব্যাটারদের কাছে দুঃস্বপ্ন, সেই অস্ত্র এত ধারাল হয়ে উঠল কীভাবে? কালারিয়া শোনালেন সেই গল্প। বললেন, ‘ওর ইয়র্কার বরাবরই ভয়ানক। প্রচুর প্র্যাক্টিস করত। মূল প্র্যাক্টিস সেশনের পর আলাদা করে ইয়র্কার বোলিং প্র্যাক্টিস করত। তাতেই ছোট থেকে ও ইয়র্কারে নিখুঁত। পরে সেটাই ওর প্রধান অস্ত্র হয়ে ওঠে। ওর অ্যাকশন অদ্ভূত। ও স্টাম্প লক্ষ্য করে বল করতে পছন্দ করে। প্র্যাক্টিসের সময় ব্লক হোলে (স্টান্স নেওয়ার সময় ব্যাটারের ব্যাট আর পায়ের মাঝের ফাঁক) নিজের জুতো রাখত আর চেষ্টা করত অন্তত ৭০ শতাংশ বল সেই জুতোয় ফেলার। যেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারের পা সেটাই। সেই জুতো লক্ষ্য করে অক্লান্তভাবে বল করে যেত। ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ৩-৪ ওভার করে বোলিং করত। সেভাবেই নিজের ইয়র্কার এত ভয়ঙ্কর করে তুলেছে বুমরা।’

২০১৬-১৭ মরশুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল গুজরাত। রঞ্জি ট্রফি জিতেছিল তারা। সেই দলের সেরা দুই পেস অস্ত্র ছিলেন কালারিয়া ও বুমরাই। কালারিয়ার কথায়, ‘রঞ্জি ট্রফিতে দুজনে মিলে একসঙ্গে গুজরাতকে চ্যাম্পিয়ন করেছি। সকলে মনে করে ব্যাটিংয়ে পার্টনারশিপ দরকার হয়। কিন্তু বোলিংয়েও পার্টনারশিপ দরকার হয়। আমাদের তাই ছিল। আমি যখন উইকেটের জন্য ঝাঁপাতাম, ও নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথে বল করে রান আটকে রাখত। আমি যখন রান আটকে রাখতাম, ও উইকেট তোলার জন্য ঝাঁপাত। সেভাবেই আমাদের জুটি জমে উঠেছিল।’

কালারিয়ার চোখে এখনও ভাসে বুমরার রঞ্জি অভিষেক। ২০১৩ সালে নাগপুরে বিদর্ভকে এক ইনিংস ও ১ রানে হারিয়েছিল গুজরাত। কালারিয়া বলছিলেন, ‘বিদর্ভের বিরুদ্ধে ওর রঞ্জি অভিষেক হয়েছিল। আমার তার এক বছর আগে গুজরাতের অভিষেক হয়েছিল। নাগপুরে বুমরার অভিষেক ম্যাচে প্রথম ইনিংসে বিদর্ভকে ৮৫ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলাম। আমি ৫টি উইকেট নিয়েছিলাম। বুমরা নিয়েছিল ৪টি উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে বুমরা নিয়েছিল ৩ উইকেট। মনে আছে সেই ম্যাচে কী দুরন্ত গতিতে বল করেছিল। ওর বল খেলতে ব্যাটাররা ভয় পাচ্ছিল।’

সেদিনের বুমরার সঙ্গে এখনকার বুমরার কী তফাত দেখেন? আইপিএলে একটা সময় বুমরার সঙ্গেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে থাকা কালারিয়া বলছেন, ‘বছরের পর বছর খেলতে খেলতে ওর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এখন নিজের বোলিং, পরিস্থিতি অনেক ভাল বোঝে। অনেক পরিণত। জানে কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হয়। খুব সহজ সরল পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে। ওর বলে অনেক বৈচিত্র রয়েছে। অনেক বোলার বুঝতে পারে না কখন ইয়র্কার করতে হয়, কখন লেংথ বল করতে হয়। ও পারে। কাল যেমন নিউ ইয়র্কে ইয়র্কার দেওয়ার মতো পিচ ছিল না। ও তাই লেংথ বলে জোর দিয়েছে। যেভাবে মহম্মদ রিজওয়ানকে বোল্ড করল।’ যোগ করলেন, ‘ওর অ্যাকশন ব্যতিক্রমী। সে তো লাসিথ মালিঙ্গার অ্যাকশনও আলাদা ছিল। সেটা নিয়ে কথা হতো বুমরার সঙ্গে। তবে ও বলত, বোলিং অ্যাকশন পাল্টাব না। পাল্টাবেই বা কেন? যতক্ষণ নিয়ম না ভাঙছে, সমস্যা কোথায়?’

 

রাজ্য দলের সতীর্থদের সঙ্গে বুমরা

মাঠে বল হাতে ব্যাটারদের ত্রাস। মাঠের বাইরে বুমরা নিপাট ভদ্রলোক। কালারিয়া বলছিলেন, ‘বুমরা মাঠের বাইরে খুব ভদ্র ছেলে। সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। খোলা মনে সকলের সঙ্গে মেশে। ঠাট্টা-তামাশা করে। পাঞ্জাবি গান ভীষণ পছন্দ করে। মানুষ হিসাবেও খুব ভাল। সতীর্থদের সঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডা মারে।’ যোগ করলেন, ‘প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হয় ওকে। ঠাসা ক্রীড়াসূচি। তবে যদি বিরতি পায় আর আমদাবাদে থাকে, তাহলে মাঠে পৌঁছে যায়। রাজ্য দলের সতীর্থদের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করে। ও ফিট থাকতে ভীষণ মরিয়া। বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিটনেসে অসম্ভব গুরুত্ব দেয়। আমদাবাদে থাকলে বোলিং প্র্যাক্টিসের পাশাপাশি ফিটনেস ট্রেনিংও করে। আইপিএল ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেয় তরুণদের সঙ্গে। তরুণরা ভীষণ উপকৃত হয়। ও সব সময় পরামর্শ দেয়।’

নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে কোনও বিশেষ ডায়েট মেনে চলেন বুমরা? কালারিয়া হেসে বলছেন, ‘পাঞ্জাবি খাবার পছন্দ করে। বাড়ির তৈরি খাবার খায়। সাধারণ খাওয়াদাওয়া করে। আলাদারকম কিছু খায় না। সেটাই ওর শক্তির নেপথ্যে।

 

পিঠের চোটের জন্য গত মরশুমে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন রুশ। বললেন, ‘বুমরার সঙ্গে কথাও হয়েছিল। ও জানে পেসারদের চোট নিয়ে খেলাটা কতটা কঠিন। সকলেই আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করেছে।’ ফোন রাখার আগে বললেন, ‘টি-২০ বিশ্বকাপের আগে কথা হয়েছিল। বিশ্বকাপের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম বুমরাকে। ও কাপ নিয়ে ফিরুক। আর কী চাই!’ 

আরও পড়ুন: বুমরার গতির ধাক্কায় বেলাইন পাকিস্তান, বাবরদের সুপার এইটের স্বপ্নই ভেন্টিলেশনে

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।

 

 

আরও দেখুন