Suvendu Adhikary: ‘‌নন্দীগ্রাম আন্দোলনই আসল, সিঙ্গুর নয়’‌, বিতর্কিত মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীর

পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল সিঙ্গুর–নন্দীগ্রাম। আর সেটা করে দেখালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনিই এদিন বলে বসলেন, সিঙ্গুর আন্দোলন ‘কোনও আন্দোলনই নয়’, নন্দীগ্রাম আন্দোলনই ‘আসল আন্দোলন’। সিঙ্গুর আন্দোলন ছিল ‘শিল্প তাড়ানো’র। এই মন্তব্য করতেই পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস এই মন্তব্যকে ‘নির্লজ্জতার চরম নমুনা’ বলে সরব হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় গ্রন্থাগারে ওবিসি মোর্চার অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতার এমন মন্তব্য রাজ্য–রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিল। বামেরা আগে যা বলত এখন শুভেন্দু তাই বলছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

ঠিক কী বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী? এদিন জাতীয় গ্রন্থাগারে ওবিসি মোর্চার সভায় তিনি কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সেখানেই নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, ‘‌সিঙ্গুর আন্দোলন কোনও আন্দোলনই নয়, ওটা তো শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন। নন্দীগ্রামের আন্দোলনই আসল আন্দোলন। নন্দীগ্রামের আন্দোলন কৃষক হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন। ২৩৫–৩০ যাঁরা এই কথা বলত, আমার নেতৃত্বে জনগণ যা করে দিয়েছিল তার পর আর কেউ ২৩৫–এর কথা বলত না। পতাকা সরিয়ে রেখে আন্দোলন করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।’‌

আর কী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু?‌ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কৃতিত্ব পরোক্ষে কাঁথির অধিকারী পরিবার এবং বিজেপি-কে দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‌ওখানে সিপিএমকে হারিয়েছি। আর জঙ্গলমহলে একদিকে রাষ্ট্রের পুলিশ আর সিপিএম ক্যাডারদের যৌথ বাহিনী আর একদিকে জনসাধারণের কমিটির নামে মাওবাদীরা ছিল, যারা আলাদা দেশ চায়। রেড করিডর চায়। তাদের বিরুদ্ধে লড়েছি। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবানির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি পরিবার। তাঁরাই সেখানে উদ্ধার করেছিলেন। আমি লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়েছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হারিয়েছি। সবাইকে এককাট্টা হতে হবে, আমাদের লড়াই হবে। আপনারা বাইরের লড়াই চালিয়ে যান। আমার নেতৃত্বে বিধানসভার ভেতরেও আমরা আওয়াজ তুলব।’‌

পাল্টা কী বলেছেন কুণাল ঘোষ, সুজন চক্রবর্তী?‌ শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএম। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‌এতদিন একরকম জানতাম। এখন তো দেখছি ও গন্ডার প্রজাতির। এখন পিঠে সুড়সুড়ি দিলে ১০ বছর বাদে হেসে ওঠে। সিঙ্গুর আন্দোলন যখন হয়, তখন তৃণমূল ক্ষমতায় ছিল না। পরে আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়, আন্দোলনটি বৈধ ছিল। কারণ সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছিল, জমি অধিগ্রহণটি ভুল হয়েছিল। ওটি ২০০৫–০৬–০৭ সালের আন্দোলন। তারপর শুভেন্দু তৃণমূলের সাংসদ হয়েছেন। ওঁর বাবা–সহ গোটা পরিবার তৃণমূলের মন্ত্রী–সাংসদ হয়েছেন। তা হলে ওঁরা এই পদগুলি নিলেন কেন? কেন ক্ষমতা ভোগ করলেন? নন্দীগ্রাম মানুষের আন্দোলন ছিল। মমতাদি নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যান্য অনেক দল ছিল। পরে তাঁর প্রতিনিধি করে শুভেন্দুকে পাঠানো হয়েছিল।’‌ আর সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‌যদি এটি শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন হয়ে থাকে বলে উনি মনে করে থাকেন, ওই শিল্প তাড়ানোর আন্দোলনে উনিও অংশীদার ছিলেন। উনি এখন যে দল করেন, সেই বিজেপিও ওই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। উনি কি বলছেন বিজেপি নেতারা অন্যায় করেছিলেন?’‌