ক্রেতা-দর্শনার্থীতে মুখর কারুশিল্প মেলা

প্রথমদিনই ক্রেতা ও দর্শনার্থীতে মুখর হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যার পর মুখর হয়ে ওঠে মেলা। সন্ধ্যায় লোকজ উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নানা আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শনার্থীরা।

মেলায় প্রথমদিনের বেচাকেনায় সন্তুষ্ট বিভিন্ন স্টলের বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। এর আগে দুপুরে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে মেলার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, আবহমান গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের আয়োজন করেছে। এবারের মেলায় কারুশিল্পী প্রদর্শনীসহ ১০০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লোক ও কারুশিল্প মেলা, লোকজ উৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, যাত্রাপালা, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালিগান, জারি-সারিগান, হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী, মুর্শিদীগান, গায়ে হলুদের গান, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তি-মারফতি গান, লোক কবিতা পাঠের আসর, পুঁথিপাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, কাঠের কারুশিল্পের প্রদর্শনী, লোকজ-জীবন প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নগরদোলা, লোকগল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। 

মেলায় প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় বিলুপ্ত সব গ্রামীণ খেলা, কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনী, মৃৎ-শিল্পের ওপর বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলার একদিকে স্টলে স্টলে নানা ধরনের দেশি জামাকাপড়, কাঠ ও বাঁশের, হস্তশিল্পের তৈরি নানা পণ্য তৈরি করে দোকান সাজানো হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের পণ্য দেখলে কিনতে মন চায় সবার। বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, চরকিসহ নানা আয়োজন রয়েছে। এছাড়া প্রাচীন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বায়োস্কোপ দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। বিকাল থেকে ধীরে ধীরে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণা বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যার পর তাদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। 

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে মেলায় ঘুরতে যাওয়া পিংকি আক্তার বলেন, ‘প্রথমদিন মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। স্বামীর সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছি। বিকালে সংগীত অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি।’

এদিকে, মেলায় নানা পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। তাদের মধ্যে সৌখিন হস্তশিল্প নামের দোকানের এক উদ্যোক্তা রিপা রায়। তিনি বলেন, ‘আমি জামদানি শাড়ি দিয়ে দোকান সাজিয়েছি। এখানে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া আরও দামি শাড়ি আছে। তবে অর্ডার করলে সেসব শাড়ি দেওয়া হয়। আজ মেলায় ভালো বেচাকেনা হয়েছে।’

মেলায় প্রথমদিনের বেচাকেনায় সন্তুষ্ট বিভিন্ন স্টলের বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা

একই স্টলের আরেক উদ্যোক্তা কামরুন নাহার সুমি নকশি শাড়ি দিয়ে দোকান সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বয়সীদের জন্য নকশি শাড়ি রয়েছে। ৩০০ থেকে তিন হাজার টাকার পণ্য আছে। আজ বিক্রি ভালো হয়েছে।’

তবে বিকাল থেকে মেলায় লোকজ উৎসবের সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীগোষ্ঠী অংশ নেন। একক ও দলীয় সংগীতসহ নৃত্যের আয়োজন করা হয়েছে। বাউল সংগীত শিল্পী শফি মন্ডল ও পল্লী বাউল সমাজ ‍উন্নয়ন সংস্থা দলীয় সংগীত পরিবেশন করেছেন।

মেলার সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ প্রচুর লোকসমাগম হয়েছে। ধীরে ধীরে ক্রেতা-দর্শনার্থী আরও বাড়বে। বিকাল ৫টার পর মেলায় প্রবেশ ফি নেই। এ কারণে বিকাল থেকে দর্শনার্থী বেড়েছে। মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বাউল সংগীত পরিবেশন করেছেন শিল্পী শফি মন্ডল।’ 

এখনও বেশ কিছু স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই- একটি স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ আছে। দ্রুত এসব স্টলের কাজ শেষ হবে।’ 

মেলায় লোকজ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

মেলায় ১০০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের গাইড লেকচারার একেএম মুজাম্মিল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা, সব প্রকার হস্তশিল্প এখানে রয়েছে। উদ্যোক্তাদের ১০টিসহ ১০০টি স্টল রয়েছে। এছাড়া মেলায় ৩২টি স্টলে ৬৪ জন কারুশিল্পী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে রাজশাহীর শাকের হাঁড়ি, সোনারগাঁয়ের জামদানি শাড়ি, মৌলবীবাজারের শিতল পাটি ছিল ‍উল্লেখযোগ্য।’ 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘লোকজ উৎসবের আয়োজন হিসেবে প্রতিদিন বিকাল থেকে একক পরিবেশনা ও দলীয় পরিবেশনা থাকবে। মাসব্যাপী এই অনুষ্ঠান চলবে। বাউল সংগীত শিল্পী শফি মন্ডল আজ গান পরিবেশন করেছেন। এছাড়া পল্লী বাউল সমাজ ‍উন্নয়ন সংস্থার দলীয় পরিবেশনায় গান হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজ নৃত্য হয়েছে।’ 

প্রসঙ্গত, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলবে। শুধু প্রবেশ ফি দিয়ে মেলায় ঘুরতে পারবেন দর্শনার্থীরা। তবে বিকাল ৫টার পর প্রবেশ ফি নেই। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে মেলা।