নৌযানে মিয়ানমার থেকে গুলি, খাদ্য ও নিত্যপণ্য সংকটে সেন্টমার্টিনবাসী

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে এখনও সংঘাত চলছে। এই সংঘাতে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের দিকে ছোড়া হচ্ছে গুলি। এ জন্য ছয় দিন ধরে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপের বসবাসকারী প্রায় দশ হাজার মানুষের খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকটে পড়েছে।

বুধ ও শনিবার মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলারকে লক্ষ্য করে দুই বার গুলি চালানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পিডবোট-ট্রলারে গুলির ঘটনায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আপদকালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদের মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংডিয়া এলাকা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমারের প্রান্ত থেকে বোটগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এ কারণে মানুষ প্রাণের ভয়ে চলতে করতে চায় না। তবে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। গত কয়েক দিনে দু-তিনটি বোটে গুলি চালানো হয়েছে। এ কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্টমার্টিনে দেখা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট। দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে যারা দিনে এনে দিনে খায়, বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারাই। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে যেমন মজুত করা খাদ্যপণ্য শেষ হতে চলেছে; তেমনি সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

দ্বীপের মুদির দোকানি মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকার কারণে টেকনাফ থেকে কোনও ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আনতে পারেনি। যার ফলে দোকানে থাকা সবকিছু শেষের পথে। শুধু চাল ছাড়া কোনও মালামাল নেই। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষদের না খেয়ে থাকতে হবে।’

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ছয় দিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপে কোনও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও মালামাল আনা যাচ্ছে না। এ জন্য অনেক মুদির দোকানে পণ্য নেই। পাশাপাশি দ্বীপে মানুষের মাঝেও খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরনের অভাব দেখা দিতে পারে দ্বীপে।’

সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, বোটে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে মানুষ ভয়ে যাচ্ছে না। তা ছাড়া ওই পথ ছাড়া সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা বা রুটও নেই। প্রতিদিন সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে ছয়-সাতটি বোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করার পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য বহন করতেন। কিন্তু নৌযান বন্ধ থাকায় মানুষজন খুব বিপদে আছে।’

শনিবার দুপুর ১টার দিকে নাফ নদের বদরমোকাম মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে একটি পণ্যবাহী ট্রলারে গুলি করা হয় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে। এর আগে বুধবার রাতে নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর গুলি ছোড়া হয়েছে। ওই এলাকাটি বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে বলে জানা গেছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরাই গুলি ছুড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।