পুলিশ মেধাবৃত্তি পেলেন ২৭১ জন পুলিশ সদস্যের সন্তান

ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সন্তানদের মধ্যে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন, সেসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি-২০২১’ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ডিএমপি সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে এই বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে মেধাবৃত্তি তুলে দেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশ সদস্যের সন্তানেরা একাডেমিক পরীক্ষায় মেধার সাক্ষর রেখেছেন, এজন্য আমরা গর্বিত। পুলিশের সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকে তার মায়ের। কারণ পুলিশে যারা চাকরি করে, তারা সর্বক্ষণ জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য, দেশের জন্য ব্যস্ত থাকে। এজন্য সন্তানের পড়াশোনাসহ যত্ন নিতে হয় তার মাকে। তাই এ কৃতিত্ব মায়েদেরই। তারা ২৪ ঘণ্টাই সন্তান, সংসার ও স্বামীর জন্য সময় দেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ভালো রেজাল্ট করার পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে হবে। মানবিক গুণাবলী অর্জন করতে হবে। ভালো রেজাল্ট করলাম, ভালো চাকরি পেলাম, বিয়ে-শাদী করে আলাদা থাকলাম, তাহলে কাজ শেষ হলো না। বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা সন্তানের কাছে ভাত কাপড় চায় না, তারা নিজের সন্তানের একটু হাসি মুখে দুটো মিষ্টি কথা শুনতে চায়। নিজের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন। এ শিকড়কে কখনো ছিন্ন করা যাবে না। একাডেমিক ভালো রেজাল্ট করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষিত হয়ে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে জনগণের সেবা করতে হবে, দেশের সেবা করতে হবে বাবা মায়ের সেবা করতে হবে।

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তান ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হতে পারল না, এজন্য কোন প্রকার মানসিক চাপ প্রয়োগ না করে তার চেষ্টা ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মেধার উপর ছেড়ে দিতে হবে। কেননা এক সময় সেটা বিকশিত হবেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে সন্তান যেন মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়, বখাটেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ ২ লক্ষ ১২ হাজার পুলিশ সদস্যের একটি পরিবার। এখানে কেউ ভালো করলে সবাই প্রশংসিত হয় আবার খারাপ করলেও সবার গায়ে লাগে। এজন্য এ বাহিনীর কোন সদস্য যেন খারাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ে সবাইকে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সময় ও সুযোগ পেলে নিজ পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে সময় দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এএসআই খায়রুল কবিরের সন্তান এসএসসিতে সব বিষয়ে এ প্লাস পাওয়া নিশাত কবির শর্মি ও অভিভাবকদের পক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাইলোজিতে পড়ুয়া এইচএসসিতে সকল বিষয়ে এ প্লাস পাওয়া রিশাত সরকারের পিতা শাহ আলী থানার পুলিশ সদস্য রিয়াজ উদ্দিন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে বাংলাদেশ পুলিশ পরিবারের মেধাবী ও কৃতি সন্তানদের লেখা-পড়ায় আরও উদ্বুদ্ধ করতে এই মেধাবৃত্তি প্রদান করে আসছে। এ বছর ডিএমপিতে কর্মরত ২৭১ জন গর্বিত পুলিশ সদস্যের সন্তান বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি-২০২১ পেয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর আইজিপি ১৩৩ জনকে মেধাবৃত্তি প্রদান করেন। বাকি ১৩৮ জনকে (এসএসসি-৭৯ ও এইচএসসি-৫৯) ডিএমপি কমিশনার মেধাবৃত্তি দেন।

এ সময় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কশিনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. আসাদুজ্জামানসহ ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।